Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইউক্রেনে সামরিক আইন জারি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২২ PM
আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:২২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রাশিয়া ইউক্রেন নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ ও ২৩ ক্রুকে আটকের পর ৩০ দিনের জন্য ‘মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন জারি করতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো। মঙ্গলবার ইউক্রেনের পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্টের আদেশের অনুমোদন দিয়েছে। খবর বিবিসির।

প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো বলেছেন, রাশিয়ার হামলা থেকে রক্ষা পেতে সীমান্ত এলাকায় এই মার্শাল ল কার্যকর হবে।

কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদ এবং ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারে এবং নাগরিকদের সামরিক দায়িত্ব জন্য আহ্বান করা হতে পারে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন এই সিদ্ধান্তে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়া ‘বিনা উস্কানিতে পাগলের মত আচরণ করেছে’ বর্ণনা করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পোরোশেঙ্কো সামরিক আইন জারি সংক্রান্ত এ ডিক্রি সই করার কথা জানান।
তবে এর অর্থ যুদ্ধ ঘোষণা নয় বলেও জোর দিয়ে বলেছেন তিনি। নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর পরিকল্পনা ইউক্রেনের নেই বলে জানান পোরোশেঙ্কো।

গত রবিবার আন্তর্জাতিক জলসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে রাশিয়া ইউক্রেনের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ আটক করে। ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপে নোঙ্গর করেছিল ইউক্রেনের ওই তিনটি জাহাজ। জাহাজ আটকের সময় রাশিয়ানদের গুলিতে জাহাজের ছয়জন ক্রু আহত হয়।

সবশেষ ঘটনাটি ঘটেছে ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার মাঝামাঝি কের্চ স্ট্রেইট এলাকায়। রবিবার সকালে ইউক্রেনের দুটি গানবোট এবং একটি টাগবোট কের্চ স্ট্রেইট অতিক্রমের চেষ্টা করে। কৃষ্ণ সাগরের ওডিসি বন্দর থেকে রওনা হয়ে আজোভ সাগরের মারিউপোলের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল জাহাজগুলো। ইউক্রেনের জাহাজগুলোকে আটকাতে রাশিয়া প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কৃষ্ণ সাগর থেকে আজোভ সাগরে জাহাজ চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছিল।

মস্কো ও কিয়েভের ২০০৩ সালের চুক্তির আওতায় কের্চ স্ট্রেইট ও আজোভ সাগরে দু'দেশেরই অংশীদারিত্ব আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নৌপথে আগ্রাসনের অভিযোগ তুলে দেশটি থেকে আসা ও যাওয়ার পথে সব নৌযান তল্লাশি শুরু করে। একই সঙ্গে আজোভ সাগরে যাওয়ার পথে রাশিয়ার তৈরি একটি ব্রিজের নিচে ট্যাংকারও মোতায়েন করে রাশিয়া। সঙ্গে আছে দুটি জেট ফাইটার ও দুটি হেলিকপ্টার।

ইউক্রেনের নৌবাহিনী বলছে, তাদের জাহাজকে আঘাত করে অকার্যকর করা হয়েছে বলেই তারা ওই এলাকা ত্যাগ করতে পারেনি। এসব জাহাজে ২৩ জন নাবিক ছিল যাদের মধ্যে ছয় জন আহত হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রথম এমন দ্বন্দ্বে জড়ালো রাশিয়া ও ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে লড়াই করছে দেশটির সেনাবাহিনী।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর থেকেই দুই প্রতিবেশী দেশ মুখোমুখি অবস্থানে আছে।

কৃষ্ণ সাগর থেকে আজোভা সাগরে জাহাজ চলাচল নিয়েও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। যদিও নৌযানের অবাধ চলাচলের জন্য ২০০৩ সালে সম্পাদিত দুই দেশের একটি দ্বিপাক্ষিত চুক্তি আছে।

সম্প্রতি রাশিয়া নিরাপত্তার অজুহাতে ইউক্রেন থেকে রওয়ানা হওয়া বা ইউক্রেনগামী সব জাহাজে নজরদারি শুরু করেছে।

ইউক্রেন সরকারের অভিযোগ, রাশিয়া আজোভ সগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চাইছে। আজোভ সাগরে বেরদিয়ানস্ক ও মারিউপোল নামে ইউক্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি সমুদ্রবন্দর আছে।

গত সেপ্টেম্বরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, তার দেশের মোট রপ্তানি রাজস্বের একচতুর্থাংশ আসে মারিউপোল বন্দর থেকে।

জাহাজ জব্দ করার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কিয়েভে রুশ দূতাবাসের সামনে অন্তত দেড়শ বিক্ষোভকারী জড় হয়। তারা দূতাবাসের দিকে জ্বলন্ত বস্তু ছুড়ে মারে, তাতে দূতাবাস প্রাঙ্গনে থাকা অন্তত একটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়।

ইউক্রেন তাদের আটক নৌজাহাজগুলো ফেরত চেয়েছে এবং নাবিকদের মুক্তি দাবি করেছে। একইসঙ্গে রাশিয়াকে শাস্তি দিতে দেশটির ওপর নতুন করে আরো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এবং এরই মধ্যে বহাল থাকা নিষেধাজ্ঞাগুলো আরো কঠোর করার জন্য ইউক্রেন এর পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর সোমবার নেটো জরুরি বৈঠক ডেকেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, ডেনমার্ক ও কানাডা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে।

ইউক্রেইনে সামরিক আইন জারি হলে সরকার যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ দমনের ক্ষমতা পাবে। গণমাধ্যমকে নজরদারি, নির্বাচন স্থগিত করা এবং নাগরিকদের সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করতে বাধ্য করতে পারবে।

যদি পার্লামেন্ট মার্শাল ল জারির অনুমতি দেয় তবে ২০১৪ সালে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের পর আবার সামরিক আইন জারির ঘটনা ঘটবে।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে এর ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অধিগ্রহণ করে রাশিয়া। যার জেরে দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর লড়াই শুরু হয়। ওই যুদ্ধ ১০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত  ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ইউক্রেন স্বাধীনতা লাভ করে। পশ্চিমা সমর্থন পুষ্ট ইউক্রেনে হুমকি বলে মনে করেন রাশিয়া।

Bootstrap Image Preview