পবিত্র শবে বরাতে আমরা অনেকেই ইবাদতের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রান্না করে থাকি। আর এই রান্নার বড় একটা অংশ নানা স্বাদের হালুয়া। জেনে নিন বেশ কিছু হালুয়া তৈরির পদ্ধতি। শবে বরাতে সুজি বা বুটের হালুয়া তো বাড়িতে হবেই। এর সঙ্গে ভিন্নতা আনতে অন্য রকম হালুয়াও বানাতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিছু ভিন্ন স্বাদের হালুয়ার রেসিপি।
১. ডিমের দরবারি হালুয়া
উপকরণ :
মুরগির ডিম ৬টি,
গুঁড়া দুধ ২ কাপ,
চিনি ২ কাপ,
কাজুবাটা পৌনে এক কাপ,
মালাই আধা কাপ,
কেওড়া ১ টেবিল চামচ, এ
লাচগুঁড়া আধা চা-চামচ,
ঘি আধা কাপ।
প্রণালি: ঘি বাদে বাকি সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। প্যানে ঘি গরম করে ডিমের মিশ্রণ দিয়ে নাড়তে হবে। হালুয়া প্যানের গা ছেড়ে এলে ডিশে ঢেলে ঠাণ্ডা করে পছন্দ মতো আকারে টুকরা করে পরিবেশন করতে হবে।
২. পেঁপের হালুয়া
উপকরণ :
কাঁচা পেঁপে ১ কেজি,
চিনি ৩ কাপ,
ঘি আধা কাপ,
কেওড়া ১ টেবিল-চামচ,
দারচিনি গুঁড়ো আধা চা-চামচ,
এলাচ গুঁড়ো ১ চা-চামচ,
পেস্তাবাদাম-কিশমিশ সিকি কাপ,
সবুজ ফুড কালার সামান্য।
প্রণালি : পেঁপে সবজি কোরানি দিয়ে ঝুরি করে অল্প পানি দিয়ে আধাসেদ্ধ করে পানি শুকিয়ে নিতে হবে। প্যানে ঘি গরম করে পেঁপে দিয়ে কিছুক্ষণ ভুনে চিনি, ফুড কালার, কেওড়া, দারচিনি-এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ভুনতে হবে। হালুয়া ঘির ওপর উঠলে কিছু কিশমিশ ও পেস্তাবাদামকুচি দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে ডিশে ঢালতে হবে ও ওপরে বাকি পেস্তাবাদামকুচি ছিটিয়ে দিতে হবে। ঠাণ্ডা হলে পছন্দ মতো আকারে টুকরা করে পরিবেশন করতে হবে।
৩. চালকুমড়ার হালুয়া
উপকরণ :
খোসা ছাড়ানো ও বিচি বাদ দেওয়া পাকা চালকুমড়ার ছোট ছোট টুকরা ৪ কাপ,
চিনি আড়াই কাপ,
ঘি আধা কাপ,
দারচিনি ৪ টুকরা,
এলাচ ৪টি,
পেস্তাবাদামকুচি ২ টেবিল-চামচ,
গোলাপজল ১ টেবিল-চামচ।
প্রণালি : চালকুমড়া সেদ্ধ করে বেটে নিতে হবে। ঘি গরম করে বাটা চালকুমড়া চিনি ও দারচিনি ও এলাচ দিয়ে নাড়তে হবে। হালুয়া কড়াইয়ের গা ছেড়ে এলে গোলাপজল দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে নামাতে হবে। সার্ভিং ডিশে ঢেলে পেস্তাবাদামকুচি ছিটিয়ে বরফি কেটে পরিবেশন করতে হবে।
৪. বাদামের হালুয়া
উপকরণ: কাজু বাদাম ২ কাপ,
ছানা ২ কাপ,
চিনি ২ কাপ,
এলাচ গুঁড়া সিকি চা চামচ,
ঘি আধা কাপ,
ময়দা ১ টেবিল চামচ,
কিসমিস ১ টেবিল চামচ,
কাজু ও পেস্তা বাদাম সাজানোর জন্য।
