Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গাইবান্ধার ১৬৫টি চরের ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে

ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:০২ AM
আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:০৪ AM

bdmorning Image Preview


গাইবান্ধার চার উপজেলায় নদীর বুকে জেগে ওঠা ১৬৫টি চরকে ঘিরে রয়েছে পর্যটনের এক সম্ভাবনা। এই চরাঞ্চলগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হলে একদিকে যেমন চরাঞ্চলের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে অন্যদিকে তেমনি গাইবান্ধার মানুষও শহর জীবনের বাহিরে গিয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। আর তা হলে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনসহ ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে।  

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় ১৬৫টি চর। আর এসব চরে বসবাস করে প্রায় চার লাখ মানুষ। তাদের একমাত্র প্রধান পেশা হচ্ছে কৃষি। আর এ পেশার উপর নির্ভর করেই তারা নদীর সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে বড় বন্যা হলেও গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়া, ফুলছড়ি উপজেলার বাজে তেলকুপি ও সাঘাটা উপজেলার কালুরপাড়া চরে বন্যার পানি ওঠেনি। বিভিন্ন সময়ে পূর্ব গাবগাছী, বাজে ফুলছড়ি, পোড়ারচর, কড়াইবাড়ী, পূর্ব খাটিয়ামারী, পশ্চিম দেলুয়াবাড়িসহ কয়েকটি চরে গিয়ে দেখা গেছে, মাটি ও বালুতে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, বাদাম, কাউন, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ হয়। এসময় দিগন্ত জুড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসলের সমারহ থাকে।

প্রাকৃতিক ভাবেই এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয় ফসলের সবুজ পাতায় পাতায়। আর এসব চরগুলোকে এখন যদি পরিকল্পনা করে বিনোদন কেন্দ্র করে এগিয়ে নেওয়া যায় তাহলে আমুল পরিবর্তন ঘটবে চরবাসীর জীবনে। পুরো সপ্তাহের কর্মব্যস্ততা শেষে অনেকেই খোঁজেন পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার একটা ঠিকানা। আর এমন বিনোদন প্রিয় মানুষদের আকর্ষণ করা যেতে পারে এসব চরাঞ্চলগুলো প্রতি।

কয়েকজন বিনোদন প্রেমির সাথে কথা বলে জানা যায়, চরাঞ্চলগুলোয় রাস্তার দুইধারে বিভিন্ন প্রকার ফুল ও ফলের গাছ, শোভাবর্ধনকারী গাছ, ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানো হলে দৃষ্টিনন্দন হবে চরগুলো। থাকতে হবে বিদ্যুতের ব্যবস্থা, বিশ্রামের জন্য ঘরসহ বসার ব্যবস্থা। তৈরি হতে পারে নারিকেল ও সুপারির বাগান। যা আকর্ষনীয় এক দৃশ্যের সৃষ্টি হবে ও চলার পথে দৃষ্টি কাড়বে মানুষের। এতে করে বেকার যুবকদের পাশাপাশি চরের মানুষের জন্যও সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। নিরাপত্তার জন্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট ও নিয়মিত পুলিশের টহলদারি থাকতে হবে। এ ছাড়া শিশুদের আকর্ষণ করতে চরাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের খেলনা সামগ্রীর ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিনোদন প্রেমিরা। এসব সুবিধা থাকলে মানুষ চরাঞ্চলগুলোকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গ্রহন করতে পারবে সহজেই।

এসব চরের মধ্যে শুকনো মৌসুমে পূর্ব গাবগাছীর চরে যাতায়াতের জন্য নদীর পাড়েই রয়েছে ঘোড়ার গাড়ী ও মোটরসাইকেল। হেঁটে ক্লান্ত হয়ে গেলে এখানকার দোকানে পাওয়া যাবে ফ্রিজের পানি। নদীর পাড় থেকে হেঁটেই সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরে যাওয়া যায়। অন্যান্য চরের থেকে এ চর অপেক্ষাকৃত উঁচু। ফুলছড়ি চরে রয়েছে অনেক পুরোনো ঘন গাছপালার এক মনোরম দৃশ্য। এসব চরে গেলে দেখা মিলবে পুরুষ ও মহিলাদের নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞতা। নদীর বুকে জেগে ওঠা এসব চরের বয়স ৪০ বছরের কমে নয়। জীবনযাপনকে সহজ করতে এসব চরে রয়েছে দোকান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ফুলছড়ি ও পূর্ব খাটিয়ামারীর চরে গেলে দেখা মিলবে মহিষের। আর দক্ষিণ খাটিয়ামারী, কড়াইবাড়ী ও পূর্ব গাবগাছীসহ বিভিন্ন পুরোনো চরে দেখতে পাওয়া যাবে ঘোড়া। নৌকায় করে ও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে জেলেদের মাছ ধরা এবং ফসল মাথায় করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দৃষ্টি কাড়বে অনেকেরই। এসব চরে যেতে কাশফুল, নদীর দু-ধারের মনোরম দৃশ্য ও নদীর ঢেউয়ের খেলা দেখলে আনন্দে মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠবে সবারই। ৪০ বছরেরও বেশি পুরোনো এসব চর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হলে মানুষ আর নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে মানবেতন জীবনযাপন করবে না। এতে করে একদিকে যেমন রক্ষা পাবে এসব চর, তেমনি বিনোদনের জন্য উদ্যোক্তারা গড়ে তুলতে পারবেন বিভিন্ন স্থাপনা। এজন্য দরকার সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

বিভিন্ন সময়ে চরাঞ্চলে চলাচল করা তারেক মিয়া বলেন, কুন্দেরপাড়া, বাজে তেলকুপি ও কালুরপাড়া চরসহ যেসব চরে বন্যার পানি ওঠেনা এমন চরগুলোতে যদি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে তাহলে একদিকে যেমন নদীর তীর সংরক্ষণ হবে তেমনি চরের মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হবে। শহর জীবনের বাহিরে গিয়ে একটু বিনোদনের জায়গা আমিও খুঁজি। যেখানে নিরাপদে, ভালো পরিবেশে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া যাবে। কিন্তু হতাশ হই এমন জায়গা না পেয়ে। তাই চরাঞ্চলগুলোকে ঘিরে যদি নিরাপদ কোন বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয় সেটা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো হবে। 

Bootstrap Image Preview