Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পানির জন্য ট্রেন থেকে ধাক্কা, হাত-পা হারিয়ে পরিবারকে খুঁজছে নাহিদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৩৫ AM
আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৩৫ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


বসতভিটা ছিল না রাজমিস্ত্রি বাবার আয় দিয়ে সংসার চলছিল নাতাইতো লেখাপড়া না করে পানি বিক্রি করা শুরু করে ১১ বছরের শিশু নাহিদ বোতলজাত পানি ট্রেনে ট্রেনে বিক্রি করে বাবার অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দিতো নাহিদ কিন্ত ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হাত-পা হারিয়ে, বাবা-মা হারিয়ে নাহিদ এখন হাসপাতালের বেডে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাবার জন্য আর্তনাদ করছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেল স্টেশনের বারান্দায় বোন নাহিদাকে নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে থাকতো নাহিদ ঘটনার দিন নাহিদ পানি নিয়ে ঢাকাগামী একটি লোকাল ট্রেনে উঠে পরে পরে পানি বিক্রি করতে করতে চলে আসে ঢাকায় এক পর্যায়ে ট্রেনের ছাদেউঠে ঘুমিয়ে পড়ে ট্রেনটি কাওরান বাজার মগবাজারের মাঝামাঝি আসলে কেউ একজন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়

খবর পেয়ে হাতিরঝিল থানার পুলিশ নাহিদকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় হাসপাতালে নাহিদের ডান পা ডান হাতের অনেকটা অংশ কেটে ফেলেছেন চিকিৎসকরা নাহিদ গত বিশ দিন ধরে হাসপাতালের বেডে হাত-পায়ের ব্যথায় কাঁতরাচ্ছে এখনও তার স্বজনদের খোঁজ মিলেনি

হাতিরঝিল থানার পুলিশ সদস্য আলি রেজা সেলিম বলেন, চলতি মাসের তারিখ রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটেতাকে যখন উদ্ধার করি তখন তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি রক্তশূন্যতা থাকার কারণে আমাদের এক পুলিশ সদস্য তাকে রক্ত দিয়েছেন তারপর চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করে তার শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন করেন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে অর্থোপেডিকস- ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে নাহিদ তাকে রাখা হয়েছে এই ওয়ার্ডের অজানা রোগীদের একটি বেডে

বর্তমানে নাহিদের হাত-পায়ের এই অবস্থা নিয়ে নড়াচড়া করার মতো অবস্থাও নেই বেডে শুয়ে শুয়েই মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ কেনার টাকা পয়সা তার কাছে নেই এমনকি তাকে পরানোর মতো কোনো কাপড়-চোপড়ও ছিল না পরে হাসপাতালের সেবিকা এই ওয়ার্ডের অন্যান্য রোগীর স্বজনরা চাঁদা তুলে তার কাপড়, ওষুধের ব্যবস্থা করে

নাহিদের দেয়া তথ্যমতে, তার বাবার নাম মো. হানিফ মিয়া মা সুমি বেগম নাহিদা নামে তার একটি বোনও আছে তারা সবাই মিলেই আখাউড়া স্টেশনে থাকতো ঘটনার দিনে পানি বিক্রি করতে করতে ঢাকাগামী একটি লোকাল ট্রেনে উঠে সে ওই ট্রেনেও কয়েক বোতল পানি বিক্রি করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সে এসময় ছাদে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে নাহিদ এসময় তার সাথে আরও দুজন ছিল তাদের একজনই টাকা আর সাথে থাকা পানি নেয়ার জন্য নাহিদকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেয়

নাহিদ বলে, এখন আমার একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে আর কখনও হাঁটতে পারব না এমনকি ডান হাতের কিছু অংশ কাটা হয়েছে এরকম অবস্থায় আমি এখন কী করব, কোথায় যাবো? আমার বাবা-মার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না আমি মায়ের কাছে যেতে চাই

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নাহিদের পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো বেশ কিছু দিন সময় লাগবে তত দিন থাকে হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে

পুলিশ সদস্য আলি রেজা সেলিম বলেছেন, নাহিদের স্বজনদের খোঁজ নেয়া হচ্ছে নাহিদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে খোঁজা হচ্ছে তার বাবা-মাকে তবে এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া যায়নি

Bootstrap Image Preview