Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ১৩৪ মিলিয়ন মানুষের জীবনমানের উপর প্রভাব ফেলবে: বিশ্বব্যাংক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২০ AM
আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৮ PM

bdmorning Image Preview


কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বাংলাদেশের জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশেরও বেশি এবং দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনিশ্চিত বৃষ্টিপাতের কারণে জীবনযাত্রার মান হ্রাসের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এটি ১৩৪ মিলিয়ন মানুষের জীবনমানের উপর প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

আজ ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস South Asia’s Hotspots: The Impact of Temperature and Precipitation Changes on Living Standards নামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে এসব কথা বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এমপি।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, গত ৬০ বছরে এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে তা অব্যাহত আছে। এতে করে কৃষি, স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করছে। এটি বাংলাদেশের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের (জিডিপি) ৬ দশমিক ৭ শতাংশ খরচ করতে পারে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশের জীবনযাত্রার মানকে হ্রাস করতে পারে।

প্রতিবেদনটিতে আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১ দশদমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তনের চুক্তি অনুসারে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সালে দেশের তাপমাত্রা ১ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেড়ে ২ শমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়াবে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইং স্কেফার বলেন, "বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দারিদ্র্যের অবসান ঘটানোর ও উন্নয়নের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। উপকূলীয় অঞ্চলের পাশাপাশি, পরবর্তী দশকগুলিতে উষ্ণ আবহাওয়া দেশের অভ্যন্তরীণ এলাকাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করবে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার জন্য, দেশের কৃষি খাতে বাইরে চাকরি তৈরির এবং দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দেশকে মনোযোগ দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও স্থিতিশীল করার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগটি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ শীর্ষ দশটি জেলার মধ্যে সাতটি সেখানে। যেখানে গড় তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন জীবনযাত্রার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শীর্ষ দুটি জলবায়ু উচ্চ তাপমাত্রার স্থান সম্ভবত কক্সবাজার ও বান্দরবান হতে পারে যা তাদের জীবনযাত্রার মান ১৮ শতাংশের বেশি নীচে নামিয়ে আনবে। চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি এবং নোয়াখালীও এর অন্তর্ভুক্ত।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রতিবেদন লেখক এবং বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ মুথুকুমার মনি বলেন, "এই আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে মাথাপিছু ভোগের মাত্রা কমিয়ে আনা হবে। যা দক্ষিণ বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রার স্থান চিহ্নিত করা নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব। এতে যে পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর ঝুঁকি মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।"

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বিডিমর্নিংকে বলেন, আজ বিশ্বব্যাংক যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সেই আশঙ্কার কথাগুলো আমরা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি। এখন সেটি গ্রহণযোগ্যতা পেল বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ সালে জিডিপির যে ক্ষতিটির কথা বলা হয়েছে এটি ভয়াবহ। সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে কর্মসূচি হাতে নেওয়ার সময়।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে অনেক প্রজেক্ট রয়েছে তা দেশের জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে যা দরকার ছিল না তা করা হয়েছে। এই পরিবেশগত ক্ষতিতে তারাও দায়ী। নদীভাঙনসহ নানা কারণে তাদের কাছে ক্ষতি পূরণ চাই। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি প্রজেক্টগুলো আরও চিন্তা-ভাবনা করে নিতে হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক এডিশনাল ডি জি আব্দুস সোবাহান বিডিমর্নিংকে বলেন, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন না করার কারণে এই অবস্থাটি তৈরি হয়েছে এবং আগামীতে আরও নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, গ্রিন হাউজ ইফেক্টের কারণে আমরা ছোট দেশগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এ জন্যে তাদেরকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও জবাবদিহীর মুখে দাঁড় করানো প্রয়োজন। তাদের উৎপাদনের কারণে আমরা ধ্বংস হচ্ছি।

আব্দুস সোবাহান বলেন, এবার দেখুন বাংলাদেশের আবহাওয়া কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে? বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি ছিল না। আমাদের নদী-নালা ভরে ফেলা হয়েছে। এগুলো উদ্ধারে তেমন তৎপরতা দেকা যাচ্ছে না। এসব পানির আধারগুলো যদি সংরক্ষণ না করা হয় তবে বভিষ্যতে আরও ভয়াবহ হুমকীর মুখে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিকদলগুলোকে একতাবদ্ধ হয়ে ন্যুনতম ১০ লাখ মানুষ নিয়ে একটি মহাসমাবেশ করা যায় ঢাকায় পরিবেশ রক্ষার্থে। এতে করে বিশ্ব মিডিয়ায় বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এ জন্যে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মজীবী, সকল শ্রেণির মানুষকে এক কাতারে আসতে হবে।

আব্দুস সোবাহান বলেন, আমরা মানুষ বেমি জমি কম। এ ক্ষেত্রে কৃষিব্যবস্থা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

Bootstrap Image Preview