Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাল্টে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের দৃশ্যপট

আশিস রহমান, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:১৯ PM
আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫৮ PM

bdmorning Image Preview


দীর্ঘদিন পর পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে জেলার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম বিদ্যাপীঠ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। এর আগে নানা সংকটে জর্জরিত কলেজটির প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ছিলো অসংখ্য। ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি একাধিকবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হলেও বর্তমানে নতুন অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র চারমাস সময়কালে আগের চেয়ে অনেকটাই বদলে গেছে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক দৃশ্যপট।

১৯৪৪ সালের ১ জুলাই সুনামগঞ্জ কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮০ সালের ৩ মার্চ জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারি কলেজের মর্যাদা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজকে অনার্স কলেজে উন্নিত করার ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০০১ সালে বাংলা, দর্শন, ইতিহাস এবং হিসাববিজ্ঞান এই ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়।

নানাবিধ সমস্যা আর সংকট নিয়েই যাত্রা শুরু হয় কলেজটির। সূচনা লগ্ন থেকে নানান সমস্যা আর সংকটের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয়ে আসছিল কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম। চলতি বছরের গত ২৬মে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস ছত্তারের অকাল মৃত্যুতে অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়ে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ। এই শূণ্যতায় কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়।

পরবর্তীতে গত ৭ জুন এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকে তিনি দৃঢ়তার সাথে কলেজের প্রশাসনিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। গ্রহণ করেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ। এরপর কলেজের সার্বিক সমস্যা ও সংকট সমাধানে একের পর এক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ। গত জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে তার প্রচেষ্ঠায় বদলে গেছে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের বেহাল দৃশ্যপট।

কলেজ সূত্র জানায়, বিগত চারমাসে বাস্তবায়ন হওয়া বেশকিছু উন্নয়ন কাজ ছাড়াও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো কয়েকটি নতুন উদ্যোগ। বাস্তবায়িত উদ্যোগের মধ্যে শুরুতেই কলেজের শিক্ষক সংকট দূরীকরণে কাজ করে কলেজ প্রশাসন। কলেজের নবাগত অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দের প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে বদলি ও পদায়নের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে নতুন ১৩ জন শিক্ষক কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। এতে দীর্ঘদিনের শিক্ষক সংকট অনেকটাই লাগব হয়েছে বলে মনে করছেন কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এছাড়াও সম্প্রতি প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে ১২ আসন বিশিষ্ট একটি 'টয়োটা হাই এসি' গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে। কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীদেও নিরাপত্তায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে প্রথমবারের মতো বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে পুরো কলেজ ক্যাম্পাসকে গোপন সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শহীদ তালেব, গিয়াস, জগৎজ্যোতি ও আলী আসগর স্মরণে বিদ্যমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলকের সংস্কার উন্নয়নমূলক কাজও শেষ পর্যায়ে। কলেজে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে একাদশ শ্রেণি থেকে মাস্টার্স (শেষ পর্ব) পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত কলেজ ড্রেস এবং সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীর আইডি বাধ্যতামূলক করেছে কলেজ প্রশাসন।

পাশাপাশি কলেজে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদাভাবে দুইটি ওয়াটার পিউরিফায়ার স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চত করেছে কলেজ প্রশাসন। লোডশেডিং বিপর্যয়ের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীনিবাসে ভোগান্তির অভিযোগ ছিল। বর্তমানে ছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে কলেজের ছাত্রী নিবাসে সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে কলেজ প্রশাসন।

এর বাইরেও কলেজের শিক্ষকদের পেশার মান উন্নয়নে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, দক্ষতা, সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি কলেজে ইন হাউজ ফেকাল্টি ট্রেনিং প্রবর্তনের মাধ্যমে 'ফোকাস গ্রুপ ডিস্কাশন' পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে, বর্তমানে কলেজের নিজস্ব ল্যাবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আইসিটি ব্যবহারিক ক্লাস করানো হচ্ছে। কলেজের নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য কলেজের প্রবেশ পথে অস্থায়ী গার্ড রুম স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। গত জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি করেজ প্রশাসনের এসব উন্নয়ন কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। জেলার এই প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিতে কলেজ প্রশাসনের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ বলেন, আমি আমার অবস্থান থেকে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সার্বিক উন্নয়ন, সমস্যা ও সংকট নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে এখনো পর্যন্ত আমার কলেজের একাডেমিক ভবন ও শিক্ষক সংকট দূর হয়নি। আমি চাচ্ছি আমাদের এনাম কমিশনের প্যাটার্ন অনুযায়ী যদি আমাদের সাব প্যাটার্ন হয় তবে সেটা সুনামগঞ্জের জন্য সবচেয়ে বড় উপকার হবে। কারণ আমাদের ১০টা বিষয়ে অনার্স এবং ৪টা বিষয়ে মাস্টার্স চালু আছে, ভবিষ্যতে বাকি ৬টা বিষয়ে মাস্টার্স এবং ৩টা বিষয়ে অনার্স চালু করার জন্য আবেদন করেছি। মাস্টার্স যদি হয়ে যায় সেক্ষেত্রে প্রতি বিভাগে ১২ জন করে শিক্ষক থাকতে হয় এবং অনার্সের ক্ষেত্রে ৭ জন কিন্তু আমাদের এখানে আছে মাত্র ৪ জন করে শিক্ষক। অর্থাৎ এটা মার্স্টাস কলেজ হওয়া স্বত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত ডিগ্রী কলেজের প্যাটার্ন অনুযায়ী আছে।

এজন্য আমাদের প্রাণের দাবি এখানে যদি ১২জন করে প্রতি বিভাগে শিক্ষক থাকে তাহলে আমাদের প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জের শিক্ষার হার অনেক বেড়ে যাবে। প্রতি পাঠ পর্বে আমাদের ৩৫টা শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ১৪টা। সেজন্য আমরা পর্যাপ্ত ক্লাস নিতে পারছিনা, আমাদের প্রধান সমস্যা শিক্ষক এবং শ্রেণিকক্ষ সংকট। এই দুইটা সংকট দূর করা গেলে আমাদের প্রান্তিক জেলা সুনামগঞ্জ শিক্ষাক্ষেত্রে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

Bootstrap Image Preview