নারী সাংবাদিককে কটূক্তির অভিযোগে করা মানহানির মামলায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
রবিবার দুপুরে জামালপুরের আমলি আদালত এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ২০ হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমিন লিটা। পরে সেটি আমলে নিয়ে জামালপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোলায়মান কবির আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
অপরদিকে একইদিনে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির করা মানহানির মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।
রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর এ পরোয়ানা জারি করেন। সেইসঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানার হুকুম তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে আদালতে হাজির হয়ে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি এ মামলাটি দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভিশনের নিয়মিত আয়োজন একাত্তর জার্নালে রাজনৈতিক সংবাদের বিশ্লেষণ চলছিল। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন একাত্তরের মিথিলা ফারজানা। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাসুদা ভাট্টি, সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। আলোচনায় স্টুডিওর বাইরে থেকে যুক্ত হোন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আলোচনার এক ফাঁকে ব্যারিস্টার মইনুলের কাছে মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ’’
এর জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।”
এদিকে এ ঘটনার পর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন ১০১ নারী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।
বুধবার বিকেলে এক বিবৃতিতে তারা বলেন, মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে একাত্তর টেলিভশিনের নিয়মিত আয়োজন একাত্তর জার্নালে রাজনৈতিক সংবাদের বিশ্লেষণ চলছিল। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন মিথিলা ফারজানা। অতিথি, মাসুদা ভাট্টি এবং সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত। আলোচনায় স্টুডিওর বাইরে থেকে যুক্ত হন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আলোচনার ফাঁকে, মাসুদা ভাট্টির প্রশ্ন ছিল: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে যে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ঐক্যফ্রন্টে জামাতের প্রতিনিধিত্ব করছেন। এর জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, ‘আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা মনে করি, তার এই বক্তব্য নারীর জন্য অবমাননাকর, আপত্তিকর, চরম অসহনশীলতার পরিচায়ক। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতো যারা রাজনৈতিক সহনশীলতার কথা বলেন, তাদের কাছ থেকে এধরণের শব্দচয়ন উদ্বেগজনক বলে আমরা মনে করি এবং আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।অবিলম্বে মাসুদা ভাট্টি তথা নারীর জন্য মানহানিকর এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতি প্রদানকারীদের মধ্যে রয়েছেন : সুলতানা কামাল, খুশী কবির, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, নাসিমুন আরা হক মিনু, মুন্নী সাহা, ফরিদা ইয়াসমিন, মিথিলা ফারজানা, নাসিমা খান মন্টি, নবনীতা চৌধুরী, শাহনাজ মুন্নী, ফারজানা রূপা, সুপ্রীতি ধর, রোজিনা ইসলাম, এলিটা করিম, উদিসা ইমন, আঙ্গুর নাহার মন্টি, ফারহানা মিলি, প্রিয়াঙ্কা আচার্য, ফাতেমা আবেদিন নাজলা, শারমিন রিনভী, নাদিরা কিরন প্রমুখ।