Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চট্টগ্রাম-৯: আ’লীগের একাধিক, বিএনপিতে একক প্রার্থী

বশির মামুন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৩২ PM
আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০২:৩২ PM

bdmorning Image Preview


দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিভাগ চট্টগ্রাম ও মহানগরীর ১৬টি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনে নির্বাচিত এমপিরা মন্ত্রী হন। ওই দলই আবার সরকার গঠন করে। তবে সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মহাজোট থেকে নির্বাচিত হলেও মন্ত্রিত্ব পাননি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী শামসুল আলমকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি। ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি এ আসন ছেড়ে দেয়ায় টেকনোক্রেট কোটায় তাকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এবারে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি ফিরে আসতে চায় আওয়ামী লীগ। এ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এ ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে জসিম উদ্দিন চৌধুরীসহ তৃতীয়-চতুর্থ সারির কয়েকজন নেতাও আছেন। 

এ আসনে বিএনপির একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। 

নগরীর মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসন থেকে ১৯৯১ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি পরে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এমএ মান্নান। তিনি শ্রমমন্ত্রী হন। ২০০১ সালে আবারও আবদুল্লাহ আল নোমান এমপি নির্বাচিত হন। তিনি আবারও মন্ত্রী হন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘দলকে ক্ষমতায় আনার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে আমি ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলাম। এবার যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, অবশ্যই আমি নির্বাচন করব। কারণ আসন ছেড়ে দিলেও এ সংসদীয় এলাকায় আমার উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। দল থেকে মনোনয়ন পেলে এ আসনে আমি জিতব ইনশাআল্লাহ।’

এ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বিএনএফ ও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীসহ চারজনকে হারিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোতোয়ালি আসন থেকে জয়ী হন বাবলু। ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হলে সে ক্ষেত্রে জোটগত নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টি যদি এককভাবে নির্বাচন করে তখনও তিনি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

৩০ থেকে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবনের অনুমোদন এনেছেন তিনি। এর মধ্যে ১০টি ভবনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কর্ণফুলী রিভার ড্রাইভ বা বেড়িবাঁধ নির্মাণে আড়াই হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে সেই প্রকল্পের উদ্যোক্তা ছিলেন জিয়াউদ্দিন বাবলু এমপি।

অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল যুগান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন করার ইচ্ছা আমার আছে। সেটি কোতোয়ালি আসন বলে কথা নয়; নগরীর চার আসনের যেখান থেকেই আমাকে মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন আমি জিতে আসব বলে বিশ্বাস। কারণ আমার বাবা ১৭ বছর মেয়র থাকাকালে নগরীর উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন। আমার বাবার প্রতি নগরবাসীর সহানুভূতি আছে। সেই সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ তারা ভোটের মাধ্যমে ঘটাবেন এটা আমার বিশ্বাস। কারণ আমার বাবা চট্টগ্রামকে এত বেশি ভালোবাসতেন যে, তিনি রাজনৈতিক জীবনে চট্টগ্রাম ছেড়ে কখনও কোথাও যাননি। মন্ত্রিত্বের অফারও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন।

অন্যদিকে বৃহত্তম দল বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের। কারণ এ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন শিল্পপতি মোহাম্মদ শামসুল আলম। এবার তার নাম উঠেছে ঋণখেলাপির তালিকায়। তাই তিনি মনোনয়ন চাইতে পারবেন না। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যায় তবে চট্টগ্রামে বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পৃথক দুই আসন চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ থেকে নির্বাচন করবেন।

সে হিসেবে কোতোয়ালি আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা নেই। তাই এ আসন থেকে ডা. শাহাদাত হোসেনই মনোনয়ন পাবেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে মাথায় হুলিয়া নিয়ে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির রাজনীতি বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি- এমনটাই মনে করেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। মামলা হামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক সহযোগিতা করা, বিনা পয়সায় চিকিৎসাসেবা করার কারণেও দলে তার কদর রয়েছে।

কারাগারে যাওয়ার আগে ডা. শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেছিলেন, বিএনপি মনে করে না এখনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে। মামলা-হামলা করে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন করে এবারও পার পেতে চাইছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার তাদের সে স্বপ্নপূরণ হবে না।

ডা. শাহাদাত আরও বলেন, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে কোতোয়ালি থেকে আমিই প্রার্থী হব। এ আসনের আওতাধীন এলাকায় যে তিনটি থানা- কোতোয়ালি, বাকলিয়া, চকবাজার এলাকায় আমার বাড়ি রয়েছে। এ এলাকায়ই অবস্থিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চমেক ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলাম ’৮৭-৮৮ সালে। ’৮৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হই। ’৯১ সালে ডাক্তার হওয়ার পর ছাত্রদল সভাপতির পদ ছেড়ে দিই। বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই ’৯৩ সালে। পরপর দু’বার বিএমএর নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক ছিলাম। ১/১১ সময়ে বিএমএর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাকলিয়া থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করি। এভাবে ধাপে ধাপে উঠে এসেছি। তবে বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন তিনি।
 

Bootstrap Image Preview