Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কেউ আল্লাহ-আল্লাহ ডাকছিলো, আবার কেউ দিচ্ছিলো আজান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪০ PM
আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪০ PM

bdmorning Image Preview


‘চট্টগ্রামের আকাশে ঘোরার সময় বিমান যাত্রীদের সবাই আল্লাহকে ডাকছিল। সবাই মাথা নিচু করে শুধু দোয়া-দরুদ পড়ছিল। কেউ কেউ আজান দিচ্ছিল। ল্যান্ডিংয়ের সময় অসম্ভব ঝাঁকুনি’র সময় সবাই আল্লাহ-আল্লাহ বলে চিৎকার করছিল।’ এভাবেই নিজেদের ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে থাকা যাত্রী নায়লা নাজনিন।

ঘটনাটি আজ বুধবার দুপুরের। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের পথে ১৭১ জন আরোহী নিয়ে রওনা হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করেছে। দুপুর দেড়টার দিকে বিমানটি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ইউএস-বাংলার ঐ বিমানটির জরুরি অবতরণের খবর পেয়ে পূর্বে থেকেই ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের পাঁচটি গাড়ি ঘটনাস্থলে অবস্থান নেয়। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।’

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জাহান বলেন, বোয়িং ৭৩৭ বিমানটির নোজ গিয়ার নামছিল না। যার কারণে কক্সবাজারে নামতে না পেরে পাইলট বিমানটি নিয়ে চট্টগ্রামে আসে। নোজ গিয়ার না নামিয়েই বিমানটি এখানে নিরাপদে ল্যান্ড করেছে। আরোহীরা সবাই নিরাপদে আছে।

ওই ফ্লাইটের যাত্রী নায়লা নাজনিন বলেন, ‘কক্সবাজারে যখন বিমান অবতরণ করছিল না, তখনি আশঙ্কা বুকে দানা বাঁধে। তবে সমস্যা কী, তা আমরা তখনও জানি না। এরপরও অনেকক্ষণ পর্যন্ত বিমান আকাশে থাকায় যাত্রীরা বুঝে গিয়েছিল কোনো সমস্যা হয়েছে। এরই মধ্যে সম্ভবত পাইলট বিমানে স্পিকারে ঘোষণা দিলেন রানওয়েতে সমস্যা থাকায় বিমান কক্সবাজারে না নেমে চট্টগ্রামে অবতরণ করছে।’

‘চট্টগ্রামের আকাশে ঘোরার সময় বিমান যাত্রীদের সবাই আল্লাহকে ডাকছিল। সবাই মাথা নিচু করে শুধু দোয়া-দরুদ পড়ছিল। কেউ কেউ আজান দিচ্ছিল। ল্যান্ডিংয়ের সময় অসম্ভব ঝাঁকুনি’র সময় সবাই আল্লাহ-আল্লাহ বলে চিৎকার করছিল। এ সময় অনেকে আহত হন, দু-একজনের পা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। আমার বড় বোন আলেয়া বেগমের অবস্থা বেশি খারাপ। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে’-বলেন নায়লা নাজনিন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিমান যাত্রীদের প্রায় সবাই অসম্ভব ভয় পেয়েছেন। তারা বর্তমানে ট্রমায় ভুগছেন। উচ্চরক্তচাপ জনিত কারণে আলেয়া বেগম (৪৫) নামে এক যাত্রীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় হাত পায়ে ব্যথা পাওয়ায় অন্তত দশজনকে ড্রেসিং করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন ৪০ জন। বিমানবন্দরেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।’

এদিকে বিমানবন্দরের পার্সেল বিভাগের কর্মচারী ইকবাল বলেন, ‘বিমানের ক্রস ল্যান্ডিং হবে শোনার পর থেকে কী হবে সে আশঙ্কায় বুক কাঁপছিল। কর্মচারীরা সবাই রানওয়ের এক কোনায় জড়ো হই। বিমানটি যখন আকাশে চক্কর দিচ্ছিল তখন বিমানবন্দরে ফায়ার সার্ভিস প্রবেশ করে। বিমান মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বুকে কে যেন হাঁতুড়ি দিয়ে পেটাল। মুখ দিয়ে শুধু আল্লাহ-আল্লাহ শব্দ বের হচ্ছিল। রানওয়ের সঙ্গে বিমানে ঘর্ষণের শব্দ বুকটা ধরফড় করেছিল। খুব ইচ্ছা করলেও সামনে যেতে পারছিলাম না।’

সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটির সামনের নোজ হুইল কাজ না করায় বিমানটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণে ব্যর্থ হয়। পরে বিমানটি চট্টগ্রামের আকাশে অনেকক্ষণ উড়তে থাকে। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, বিমানটি ক্রাস ল্যান্ডিং করবে। তবে দুপুর দেড়টার দিকে পাইলটের দক্ষতায় বিমানটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে শুধু পেছনের চাকাগুলোর ওপর ভর করে ল্যান্ডিং করে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম-পিআর) কামরুল ইসলাম বলেন, ফ্লাইটে ১১ শিশুসহ (ইনফ্যান্ট) ১৬৪ যাত্রী ও সাত ক্রু ছিল। তাদের সবাই নিরাপদে আছেন। ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিলেন ক্যাপ্টেন জাকারিয়া। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শুধু পেছনের চাকাগুলোর ওপর ভর করে বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করান।

Bootstrap Image Preview