উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে নদী ভাঙ্গন। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাধের ১০০ মিটার ধসে গেছে। শরীয়তপুরে অব্যাহত আছে পদ্মার ভাঙ্গন। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাড়ছে দেশের উত্তরের ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া ও তিস্তা নদীর পানি।
গাইবান্ধায় তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদী বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উজানের পাহাড়ীঢল আর বৃষ্টিতে নদনদীর পানি বৃদ্ধি হতে শুরু করেছে। গাইবান্ধার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, ধনারপাড়া, সৈয়দপুর, রসুলপুর, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, কাপাসিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, করতোয়া গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে ১৭৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তা সুন্দরগঞ্জের গোয়ালের ঘাট পয়েন্টে ১২৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এদিকে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারসহ কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ-নদীতে পানি বেড়েই চলেছে।এরমধ্যে ধরলা নদীর মূল স্রোত ডান তীর ঘেঁষে প্রবাহিত হওয়ায় সদর উপজেলার হোলোখানা ইউনিয়নের চর সুভারকুটি এলাকায় টি-হেড গ্রোয়েনটির নদীর দিকে ৪০ মিটার স্লাভ ধ্বসে পড়েছে। দু’দিন ধরে ব্লক ও বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ফলে আতংকের মধ্যে পড়েছেন আশেপাশের চর সুভারকুটি, পাঙ্গার চর, হেমেরকুটি, মোক্তারের হাট, গুচ্ছগ্রাম, আরাজী পলাশবাড়ী, ভোলারচর ও ওয়াপদা মোড়-এই ৮ গ্রামের মানুষ।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার কাজ দরকার, কাজ হচ্ছে আস্তে আস্তে।
হোলোখানা ইউনিয়ন পরিষদ ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রিয়াজুল হক বলেন, যে কাজ চলছে, তা খুবই ধীর স্থিরভাবে হচ্ছে। স্লাভ অনেক কম দিচ্ছে।'
পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। শুষ্ক মৌসুমে স্লাভ বসিয়ে কাজ করবো।'
চর সুভারকুটির টি-হেড গ্রোয়েন ছাড়াও রৌমারীর বলদমারা, সাহেবের আলগা, চিলমারীর কাঁচকোল, উলিপুরের নাগড়াকুড়া ও কাজিরচক, রাজারহাটের ডাংরারহাট এবং ভূরুঙ্গামারীর গনারকুটি এলাকায় টি-হেড গ্রোয়েন ও রিভেটমেন্ট ভাঙনের কবলে পড়েছে।
অন্যদিকে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকায় যমুনার পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন সড়ক তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্লাবিত হয়েছে চুকাইবাড়ি, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, চর আমখাওয়া, ডাংধরা ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল। ফলে এসব এলাকায় সদ্য রোপণ করা রোপা আমন ধান এখন পানির নিচে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বন্যায় ইসলামপুর উপজেলায় যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের সিসি ব্লকের বাঁধের প্রায় ১০ মিটার ধসে গেছে। যমুনার বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানি বাজার থেকে ইসলামপুর উপজেলা হয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়ন পর্যন্ত ৪৫৫ কোটি টাকার ব্যয়ে গত বছর সিসি ব্লকের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জামালপুরের প্রকৌশলীরা। জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি দল রবিবার সন্ধ্যা থেকে বাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলছে।
স্থানীয়দের আতঙ্কিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামালপুর পানি উন্নয়নের বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী জানান, উলিয়া বাজারের পেছনে বাঁধ রক্ষায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছি। আশা করা যায় ভাঙন ঠেকানো যাবে।