Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

খালেদা জিয়ার বাঁচন-মরণ এবং তাঁর বিদেশ যাত্রা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১১:১৮ PM
আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১১:১৮ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


অজয় দাশগুপ্ত।। খালেদা জিয়া বাঁচবেন কী বাঁচবেন না তা কেউই বলতে পারে না। তবে এটা জানি তিনি বাঁচা-মরার মাঝামাঝিতে আছেন। বেশকিছু দিন থেকেই তাঁর শরীর খারাপের খবর শুনছি আমরা। কথায় বলে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ বেগম জিয়ার শেষটা ভালো হলো না। ভালোয় কাটলো না জীবনের শেষ দিনগুলো।

আমি বিএনপির রাজনীতি সমর্থন করি না। বরং বিরোধিতা করি। কারণ আমি স্বাধীন দেশের ইতিহাস বিকৃতি দেখে বড় হয়েছি। এমন একটা সময় ছিলো যখন আজকের আওয়ামী লীগের এই প্রতাপ বা পাওয়ারের চেয়ে কম কিছু ছিলো না তাদের। বরং একটা সময় বাংলাদেশ ইতিহাস আর বিএনপি মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছিলো প্রায়। যুবদল, ছাত্রদল ও বিএনপি-জামায়াত মিলে এক ত্রাসের রাজত্ব। সে সময়কাল একসময় শেষ হলো। জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় বিএনপি প্রগতিশীলতাকে একধরনের নির্বাসনে পাঠিয়ে ভেবেছিলো আর কোনো চিন্তা নেই! খালেদা জিয়াকে সামনে রেখে তাঁর ইমেজ কাজে লাগিয়ে জামায়াতের দেশশাসন সময়, ইতিহাস কোনোটাই ভালোভাবে নেয়নি। সময়ের বিচারে একসময় তাদের শাস্তি আর ফাঁসির পর কার্যত দুর্বলতর হয়ে গেলো বিএনপি।

দুই পুত্রের ছোটটি রাজনৈতিকভাবে তেমন লম্ফঝম্ফ না করলেও তার ইমেজ ভালো কিছু ছিলো না। এই অকাল প্রয়াত পুত্রের শোকে বেগম জিয়া যখন কাতর তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন সমবেদনা জানাতে। সে সময় তাঁর সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়েছিলো বলে শুনেছি। সবাই জানেন, তাঁকে গেট খুলে দিয়ে ভেতরে যাবার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে এতো বড় অপমান সহ্য করে মার্জনা করার মতো বুকের বল সবার থাকে না। তারপরও শেখ হাসিনা কিছু কিছু ব্যাপারে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার কথা বলতে গেলে বা তাঁর এখনকার অবস্থা বলতে গেলে শেখ হাসিনার কথা আসবেই। আজ যখন বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা উঠছে তখন শেখ হাসিনার অনুমোদন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু ক’দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী অতীতের কথা তুলে এনে এক সাংবাদিককে ভালোই ধোলাই দিলেন। তাঁর কথায় যুক্তি ছিলো। তাছাড়া যা যা তিনি বলেছেন, তার একটিও মিথ্যা ছিলো না। শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেষ্টায় গোড়ার দিকে যেমন এরশাদ ও জাতীয় পার্টি ছিলো তেমনি সবচেয়ে বেশিবার সে চেষ্টা হয়েছে বিএনপির আমলে। বিশেষত বোমা পুঁতে রাখা আর গ্রেনেড হামলার মতো নারকীয় ঘটনা ভুলে যাওয়ার সুযোগ রাখেনি তারা। সেদিন সফল হলে আজ শেখ হাসিনা বলে কিছু বা কেউ থাকতো না। সে কথাই বারবার বলেছেন শেখ হাসিনা।

