লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। কিন্ত এখনো বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। গত চার দিন ধরেই তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখা দিয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্য মতে, সম্প্রতি বন্যায় জেলার ৫ উপজেলায় ২৪ হাজার ৩ শত ৩৪ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আর ফ্রাড রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের দাবি, তারা এ পর্যন্ত প্রায় ১৭হাজার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা তৈরি করতে পেয়েছেন। এ সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। তবে বাস্তবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ধরলা নদীর পানি শিমূলবাড়ি পয়েন্টে গত শনিবার সকাল ৬টায় ছিল বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপরে এবং সন্ধ্যা ৬টায় ছিল ২৯ সেন্টিমিটার উপরে।
রবিবার সকাল ৬ টায় ছিল ৩৩ সেন্টিমিটার উপরে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ছিল ৩৭ সেন্টিমিটার উপরে। সোমবার সকাল ৬ টায় ছিল বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপরে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ছিল ৪০ সেস্টিমিটার উপরে। মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় ছিল বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অপরদিকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে গত শনিবার সকাল ৬ টায় ছিল বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপরে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ছিল ২৭ সেন্টিমিটার উপরে। রবিবার সকাল ৬ টায় ছিল ২০ সেন্টিমিটার উপরে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ছিল ১৩ সেন্টিমিটার উপরে।
সোমবার সকাল ৬ টায় ছিল বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নীচে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় ছিল বিপদসীমা বরাবর। মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় ছিল বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নীচে এবং সন্ধ্যা ৬ টায় বিপদসীমা বরাবর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, তিস্তার পানি গত কয়েকদিন ধরেই ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হচ্ছে। সকালে বিপদসীমার উপরে থাকলে বিকেলে বিপদসীমা বরাবর থাকছে, আবার রাতে তা বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মূলত উজানে ভারতের তিস্তা অববাহিকায় বৃষ্টিপাতের উপর পানি প্রবাহের এই পরিবর্তন। তবে বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে পানি সহসাই নামছে না।
পানির এই উঠা নামার পার্থক্য সামান্য হওয়ায় দুর্ভোগ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যার্ত পরিবারগুলোর। গত ৩/৪ দিন আগের তুলনায় বর্তমানে পানির পরিমাণ কম হলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে দুর্গত এলাকার লোকজন। কোথাও কোথাও বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং শুকনো খাবারের সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে।
টিউবওয়েল ও পায়খানাগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় মল-মূত্র ত্যাগে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন। বিশেষ করে চরাঞ্চলের বন্যার্ত মানুষ কাজে যেতে না পারায় আয় রোজগার করতে পারছেন না। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে অনেকের। এ ছাড়া স্যানিটেশন ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখা দিয়েছে।
এদিকে তিস্তা ও ধরলার চরাঞ্চল ও তীরবর্তী ২০টি ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি এখোনো পানির নীচে রয়েছে। কোথাও কোথাও পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে ধ্বসে পড়েছে কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা সড়কের অংশ বিশেষ।
ফলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এসব এলাকার যোগাযোগ। বাঁধের পাশে, রাস্তার ধারে কিংবা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকার অনেকে। এছাড়া বন্ধ রয়েছে জেলার অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো হলো, সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট, রাজপুর, খুনিয়াগাছ, আদিতমারী উপজলার মহিষখোচা, হাতীবান্ধী উপজেলার সিঙ্গিমারী, গড্ডিমারী, সির্ন্দুনা, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ও সানিয়াজান ইউনিয়ন। এখানকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
এছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের লোকজন বন্যা দুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ ও টিউবওয়েল উচু করার কাজের কথা বললেও সরেজ মিনে তাঁদের কর্মকান্ড তেমন চোখে পড়েনি।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, এ পর্যন্ত জেলায় ৬শত ৫০ মে. টন জি আর চাল ও সাড়ে ৯লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবেন।