Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সৌদির যুবরাজ সালমানের সুখের দিন শেষ?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৪১ PM
আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান সৌদি আরবের মাটি স্পর্শ করার ১৮ মাস এখনো পার হয়নি। সে সময় সৌদি সরকার লাল গালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন তাঁর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন, তখন সৌদি আরবের অনেক মানুষ খুশি হয়েছিল।

 

তাঁর পূর্বসূরি বারাক ওবামাকে নিয়ে সৌদি আরবের মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, তারা মনে করে যে ওবামা ইরানের সাথে খারাপ একটি পারমাণবিক চুক্তি করেছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যাঁর সাথে তারা কাজ করতে পারে বলে ভেবেছিলেন।

ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ওবামা সর্বোচ্চ যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন সেটি বাতিল করেছেন ট্রাম্প। তাছাড়া সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মি: ট্রাম্প কোন বয়ান দেননি।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে ট্রাম্পের মেয়ের জামাতা জারেড কুশনারের যে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল সেটি নিয়ে খুশি ছিলেন তিনি। ট্রাম্পের সফরের পর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগন এবং হলিউড সফর করেছেন। এরপর মোহাম্মদ বিন সালমান যখন লন্ডন সফর করেন তখনো তাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল। যদিও সে সময় ইয়েমেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল।

অন্যদিকে সালমানের নিজ দেশে নানা ধরনের সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ পশ্চিমা কূটনীতিকদের প্রশংসা পেয়েছে। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া, বিনোদনের নানা উদ্যোগ নেয়া এবং ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। একই সাথে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এজন্য ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এভাবে সৌদি আরবে অনেক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তবে সতর্ক সংকেতের জায়গাটি হচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব মোহাম্মদ বিন সালমানকে যতটা উদার ভেবেছিলেন তিনি আসলে ততটা উদার নন। গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে সৌদি আরবের কয়েক ডজন প্রিন্স এবং ব্যবসায়ীদের যখন পাঁচ তারকা হোটেলে আটকে রাখা হয়, তখন মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোরতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাচ্ছিল। এমনকি লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে স্বল্প সময়ের জন্য আটকে রেখেছিলেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, আটক রেখে সাদ হারিরিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে সৌদি আরব। মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে কেউ যদি কোনো প্রশ্ন তোলে তাদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এমনকি তার সংস্কার কাজের সমালোচনা করে কেউ যদি শুধু একটি টুইটও করলেও তাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ রয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত জামাল খাশোগি অক্টোবর মাসের ২ তারিখে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর মোহাম্মদ বিন সালমানের ভূমিকা নিয়ে নানা সন্দেহ তৈরি হয়। সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলতে বাধ্য হয়েছেন যে জামাল খাশোগি নিখোঁজের সাথে সৌদি আরব সরকার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে 'কড়া শাস্তি' পেতে হবে তাদের।

এর জবাবে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বলেছেন, তারাও এর পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক তেলের বাজারে সৌদি আরবের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। 

সৌদি আরবের রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের ক্রমাগত প্রচারণার কারণে সে দেশের অনেক মানুষ এখনো সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। সে দেশে এমন গুঞ্জনও আছে যে সৌদি আরবের নির্দোষ রাজতন্ত্রের বদনাম ঘটানোর জন্য ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে কাতার এবং তুরস্ক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান বাড়াবাড়ি করেছেন কিনা সে প্রশ্নও এখন অনেকে তুলছেন। ইয়েমেনে এক ব্যয়বহুল যুদ্ধে তিনি সৌদি আরবকে জড়িয়েছেন। এ যুদ্ধে সৌদি আরব কখনোই জিততে পারবে না বলে মনে করেন অনেকে। প্রতিবেশী কাতারের সাথে চরম বৈরিতা তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার ইস্যুতে কানাডার সাথে বিবাদে জড়িয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। সূত্র : বিবিসি

Bootstrap Image Preview