প্রণালি : কাজু বাদাম হালকা ভেজে তিন-চার ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পানি থেকে তুলে কাজু বাদাম ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এবার চুলায় পাত্রে ঘি দিয়ে কাজু বাদাম ও ছানা দিয়ে ভাজতে থাকুন এবং চিনি দিন। দ্রুত নাড়তে থাকুন। ময়দা, এলাচ গুঁড়া দিন। হালুয়া হয়ে এলে প্লেটে সাজিয়ে ওপরে কিসমিস, কাজু ও পেস্তা বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
৫. চকলেট হালুয়া
উপকরণ :
ডার্ক চকলেট গলানো দুই টেবিল চামচ,
কোকো পাউডার দুই টেবিল চামচ,
সুজি আধা কাপ,
চিনি আধা কাপ,
দারুচিনি গুঁড়ো সামান্য,
চকলেট সিরাপ দুই টেবিল চামচ,
ডিম একটি,
কাজুবাদাম কুচি সাত/আটটি,
ঘি পরিমাণ মতো ও লবণ সামান্য।
প্রণালি : প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে গলানো ডার্ক চকলেট, কোকো পাউডার, চকলেট সিরাপ, চিনি, ডিম ও এক কাপ পানি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। এবার একটি প্যানে সামান্য ঘি দিয়ে সুজি হালকা ভেজে নিন। এখন এই সুজির মধ্যে চকলেটের মিশ্রণ দিয়ে নাড়তে থাকুন। পানি শুকিয়ে গেলে এর মধ্যে দারুচিনি গুঁড়ো ও বাদাম কুচি দিয়ে নেড়ে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন। ব্যস, খুব সহজেই তৈরি হয়ে গেল দারুণ সুস্বাদু চকলেটের হালুয়া।
৬. কাজুবাদামের হালুয়া
উপকরণ :
কাজুবাদাম এক কাপ,
মাওয়া এক কাপ,
ময়দা এক টেবিল চামচ,
চিনি এক কাপ,
এলাচ গুঁড়ো সামান্য,
ঘি আধা কাপ এবং কিশমিশ এক টেবিল চামচ।
প্রণালি : প্রথমে কাজুবাদাম হালকা ভেজে চার-পাঁচ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার ভেজানো কাজুবাদাম ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। একটি প্যানে ঘি দিয়ে তাতে ব্লেন্ড করা কাজুবাদাম ও মাওয়া দিয়ে ভাজতে থাকুন। এখন এতে চিনি, ময়দা ও এলাচ গুঁড়ো দিয়ে নাড়তে থাকুন। হালুয়া ঘন হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন দারুণ সুস্বাদু কাজুবাদামের হালুয়া।
৭. ছোলার ডালের হালুয়া
উপকরণ :
ছোলার ডাল ৫০০ গ্রাম,
দুধ ১ লিটার,
চিনি ৭৫০ গ্রাম,
ঘি চারভাগের এক কাপ,
এলাচ গুঁড়া সামান্য,
দারচিনি গোলাপজল ১ টেবিল চামচ।
কিসমিস ৩ টেবিল চামচ,
পেস্তা বাদাম কুচি ৩ টেবিল চামচ।
প্রণালী : ছোলার ডাল, দুধ দিয়ে সেদ্ধ করে শুকিয়ে গেলে গরম অবস্থায় বেটে নিতে হবে। কড়াইতে ঘি দিয়ে ডাল বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে চিনি দিয়ে আরো নাড়তে হবে। এলাচ, দারচিনি গুঁড়া দিতে হবে। হালুয়া তাল বেঁধে উঠলে কিসমিস, গোলাপজল দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে-চেড়ে চুলা থেকে নামিয়ে বড় খাঞ্জায় ঘি লাগিয়ে পেস্তা বাদাম কুচি ছিটিয়ে গরম হালুয়া ঢেলে সমান করতে হবে। ঠাণ্ডা হলে ছাঁচে বসিয়ে বিভিন্ন নকশা করে পরিবেশন করুন।
৮. গাজরের হালুয়া
উপকরণ :
গাজর কুচি ৮-১ও টি মাঝারি আকৃতির
