Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নামিদামী ব্রান্ডের জুতো তৈরি হচ্ছে পুরাণ ঢাকায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৩ AM
আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


জুতসুই জুতা কেনার জন্য অনেকেরই প্রথম পছন্দ ব্রান্ডের দোকান। ব্রান্ডের চকচকে ঝকঝকে আলোর নিচে থাকে বাহারি রকমের জুতোর পসরা। যেখান থেকে ক্রেতারা সহজেই বেছে নিতে পারেন তাদের পছন্দের জুতো। কিন্তু এই চকচকে আলোর পেছনেই রয়েছে সুক্ষ্ণ প্রতারণা। যার পুরোটাই হয়ে থাকে ক্রেতার চক্ষুর আড়ালে। ঝলমলে আলোতে আমাদের যেসব জুতো পছন্দ সেসব জুতোর বিরাট অংশই আসে পুরাণ ঢাকার সিদ্দিক বাজার আলু বাজারের বিভিন্ন কারখানা থেকে।

সরেজমিনে সিদ্দিক বাজার আলু বাজারের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গলিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় কয়েক হাজার কারখানা রয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা পার করছেন ব্যতিব্যস্ত সময়। যেখানে অর্ডার অনুযায়ী যেকোনো জুতো তৈরি করতে পারেন এসব কারখানার শ্রমিকরা।

সিদ্দিক বাজার আলু বাজারের বিভিন্ন জুতার কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন উৎসব বা মৌসুমে জুতার যখন বেশি চাহিদা থাকে তখন বিভিন্ন ব্রান্ডের কাছ থেকে তারা জুতা তৈরির অর্ডার পান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি ২৯ বর্গফুটের চামড়া দিয়ে ১২ জোড়া জুতো তৈরি করা যায়। আর ভালো মানের চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম পরে ৪৫০ টাকা। সে অনুপাতে ২৯ বর্গফফুট চামড়ার দাম পরে ১৩০৫০ টাকা। আর প্রতিটি জুতো তৈরি করতে চামড়া লাগে প্রায় . বর্গফুট। সে হিসেবে প্রতি জোড়া জুতায় খরচ পরে ১০৮০ টাকা এটা ছিল ভালো মানের চামড়ার দাম। তবে মানভেদে চামড়ার দাম কম বেশি আছে।

আমরা যে জুতাগুলো ৩০০০-৩৫০০ টাকা দিয়ে বিভিন্ন নামিদামী ব্রান্ড থেকে কিনি সেসব জুতা তৈরি করতে প্রকৃত খরচ কত? এসব জুতা তৈরির মূল অংশে ১৫০-২০০ টাকা মূল্যমানের চামড়ার ব্যবহার করা হয়। সে হিসেব অনুযায়ী প্রতিজোড়া জুতা তৈরি করতে মূল অংশে ৪০০-৪৫০ টাকার চামড়ার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু জুতাতো শুধু চামড়া দিয়ে তৈরি হয়ে যায় না। জুতো তৈরি করতে আরও কিছু আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়। সোল ব্যবহার করা হয় ১৫০-৩০০ টাকা মূল্যমানের ইনসোল-পেস্টিংয়ে খরচ পরে ৫০-১০০ টাকা। স্টিকার বাবদ খরচ পরে ২০-৫০ টাকা। আর প্রতিজোড়া জুতো তৈরি করতে শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হয় ৫০-১০০ টাকা।

এছাড়াও অন্যান্য খরচ বাবদ যদি আরও ১০০ টাকা ধরা হয় তাহলে প্রতি জোড়া জুতোর দাম পরবে মাত্র ১০০০-১১০০ টাকা। কিন্তু এই একই জুতো যখন নামিদামী ব্রান্ডের ঝকঝকে আলোর নিচে চকচকে করে প্রদর্শন করা হয় তখন এর দাম হয়ে যায় দ্বিগুনেরও বেশি।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইসমাইল নামের জুতার কারখানার শ্রমিক বিডিমর্নিংকে বলেন, আমাদের এখানে হরহামেশাই এপেক্স, বাটাসহ নানা ধরনের ব্রান্ডের জুতার অর্ডার আসে। আমারা নামমাত্র লাভেই অর্ডার গ্রহণ করে থাকি। তবে ব্রান্ডের দোকানিরাই প্রকৃত লাভবান হয়ে থাকে। আমারা তেমন লাভবান হতে পারি না।

এ বিষয়ে পুরাণ ঢাকার আরেক কারখানা শ্রমিক ইউসুফ বিডিমর্নিংকে বলেন, রোজার ঈদেই এপেক্স আমাদের ৪০০ জোড়া জুতোর অর্ডার দিয়েছিল। শুধু এপেক্স বা বাটা নয় সব কোম্পানিই কম বেশি আমাদের এখানে অর্ডার দিয়ে থাকে। বিশেষ করে ঈদের মৌসুমে আমাদের এখানে এসব ব্রান্ডের জুতোর অর্ডার আসে বেশি।

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) সভাপতি গোলাম রহমান বিডিমর্নিংকে বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে যেকোনো প্রতিষ্ঠানই যেকোনো কারখানা থেকে তাদের পণ্য তৈরি করার অধিকার রাখে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে মুনাফা নিয়ন্ত্রণেরও কোনো সুযোগ নেই তবে কোনো কোম্পানি যদি অধিক মুনাফা অর্জন করে তাহলে সেটা আইন বহির্ভূত এটা বলার অবকাশ নেই। তবে এটা কাঙ্ক্ষিত না। জুতোর মূল্য ভোক্তাসাধারণের নাগালের মধ্যে রাখাই শ্রেয়।

Bootstrap Image Preview