Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেলে মারা যাবো।’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২১, ১১:০৫ AM
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২১, ১১:০৫ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


সচরাচর সিলেটে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। বিয়ের দাবি নিয়ে দরোজায় দাঁড়িয়ে থাকে না কেউ। কিন্তু গতকাল সিলেট নগরীর কালীবাড়িতেও ঘটেছে এমন ঘটনা। হাতে নানা প্ল্যাকার্ড। একেক সময় একেক প্ল্যাকার্ড হাতে। বাসার গেইটে দাঁড়িয়ে আছে রেহেনা আক্তার নামের বোরকা পরা এক যুবতী। দুপুরের পর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা যুবতী রেহেনাকে নিয়ে নানা কৌতূহল এলাকায়। বিকালের মধ্যে জানাজানি হওয়ার পর এলাকার মানুষও আসেন দেখতে।

রেহেনার একটাই দাবি- ‘রুহিন তার স্বামী। ঘরে না তুললে সে সরবে না।’ খবর পেয়ে বিকালে সেখানে আসে পুলিশও। রেহেনাকে সরিয়ে নিতে পুলিশেরও নানা তোড়জোড়। কিন্তু রেহেনা কিছুই শুনছেন না। অবস্থান থেকেও নড়ছেন না। রেহেনা আক্তার, বয়স ৩৬ বছর। মধ্য বয়সী এক নারী। বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার শিদনা গ্রামে। তার পিতার নাম নুরুল ইসলাম। নগরীর কালীবাড়ি এলাকার বন্ধন ডি-নম্বর বাসার সামনে দুপুর থেকে বিয়ের দাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন রেহেনা আক্তার।

তার দাবি- ‘ওই বাসার ছেলে মিসবাহুজ্জামান রুহিন তার সঙ্গে প্রেম করেছে। বিয়ে করেছে। এখন স্ত্রীর মর্যাদা দিচ্ছে না। এ কারণে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বাসার সামনে। ঘরে না তোলা পর্যন্ত তিনি সেখান থেকে যাবেন না।’ হাতে যে প্ল্যাকার্ড রয়েছে সেটির একটিতে রয়েছে; ‘রুহিনের ঘরে যাবো, নইলে বিষ খাবো।’ অপরটিতে লেখা ছিল- ‘স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেলে মারা যাবো।’ রেহেনা বেগম জানিয়েছেন, সিলেটের কালীবাড়ি এলাকার ছেলে রুহিনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ফেসবুকের সূত্র ধরে এ সম্পর্ক তৈরি হয়। গত ৮ মাস আগে কোর্টের মাধ্যমে তারা দু’জন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সিলেট থেকে সকল কাগজপত্র ঠিক করে নারায়ণগঞ্জে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে রুহিন তাকে নারায়ণগঞ্জে একটি বাসায় রাখে।

ওই বাসাতে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করে। রুহিন সিলেটে থেকে কিছুদিন পর পর গিয়ে সেখানে থাকতেন। এভাবে ৭ মাস এক সঙ্গে সংসার করেন। কিন্তু গত আড়াই মাস ধরে রুহিন বদলে যায়। হঠাৎ করে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এমনকি মোবাইল ফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর থেকে রুহিনকে রেহেনা খুঁজে ফিরছেন বলে জানান। রেহেনা জানান, ‘কোনো কাবিননামা তার কাছে নেই। আর আদালতের মাধ্যমে বিয়ের যে এফিডেভিট করা হয়েছে সেটিও রুহিনের কাছে রয়েছে। সাক্ষী যারা ছিল তারাও রুহিনের মতো আড়ালে চলে গেছে। রুহিনের সঙ্গে তার প্রেম চলাচালীন সময় থেকে তার পরিবারের সবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। বিয়ের পরেও তিনি নিয়মিত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। বর্তমানে রুহিনের কথায় তার পরিবারও রেহেনাকে মেনে নিচ্ছে না। রেহেনার কাছে কাবিননামা না থাকলেও ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড ও মেসেজ আদান-প্রদানের প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি জানান। এদিকে, রুহিনের প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ার পর রেহেনা আক্তার নিজেই বাদী হয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৩৩৫/২০২১।

মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে রুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সিলেট নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রেহেনা নামের এক মহিলার রুহিনের সঙ্গে বিয়ের দাবি নিয়ে প্রথমে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে এসেছিলেন। এরপর আমার কাছেও আসেন। রেহেনা নিজেকে রুহিনের স্ত্রী দাবি করলেও তিনি বিয়ের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ কারণে আমরা সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধান করতে পারিনি। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি রুহিন ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তারা বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

যেহেতু আদালতে মামলা করা হয়েছে এখন আদালতই বিষয়টি দেখবে। কালীবাড়ি এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, গত শুক্রবারও বিয়ের দাবি নিয়ে রুহিনের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন ওই মহিলা। পরে এলাকার লোকজন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় দেন। শনিবার আবার এসে দাঁড়ায়। এ কারণে পুলিশ ডাকা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ওই এলাকায় অবস্থান করছিল বলে জানান তারা। সিলেটের জালালাবাদ থানার এসআই রফিক আহমদ জানিয়েছেন, রেহানার মামলা দায়েরের পর পিবিআই তাদের কাছে রুহিনের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য পত্র পাঠিয়েছিল। থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নাম-ঠিকানা যাচাই করে পাঠানো হয়েছে। রুহিনের বাসার সামনে রেহেনার দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে তিনি অবগত নন। টহল পুলিশ বিষয়টি শুনে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

Bootstrap Image Preview