ঘি ১ টেবিল চামচ
চিনি ১/২ কাপ
দুধ ২ কাপ
খেজুর কুচি ৩/৬ কাপ
এলাচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ
কাজুবাদাম কুচি ৮-১০ টি
কাঠবাদাম কুচি ৮-১০ টি
খোয়া ১/২ কাপ
প্রণালি : প্রথমে একটি প্যানে ঘি দিয়ে এতে গাজর কুচি দিয়ে দিন।
ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫ মিনিট গাজর রান্না করুন।
এবার গাজর কুচির সাথে চিনি মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট রান্না করুন।
তারপর এতে দুধ মিশিয়ে ৬ থেকে ৮ মিনিট রান্না করুন।
এরপর এতে খেজুর কুচি, এলাচ গুঁড়ো, কাঠ বাদাম কুচি, কাজু বাদাম কুচি, মাওয়া দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
এবার এটি ১০-১৫ মিনিট বা পানি না শুকানো পর্যন্ত রান্না করুন।
বাদাম কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার গাজরের হালুয়া।
৯. বুটের শাহি হালুয়া
উপকরণ :
বুটের ডাল ২ কাপ (হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১ ঘণ্টা
দারুচিনি ১ টুকরা
তেজপাতা ১ টি
এলাচি গুঁড়ো হাফ চা চামচ
গুঁড়ো দুধ ২/৩ টেবিল চামচ
ঘি আধা কাপ
চিনি আধা কাপ (মিষ্টি প্রয়োজনে কম বেশি করে নিন নিজের মত)
হলুদ ফুড কালার সামান্য (ইচ্ছা)
বাদামের ক্রিম বাটার ২/৩ টেবিল চামচ (পিনাট বাটার)
প্রণালি : প্রথমে ডাল ধুয়ে, ডালের সমান লিকুইড দুধ ও তেজপাতা দিয়ে সিদ্ধ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেনো শুকিয়ে পুডে না যায়। ডাল সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে।
ডালের সাথে বাদামের বাটার, ফুড কালার ও এলাচি গুঁড়ো দিয়ে ব্লেণ্ড করে নিতে হবে।
এখন প্যানে ঘি গরম করে দারুচিনি ফোঁড়ন দিয়ে ডাল, চিনি এক সাথে দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে যেন লেগে পুডে না যায়। ৫ মিনিট এভাবে নেড়ে গুঁড়ো দুধ দিয়ে ঘন ঘন নাড়তে হবে। চুলার আঁচ মিডিয়াম রাখতে হবে। ২/৩ মিনিট পর হালুয়া আঠালো হয়ে প্যানের গা ছেডে আসলে নামিয়ে নিবেন।
ঘি মাখানো ডীশে গরম গরম ঢেলে সমান করে নিবেন, ঠাণ্ডা হলে ফ্রিজে ২০/২৫ মিনিট রেখে বের করে চার কোনা বা তিন কোণা করে কেটে নিন। তারপর পরিবেশন করুন মজাদার বুটের হালুয়া।
নানা রকম ছাঁচে বসিয়ে ডিজাইন করতে পারেন। বা প্লেইন ডিশে বসিয়ে সেট করে কেটে নিতে পারেন।
১০.সুজির হালুয়া
উপকরণ :
সুজি এক কাপ
ঘি+তেল এক টেবিল চামচ (৩ চা চামচ=১ টেবিল চামচ)
চিনি পরমানমত
পানি দুই কাপ (চিনির সিরা তৈরি করার জন্য)
এলাচ ও দারুচিনি দুইটা করে
কিশমিশ ও বাদাম।
