Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শেষ ভ্রমণ

সোমাইয়া ইসলাম মিম
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১৯ PM
আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৬:১৯ PM

bdmorning Image Preview


তখন ছিল জৈষ্ঠ্য মাস। পাঁকা আম আর কাঁঠালের গন্ধে ভরে ওঠে ছিল গ্রামটি। আর সেই আম কাঁঠালের গন্ধে মনটা ছুটে যাচ্ছিল নিজের গ্রামের দিকে। তখন আমি কোনো একটা কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম।  

কাজটা শেষ হতে সময় লাগবে অনেক দিন। মায়ের ফোন আসলো বললো বাবা তুই কবে আসবি? তোর জন্য তোর প্রিয় আমগুলো রেখে দিয়েছি। তাড়াতাড়ি ফিরে আই।  আমি বললাম আর বেশী দিন লাগবে না মা, আমি চলে আসবো। তুমি ওষুধ খাও ঠিক মতো। এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম। আমার সাথে রতন নামে একটি ছেলে ছিল, ও বললো ভাই কাজটা শেষ হতে সময় লাগবে চলেন আমাদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি। আমি বললাম চলো। ওর বাড়ি ছিল সিলেট জেলায়। ঢাকা থেকে সিলেট যাবার জন্য ট্রেনের টিকিট কাটলাম দুটো। এই প্রথম রতনের বাড়ি যাবো কিছু না নিলে কি হয়। তাই আধা কেজি মিষ্টি কিনলাম আর ট্রেনে চেপে বসে পরলাম। শুরু হল সিলেট যাত্রা। আমি বসেছিলাম জালানার পাশে। জালানা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম আকাশের দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম আকাশটা কেমন যেনো গম্ভীর হয়ে আছে।  আমাকে বলতেছে সোনাই তোর মায়ের কাছে ফিরে যা। আমার ভেতরটা চমকে উঠল। আমি জিনিসটাকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে জেগে উঠলাম। দেখলাম কোনো একটা স্টেশনে এসে ট্রেনটা থেমেছে। তখন ট্রেন থেকে নামলাম মাকে ফোন করার জন্য ৫ বার ফোন দিলাম কিন্তু ফোনটা রিসিভ করলো না। শেষবার দেবো ভাবলাম তখনি দেখি মা ফোন দিয়েছে। আমি তাড়াহুড়া করে ফোনটা রিসিভ করলাম। মা বললো সোনাই তুই বাড়ি ফিরে আই আমি খুব অসুস্থ। মনে হয় আমি আর বাঁচবো না। তখন আমার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে মাটিতে পড়লো।

বললা‌ম হ্যাঁ মা আমি আসছি খুব তাড়াতাড়ি। এ বলে রেখে দিলাম। রাস্তার পাশে বসে রতনকে বললা‌ম আমি বাড়িতে যাবো মা খুব অসুস্থ। এত রাতে এখনতো আর ট্রেন যাবে না। আর কোনো গাড়ি নাই। আমি চিন্তাই পড়ে গেলাম জানি না মা কেমন আছে।  তখন চিন্তায় ঘামতে শুরু করলাম। পরের দিন সকালে রতন বললো ভাই কিছু খেয়ে নিন কিন্তু আমার খাওয়া সম্ভব ছিল না তখন চিৎকার করে কান্না আসছিল আমার।  ভাবছিলাম কেনো আমি বাড়িতে গেলাম না। কেন মায়ের সাথে দেখা করতে গেলাম না। ট্রেন তখন ছেড়ে দিয়েছিল আমি তাড়াহুড়া করে ট্রেনে ওঠলাম। রতন ছিল পাশে। ভেবেছিলাম আনন্দের সাথে ভ্রমণ করবো অনেক কিছু দেখবো। কিন্তু তা হলো না।  মনে পড়লো গম্ভীর ভাব আকাশটা কথা। তখন রতন বললো ভাই মির্জাপুর অনেক দূরে যেতে সময় লাগবে একটু ঘুমিয়ে নিন। আমি কিছু বললাম না চুপ করে বসে রইলাম।  

বাড়ি আসতে সময় লেগে গেলো তিন দিন। মাকে রোজ ফোন করা হতো কিন্তু শেষ দিন আর ফোন করা হলো না। ট্রেন অবশেষে এসে থামলো মির্জাপুর। আমি ট্রেন থেকে নেমে পাগলের মতো দৌড়ে ইসলাম বাড়িতে। এসে দেখি অনেক লোকের ভীড় আমার বাড়িতে। জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে। কেউ একজন বলে ওঠলো সোনাই তোর মা আর নেই। আমি দৌড়ে ঘরে গেলাম গিয়ে দেখি মা যেনো ঘুমিয়ে আছে।  মায়ের পাশে দেখি সেই আমগুলো রয়েছে। যা পঁচে গিয়েছিল। তখন চোখের পানি যেনো আমাকে বলছিলো সেদিন যদি তুই ভ্রমণে না গিয়ে তোর মায়ের কাছে আসতি আজ এমন দিন দেখতে হতো না। মা যেনো আমাকে বলতেছে আই খোকা আই তোর প্রিয় আমগুলো রেখে দিয়েছি।

সব ভেবে, নিজেকে অপরাধী মনে করে মাকে কবরে রেখে এলাম। আমি যেনো ছন্নছাড়া হয়ে গেছি। তার পর থেকে আর কোথাও ভ্রমণ করতে যাইনি। সেই ভ্রমণ টাই ছিল শেষ ভ্রমণ। ভ্রমণ টা যেনো ছিল একটা অভিশপ্ত কালো ছায়া।  
মির্জাপুর, টাংগাইল।

Bootstrap Image Preview