উজান থেকে প্রচন্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিয়ে ধেয়ে আসছে। আরো কি পরিমান পানি আসবে এমন তথ্য নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী মানুষজন আতংকিত হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।
শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
তিস্তা নদীর ভয়স্কর রুপ আর গর্জনে পানিবন্দী লোকজনের চোখে ঘুম নেই। ৪ দিন ধরে পানিবন্দী পরিবারগুলো রান্না করতে পাড়ছে না।
তিস্তা নদীর এমন ভয়ংকর রূপ ধারণ করায় চরাঞ্চলে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃহস্পতিবার রাতে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরে জমিনে ঘুরে দেখেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর। এ সময় তিনি পানিবন্দী লোকজনের সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন।
এ ছাড়া জেলার আদিতমারী মহিষখোচা, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তালেব মোড় ও ধুবনী এলাকা গুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় মানুষ আরো বেশি আতংকিত হয়ে পড়েছে।
গত ৪ দিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ট এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এ সব ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে।
এলাকাবাসী জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ৫ দিনের ভারি বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। জেলার ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠেছে নৌকা বা ভেলা।
ধেয়ে আসা পানির স্রোতে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা। পানিবন্দী পরিবারগুলো রান্না করতে না পারায় তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ দুপুরে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, আমি বন্যা এলাকা ঘুরে দেখছি। যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেই ভাবেই সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ভেঙে যাওয়া রাস্তা মেরামতের জন্য ৫ হাজার বালুর বস্তা ও জেলায় ৬৮ টন চাল ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।