Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ‘নিষিদ্ধ’ ইলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:২৯ PM
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


নিষিদ্ধ মৌসুমেও থেমে নেই পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরা। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চারজানাজাত বন্দরখোলা ও কাঁঠালবাড়ী এলাকার দুর্গম চর সংলগ্ন পদ্মা নদীতে গোপনে ইলিশ ধরছেন জেলেরা।

প্রশাসনের নাকের ডগায় চরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছে ডিমওয়ালা মা ইলিশ। অনেক সময় বাজারে ইলিশ বিক্রি করতে না পেরে কম দামে জেলেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে ইলিশ বিক্রি করছেন।

অভিযোগ উঠেছে- পুলিশ জেলেদের ধরে এনে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ সময়ই উদ্ধারকৃত মা ইলিশ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নিয়ে যাচ্ছেন।

শিবচর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, ৭ই অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত ইলিশ ধরায় ৩৯জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাঁচজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৮০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৪০০ কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত মাছ ৮টি মাদরাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।

এছাড়া গত শনিবার ১৬ জেলেকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ১১জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও পাঁচজনের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে মোট পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযান চালানো হয় পদ্মায়। তবে দুর্গম অঞ্চল প্রায় সময়ই অভিযানের বাইরে থেকে যায়। জেলেরা কৌশলে গভীর রাতে ও খুব ভোরে পদ্মার বিভিন্ন এলাকায় মাছ ধরে থাকে। উপজেলার চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দরখোলা এলাকার চর সংলগ্ন পদ্মা নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকার করে থাকেন। চরাঞ্চলের এই পদ্মার পাড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয় ইলিশ।

চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ী ও বন্দরখোলা ইউনিয়নের ইলিশ বিক্রির চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই ভোর থেকে ব্যাগ হাতে পদ্মার পাড়ে নারী-পুরুষের ভিড় জমে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরাও আসে। উদ্দেশ্য কম দামে ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরবে। স্বাভাবিক সময়ে যে ইলিশের বাজার মূল্য কেজিতে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দেড়শ টাকায়। এতো সস্তায় ইলিশ পেয়ে স্থানীয় দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভিড় করছে পদ্মার পাড়ে। ব্যাগ ভরে ইলিশ নিয়ে ফিরছে বাড়িতে।

ইলিশ কিনতে আসা এক ক্রেতা জানান, তিনি প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন। তার দিনমজুর বাবার পক্ষে অন্যান্য সময়ে দাম দিয়ে ইলিশ কেনা সম্ভব হয় না। তাই সস্তায় একটু বড় ইলিশ কিনতে কষ্ট করে এই দুর্গম চরে এসেছেন।

জেলেরা জানান,পদ্মায় যারা মাছ ধরেন তাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। ঋণ করে জাল, নৌকা কিনে পদ্মায় মাছ ধরেন তারা। ফলে মাসে মাসে ঋণ পরিশোধের কিস্তি দিতেই হচ্ছে। তাছাড়া সংসারের খরচ তো আর থেমে নেই। তাই মাছ শিকার বন্ধ করা আর হয়ে ওঠে না। মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় জেলেদের সরকারিভাবে সাহায্য দেয়ার কথা কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো সাহায্য তারা পাননি।

শিবচর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম শামসুজ্জামান (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি পদ্মা নদীর মাদারীপুর অংশে। দিনের পুরোটা সময়ই আমরা পদ্মায় নজর রাখছি। তাছাড়া জেলেদের মাছ ধরা বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যারা মাছ কিনতে আসছেন তাদেরও সচেতন করার চেষ্টা করছি। তারপরও সাধারণ মানুষের ভিড় পদ্মার পাড়ে লেগেই থাকে।

শিবচর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন মোল্লা জানান, জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা মাঝে মধ্যেই নদীতে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার জন্য নদীতে অভিযানে নামেন। তাদের চাহিদা মত আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করি। পুলিশের কোনো লোক জব্দকৃত মাছ নেয় না বলে তিনি দাবি করেন।

Bootstrap Image Preview