কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার একের পর এক অভিযোগ খতিয়ে দেখতে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। এনডিটিভি জানায়, উপদেষ্টা কমিটিতে জ্যেষ্ঠ বিচারক এবং আইন কর্মকর্তারা থাকবেন। যারা #মি টু আন্দোলনে উঠে আসা সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন।
এছাড়া ওই কমিটি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে কিভাবে আইনগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কে নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেবে।
ভারতে গত এক সপ্তাহে '#মি টু' আন্দোলনে একের পর এক নারী যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন। সবচেয়ে বেশি অভিযোগের তীর শক্তিশালী দুই ক্ষেত্র বিনোদন এবং সংবাদমাধ্যমের দিকে। আন্দোলনের ধাক্কা লেগেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভাতেও।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইউনিয়ন মন্ত্রী মানেকা গান্ধী বলেন, “অভিযোগকারী প্রত্যেকের কষ্ট এবং আতঙ্ক আমি বিশ্বাস করি। কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের প্রতিটি মামলার বিচার অবশ্যই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে হবে।”
নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মানেকা এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ১০/১৫ বছর আগে যৌন হেনেস্তার শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগও গ্রহণ করা উচিত।
নারীদের এভাবে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার মত বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে দেখে তিনি খুশি হয়েছেন বলেনও জানান এই মন্ত্রী।
অভিনেতা নানা পাটেকারসহ মুম্বাইয়ের সিনেমা জগতের একাধিক পরিচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনার পর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগের বন্যা বইতে শুরু করেছে। শুধু বিনোদন জগৎই নয়, অভিযোগ আসতে শুরু করেছে মিডিয়া এবং রাজনীতিকদের বিরুদ্ধেও। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে। একসময়ের অতি সফল এই সাবেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন অতীতে তাঁরই অধীনে কাজ করা অন্তত ১০ জন নারী সাংবাদিক। টুইটার মারফত তো বটেই, প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমকেও তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। প্রশ্ন এখন একটাই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচতে আকবরকে ইস্তফা দিতে বলবেন কি না।
আকবর এখনো বিদেশে। সরকারি এক প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে তিনি এখন নাইজেরিয়া সফর করছেন। অভিযোগগুলো নিয়ে এখনো একটি শব্দও তিনি উচ্চারণ করেননি। সরকারি মুখপাত্রেরও মুখে কুলুপ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন। এড়িয়েছেন বিজেপির সরকারি মুখপাত্রও। কিন্তু মোদি সরকারের তিন মহিলা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, মানেকা গান্ধী ও স্মৃতি ইরানি ‘#মি টু’ আন্দোলনকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন। আকবর সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও তাঁরা যে অভিযোগকরীদের পক্ষে, সেই সমর্থনের কথা জানাতে দ্বিধা করেননি।
বিরোধীরা এ বিষয়ে একজোট। কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলো ইতিমধ্যেই আকবরের ইস্তফা দাবি করেছে। একই দাবি বিজেপির শরিক দল শিবসেনারও। তেলেগু দেশম ও হায়দরাবাদের এমআইএম নেতা আসাদুল্লা ওয়াইসির দাবিও তা–ই। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী শুক্রবার ‘#মি টু’ আন্দোলনকে সমর্থন করে এক টুইটে বলেছেন, ‘নারীদের শ্রদ্ধা করা ও সম্মান দেওয়াটা সবার শেখা উচিত। যারা তা করে না, তাদের পরিসর যে ক্রমেই কমে আসছে, তা দেখে আমি খুশি। পরিবর্তন আনতে গেলে সত্যটা জোর গলায় স্পষ্ট করে বলতে হবে।’
মুম্বাইয়ের ফিল্ম দুনিয়ায় ‘#মি টু’ আন্দোলন রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। এত দিন চুপ থাকা ও মন্তব্য না করায় সমালোচিত অমিতাভ বচ্চন তাঁর ৭৬তম জন্মদিনের দিন মুখ খুলেছেন। বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে অথবা অন্য কোথাও কোনো নারীর অবমাননা হওয়া উচিত নয়। পরিচালক সুভাষ কাপুরের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী গীতিকা ত্যাগী ধর্ষণের অভিযোগ তোলায় ‘মোগুল’ সিনেমা থেকে সরে এসেছেন আমির খান।
এদিকে অক্ষয় কুমারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘হাউজফুল-৪’ সিনেমা থেকে সরে আসার। পরিচালক সাজিদ খানের এই সিনেমায় তাঁর অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু সাজিদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন তাঁরই সহকারী সালোনি চোপড়া এবং অভিনেত্রী রেচেল হোয়াইট।
বিদেশ থেকে ফিরে সামাজিক মাধ্যমে অক্ষয় লিখেছেন, প্রযোজককে শুটিং বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছি। বলেছি, আগে তদন্ত হোক, তারপর শুটিং হবে। অক্ষয় লিখেছেন, ‘এটা এমন একটা বিষয়, যার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অভিযোগ প্রমাণিত এমন কারও সঙ্গে কোনো কাজ আমি করব না। নির্যাতিতাদের সুবিচার পাওয়া উচিত।’
বাঙালি গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন বোধিসত্তা নামে এক বিমানবালা। এর জেরে দুর্গাপূজার সময় উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সিতে অভিজিতের গানের অনুষ্ঠান সংগঠকেরা বাতিল করে দিয়েছে। সংগঠকেরা জানিয়েছে, এ বিষয়ে আপসের প্রশ্নই ওঠে না।