প্রণালী : একটা পাত্রে পানি দিয়ে তাতে চিনি দিয়ে চুলায় বসাতে হবে। সঙ্গে এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে দিন। এরপর চিনি গলে গেলে চুলার আচ কমিয়ে দিন। একটা কড়াইয়ে ঘি এবং তেল একটু গরম করে নিন।কিছুক্ষণ পর তা গরম হয়ে গেলে সুজি ঢেলে দিয়ে সুজি ভাজুন। নাড়তে থাকুন। সুজির রঙ লালচে হয়ে গেলে চিনির সিরা ঢালুন এবং ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। নাড়তে নাড়তে সুজির পানি শুকিয়ে গিয়ে কড়াই এর গা ছেড়ে এলে তখন একটা প্লেইন প্লেটে রান্না করা সুজি ঢেলে দিন। যে প্লেটে সুজি ঢালবেন তাতে আগে থেকেই ঘি মাখিয়ে রাখবেন যাতে বরফি প্লেটের তলায় আটকে না যায়। এরপর ঠাণ্ডা হবার আগেই ইচ্ছেমত আকৃতি দিতে পারবেন এবং ঠাণ্ডা হবার পরেই খেতে পারবেন।
১১. নেসেস্তার হালুয়া
উপকরণ :
সুজি – ১ কাপ
চিনি – পরিমান মতো
ফুড কালার – সামান্য
এলাচ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
ঘি – ১/২ কাপ
গোলাপ জল – ৪ টেবিল চামচ
প্রণালি : ৪ কাপ পানি দিয়ে সুজি সারা রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে।
সকালে উপরের পানি ফেলে দিতে হবে।
আবার ৩ কাপ পানি দিয়ে ভালো করে সুজি মাখাতে হবে।
এবার পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পানি ছেঁকে নিতে হবে। (নেশেস্তার হালুয়া এই ছাঁকা পানি দিয়েই তৈরি করা হয়)।
চিপে পানি নেওয়ার পর আবারও ২ কাপ পানি দিয়ে বাকি সুজির মাড় ধুয়ে নিতে হবে।
সুজি রাবারের মতো হয়ে গেলে ফেলে দিতে হবে।
এবার পানির সাথে চিনি, ফুড কালার, ঘি, এলাচ, গোলাপ জল দিয়ে চুলায় বসাতে হবে।
চুলায় দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে।
আপনি ইচ্ছা করলে যেকোনো ফুড কালার ব্যাবহার করতে পারেন।
হালুয়ার উপরে যখন ঘি উঠে আসবে তখন নামিয়ে নিন।
গরম থাকতে সাভিং ডিশে ঢেলে ফেলুন।
ঠাণ্ডা হলে আপনার পছন্দ মতো শেপে কাটুন।
ঠাণ্ডা করে উপরে বাদাম কুঁচি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন। এমন আরো মজার মজার রেসিপি পেতে দি ঢাকা টাইমসের সাথেই থাকুন।
১২. চকলেট হালুয়া
উপকরণ :
ডার্ক চকলেট গলানো দুই টেবিল চামচ,
কোকো পাউডার দুই টেবিল চামচ,
সুজি আধা কাপ,
চিনি আধা কাপ,
দারুচিনি গুঁড়ো সামান্য,
চকলেট সিরাপ দুই টেবিল চামচ,
ডিম একটি,
কাজুবাদাম কুচি সাত/আটটি,
ঘি পরিমাণ মতো ও লবণ সামান্য।
প্রণালি : প্রথমে একটি ব্লেন্ডারে গলানো ডার্ক চকলেট, কোকো পাউডার, চকলেট সিরাপ, চিনি, ডিম ও এক কাপ পানি দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। এবার একটি প্যানে সামান্য ঘি দিয়ে সুজি হালকা ভেজে নিন। এখন এই সুজির মধ্যে চকলেটের মিশ্রণ দিয়ে নাড়তে থাকুন। পানি শুকিয়ে গেলে এর মধ্যে দারুচিনি গুঁড়ো ও বাদাম কুচি দিয়ে নেড়ে চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন। ব্যস, খুব সহজেই তৈরি হয়ে গেল দারুণ সুস্বাদু চকলেটের হালুয়া।