জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এ ঘোষণা দেন। এর পরই তিনি ছুটে যান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের কাছে।
এ সময় বঙ্গবীরকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কামাল হোসেন বলেন, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার এটি। আপনি (বঙ্গবীর) বারবার ঝুঁকি নিয়েছেন দেশ রক্ষায়। আপনাকে সঙ্গে পেয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। আমি এখন অবসরে গেলে চিন্তা নেই।
যোগদান উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে লড়াই, সংগ্রামের মাত্রা বেড়ে গেল। সমস্ত মেধাশক্তি দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ও মুক্তির জন্য কাজ করব। বর্তমানে স্বৈরাচারের ভূমিকায় যারা আছেন, তাদের হটাতে পারব।
বি চৌধুরীও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন আমার সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন জানতে পেরে তিনি ওই সম্মেলনে আসেননি। তার পরও আমার দুঃখ নেই। এখন তিনি আসেননি, আশা করি ডিসেম্বরে তিনি আসবেন। আর যদি শেখ হাসিনাকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ও তার ছেলে মাহি বি চৌধুরীকে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখার খায়েশ থাকে, তা হলে বাংলাদেশের মানুষ তাকে (বি চৌধুরীকে) চায় না।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষ ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের জন্য আজকে আমাদের এ সিদ্ধান্ত। এ সময় আজকের দিনটিকে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি দিন বলে মন্তব্য করেন এবং ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরদের মতো মুক্তিযোদ্ধা পাশে থাকলে এ লড়াইয়ে কেউ হারাতে পারবে না বলে দৃঢ়চিত্তে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এক সময় আমার দুরবস্থা ছিল। আমার জন্য শেখ হাসিনা পাত্রী খুঁজেছিলেন। তিনি এখনও আমার পাশে আছেন। আমার এমন লড়াই সংগ্রাম কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করেন বলেই দেশের আজ পরিস্থিতি অন্যরকম উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক দিন পরে হলেও বিরোধীদলগুলোকে তিনি ডেকে আলোচনা করছেন। সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আলোচনায় যখন বসা শুরু হয়েছে তখন থেকেই দেশের পরিস্থিতি ভালো হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
অন্যদিকে ড. কামাল হোসেন বলেন, কাদের সিদ্দিকী শুধু মুক্তিযুদ্ধ করেনি। ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। আবার তিনি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আরও বড় ঝুঁকি নেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবীর বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এ ধরনের ঝুঁকি নেয়ার পরও তিনি (বঙ্গবীর) এখনও আমাদের মধ্যে আছেন- এটা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। সেদিন বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর সবাই ভেবেছিল আমরা দমে গেছি। আর সামনের দিকে যেতে পারব না। কিন্তু তিনি প্রতিরোধ করে দেখিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদেও বাংলাদেশ গর্জে উঠতে পারে। বঙ্গবীরের যোগদানের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ও মোহাম্মদ শাহজাহানসহ গণফোরামের নেতাদের মধ্যে মফিজুল ইসলাম খান কামাল, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিক উল্লাহ, মোশতাক আহমেদ, এম শফিউর রহমান খান বাচ্চু এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নাসরিন সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, প্রিন্সিপাল ইকবাল সিদ্দিকী, শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, আমিনুল ইসলাম তারেক এবং ডাকসু’র সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ প্রমুখ।