কিন্তু হত্যা চেষ্টার পরও জাতীয় পার্টি বা এরশাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মিত্রতা থেমে থাকেনি। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো জাতীয় পার্টি। নানা কাহিনি ও গুজবের জন্ম দিলেও প্রয়াত এরশাদ সাহেব শেষ পর্যন্ত মিত্রই ছিলেন তাদের। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আরেকটি বড় ভুল ছিলো, ভুয়া জন্মদিনের ফাঁদে পা দেওয়া। যারা তাঁকে দিয়ে ১৫ আগস্টের বিভীষিকাময় দিনে আনন্দের কেক কাটাতো তারা আজ কেউ নেই পাশে। এটাই নিয়ম। আজ খালেদা জিয়া যখন রোগশয্যায় তখন তাঁর দলের নেতাদের ভেতর আকুলতা থাকলেও ঐক্যবদ্ধ কোনো আন্দোলন বা সংগ্রাম নেই। এর কারণ বোঝা কি খুব মুশকিল? খালেদা জিয়া নিঃসন্দেহে দাপটের সঙ্গে দেশশাসন করে গেছেন তাঁর আমলে। কিন্তু দল গোছানো বা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেননি। দল আজ এমন এক জায়গায় যেখান থেকে ওঠে আসার সম্ভাবনা খুব কম। একমাত্র তুমুল জনসম্পৃক্ততা ছাড়া তাদের জন্য এ কাজ অসম্ভব।

ফিরে আসি খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক অবস্থা বিষয়ে। আগেই লিখেছি, আমি বিএনপির রাজনীতির ঘোর সমালোচক। কিন্তু আজ আমি দৃষ্টিকোণটা মানবিক রেখে বলতে চাই, কোনো কোনো সময় মানবিকতা রাজনীতি বা প্রতিশোধের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে। এ লেখা যখন লিখছি তখন ইউটিউবে দেখলাম, গণস্বাস্থ্যের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলছিলেনÑ খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে। তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই বললেন, বেগম জিয়ার হাতে সময় বেশি নেই। তাঁর রক্ত ঝরছে নানা দিক থেকে। একমাত্র উন্নত কোনো দেশের আধুনিকতম চিকিৎসা বাদে আর কিছুই কাজ করবে না এবং সময় শেষ বললেই চলে। আকুল আবেদন জানানোর পাশাপাশি তিনি সরকারকে সম্ভাব্য পরিণতির জন্য হুঁশিয়ার করে দিতেও ভোলেননি।

যেটা আশ্চর্যের বিষয় বিএনপির নেতাদের কারও মুখে এমন ভাষা শুনিনি। এমন কড়া ও সাফ কথা তারা কেন বলতে পারছেন না? জাফরুলল্লাহ চৌধুরী একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও তুলেছেন, এতোটা শরীর খারাপের কথা কোনো নেতা বলেননি কেন? আসলেই তো। তবে কি তাদের বিরুদ্ধে সমঝোতা ও আপোসের যে অপবাদ তা সত্যি?

ঘটনা যাই হোকÑ আমরা বলছি খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার কথা। তাঁকে বিদেশ যেতে দিলে সরকারের ইমেজ কি আসলেই কমবে? না বাড়বে? এর উত্তর ছোট শিশুরও জানা। অবস্থা যদি সত্যি না ফেরার মতো হয়, তাহলে তো তাঁকে সহসা বিদেশ যেতে দেওয়াটাই হবে নিজেদের জন্য মঙ্গলের। কারণ এতে একদিকে যেমন উদারতা, আরেকদিকে তাঁকে দেওয়া হবে শেষ সুযোগ। আগেই বলেছি, আমরা খালেদা জিয়ার আমলে ভালো ছিলাম না। আমাদের অনেকের ওপর ছিলো নানা ধরনের বিপদের খড়্গ। দেশে যেতে পারিনি অনেক বছর। তারপরও আজ এই শেষ সময়ে খালেদা জিয়ার জন্য বিদ্বেষ রাখতে চাই না।

আমাদের ইতিহাস এমনিতেই হানাহানি আর হিংসার ইতিহাস। কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি কোনোদিন। পাশের দেশে মাফ করে দেওয়ার বহু ঘটনা থাকলেও আমরা তা গ্রহণ করিনি। একের পর এক হত্যা আর হিংসার আগুনে শেষ হয়ে গেছে মুক্তিযোদ্ধা আর বীরের দল। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে একটা কথা বলতে চাই গান্ধী বলতেন, চোখের বদলে চোখ নিতে নিতে একসময় দেখা যাবে দুনিয়াটাই অন্ধ হয়ে গেছে।

বেগম জিয়াকে যদি তাঁর কৃতকর্মের ফলাফলে বিবেচনা করি তাহলে বলবো সময় তাঁকে ছেড়ে কথা বলেনি। সে কারণেই তাঁর বিদেশযাত্রার ব্যাপারে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করুক। জাতি যেন কোনোকালে কাউকে আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে, তোমাদের জন্যই এমনটা হয়েছিলো। বাকিটা সময়ের হাতে। লেখক : কলামিস্ট

Bootstrap Image Preview