Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

মিয়ানমারে সেনাপ্রধানের স্বপ্নে পানি ঢেলে দিয়েছে ফেসবুক-যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:২৫ PM
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইং-সহ অন্য ছয় শীর্ষ সেনা জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে জাতিসংঘ এক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে ফেসবুক।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। ২০২০ সালে মিয়ানমারের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। এমন গুঞ্জন বহুদিনের। কিন্তু সে স্বপ্নে পানি ঢেলে দিয়েছে ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্র।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগ তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায়। রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে তার দুটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।

আর মিন অং হ্লাইংয়ের বিচারের জন্য নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র বারবার জোর দাবি জানিয়েছে। এতে নিজ দেশেও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার রোষানলেও পিষ্ট হয়েছেন।

এশিয়া টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের জন্য খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। ২৭ আগস্ট জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনে।

কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে মিন অং হ্লাইংকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের জন্য সুপারিশ করা হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই সেনাপ্রধানের জন্য আরেকটি খারাপ খবর আসে।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার দুটি অ্যাকাউন্টসহ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট ১৮টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। রোহিঙ্গা গণহত্যায় উসকানি ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ এমন পদক্ষেপ নেয় ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এ যোগাযোগ মাধ্যমটি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রযুক্তি জায়ান্ট এই প্রতিষ্ঠান ব্যাপক পরিসরে জনসংযোগ কার্যক্রম শুরু করেছে। ফেসবুক বলছে, উসকানিমূলক পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলতে তারা কিছুক্ষেত্রে দেরি করেছে।

মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালানোর দায়ে ইসলাম বিদ্বেষী ও উগ্র বৌদ্ধদের দুটি গ্রুপকেও নিষিদ্ধ করেছে ফেসবুক। তবে এবারই প্রথম মার্কিন এই অনলাইন স্যোসাল মিডিয়া জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো।

ফেসবুক বলছে, আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লেইংসহ দেশটির ২০ নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করছি। জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা ঠেকাতে চায় ফেসবুক।

৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের দেশ মিয়ানমারে ফেসবুকের ব্যবহারকারী রয়েছে প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। যে কোনো ধরনের ঘোষণা দেয়ার জন্য দেশটির সরকার এই মাধ্যমটির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের দু'টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সচল ছিল। এর মধ্যে একটিতে ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ এবং অন্যটিতে ২৮ লাখ। ইংলিশ এবং বার্মিজ ভাষায় দেয়া উভয় অ্যাকাউন্টের পোস্টে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সবসময় বাঙালি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে সেদেশে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া দেশটির নৃশংস অভিযান ও গণহত্যার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের এই সেনাপ্রধান। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সমূলে উৎপাটনের জন্য সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে বলে সাফাই গেয়ে আসছেন তিনি। রাখাইনে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই মিন অং হ্লেইংয়ের উভয় অ্যাকাউন্টই বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক।

Bootstrap Image Preview