Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সুরমার অব্যাহত ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪১ PM
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০৫:৪১ PM

bdmorning Image Preview


গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধিঃ

গোলাপগঞ্জে সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী বাঘা ইউনিয়ন। বছরের পর বছর ধরে চলা অব্যাহত ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি, বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হলেও ভাঙন রোধে নেই কোন উদ্যেগ।

এ দিকে এখনো নদী ভাঙনের হুমকীতে আছে শতাধিক বসতঘর, মসজিদ, গোরস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এ ইউনিয়নের সবচেয়ে ক্ষতিসাধন হচ্ছে কৃষিখাতের। কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের আবাদি জমি ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে।

বাঘা ইউনিয়নের সুরমা নদীর ভাঙনকবলিত ও হুমকীপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে রুস্তমপুর, লালনগর, মজিদপুর, খালপার, জালালনগর, গোলাপনগর, তুড়ুগাঁও এবং কান্দিগাঁও এলাকা। এরমধ্যে মধ্যে অন্যতম ভাঙন কবলিত এলাকা হচ্ছে রুস্তমপুর গ্রাম।

এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত দুই যুগে শুধু এই গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। এখনো হুমকীতে আছে শতাধিক ঘরবাড়ি, বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে শতবর্ষী রুস্তমপুর বড় মসজিদ, রুস্তমপুর হাফিজিয়া মাদরাসা, হাতিমনগর শাহাজালালিয়া রুস্তমপুর মাদরাসার পুরনো অংশ, দিঘীরপার মাজারখানা, হাতিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা।

সুরমার করালগ্রাসে বসতঘর হারানো বাঘা ইউপির রুস্তমপুর গ্রামের সাবেক বাসিন্দা গোলাপগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক রতন মনি জানান, আমাদের বসতঘর সুরমার বুকে চলে যাওয়ায় পিতৃভিটে ছেড়ে ওপারে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। জন্মস্থান ছেড়ে আসার কষ্ট এখনো পীড়া দেয়। স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও কোন সরকারের আমলে সুরমার ভাঙন রোধে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়া সত্যিই দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে জালালাবাদ আদর্শ সংঘ রুস্তমপুর’র সভাপতি শেখ মখছুছ আলম বলেন, আমাদের সংঘের পক্ষ থেকে নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পূর্বে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছিল। মানববন্ধন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। শিক্ষামন্ত্রীও বারবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশ্বাসের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রয়েছে।

এ দিকে বাঘা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাঘা গোলাপনগর আরাবিয়া মাদরাসা বাঘা ইউনিয়ন পরিষদ, মজিদপুর পুরনো মসজিদও রয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে।

আরেক ভাঙনপ্রবণ এলাকা লালনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, এ বছর আমার প্রায় ১৫ শতক জমি এক রাতেই নদীগর্ভে চলে যায়। নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আমার অবশিষ্ট আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।

ঐতিহ্যবাহী বাঘা ইউনিয়নকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে এলাকাবাসী অতিসত্ত্বর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।

বাঘা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছানা মিয়া জানান, আমার ইউনিয়ন কৃষিনির্ভর। সুরমার ভাঙনে কৃষি জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হুমকীর মুখে। অনেকেই ভিটেমাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সুরমার ভাঙন থেকে রক্ষাকল্পে উপজেলা সমন্বয় সভায় বার বার আবেদন করেও কোন সাড়া পাইনি।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, সুরমা নদী ভাঙন রোধে মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ করা হবে। তা ছাড়া ২০১৪ সালে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে রুস্তমপুর ও নলু এলাকার ভাঙন রোধে একটি প্রজেক্ট নেয়া হলেও তা বেশি দূর এগোয়নি।

Bootstrap Image Preview