Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘বাংলাদেশে প্রাণী অধিকারের সংগঠন আছে কিন্তু পুরুষদের জন্য কোন প্লাটফর্ম নেই’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৫৭ AM
আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০১:৪৫ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা নারী নির্যাতন পৃথিবীজুড়েই হয়। বাংলাদেশও হয়। দেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলাও আছে। দেশে নারী নির্যাতন দমন আইন আছে। পুরুষ নির্যাতনের বহু তথ্য থাকলেও এই অপরাধ দমনে আইন নেই। এ কারণে নারীদের দ্বারা পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা বাড়লেও প্রতিকার মেলে না। সমাজ কীভাবে যেন এই অপরাধ এড়িয়ে যায়।

বিশ্বব্যাপী লিঙ্গভিত্তিক সমতা, বালক ও পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং পুরুষের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য প্রতি বছরই ১৯ নভেম্বর বিভিন্ন দেশে পালিত হয় বিশ্ব পুরুষ দিবস। সেই  ধারাবাহিকতায় দেশের পুরুষদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন কাজ করে যাচ্ছে।

গণমাধ্যমের -এর সাথে আলাপকালে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ফারুক সাজেদ বলেন, নির্যাতিত পুরুষদের পরামর্শ ও আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা দিতে দেশে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ।

বাংলাদেশে পুরুষদের উপর নির্যাতন, বৈষম্যের ব্যাপারটি এখন বিরাট সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে সবার জন্য অধিকার আদায়ের সংগঠন আছে। যেমন নারীদের জন্য, শিশুদের জন্য, তৃতীয় লিঙ্গের জন্য, এমনকি প্রাণী অধিকার রক্ষার জন্যও আছে। কিন্তু পুরুষদের জন্য কোন প্লাটফর্ম নেই। বাংলাদেশে পুরুষ এখন এতটাই ভালনারেবল যে তার নামে একটি মামলা দিলে, একটা অভিযোগ করলে, সেটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। সত্য-মিথ্যা যাচাই করে না অনেকেই। পুরুষ নির্যাতন হলেও দেশের সমাজ তা এড়িয়ে যায়।

বেসরকারি সংগঠন এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষে এবারো দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে।

গণমাধ্যমের -এর সাথে আলাপকালে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, পুরুষের প্রতি দৃষ্টিকোণ পরিবর্তন করা উচিত। কারণ পুরুষও নির্যাতনের স্বীকার হয়। বাংলাদেশে ২০২১ সালের পুরুষ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: "নারী-পুরুষের লৈঙ্গিক সম্পর্ক উন্নয়ন।"

নাদিম আরও বলেন, সামাজিক চিন্তাভাবনা থেকে কেউ ভাবতেও পারে না যে একজন পুরুষও নির্যাতনের স্বীকার হতে পারে। আর এই সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা একজন পুরুষকে প্রথম গিল্টি ও অপরাধী মনে করি। এখান থেকেও তারা (পুরুষ) নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। আমরা এমনও দেখেছি যে পুরুষরা ব্ল্যামিং এবং শ্যামিং এর স্বীকারও হয়। মানে যে ভিক্টিম তাকে নিয়েই ট্রোল করা হয়। অথচ এটাই যদি বিপরীত লিঙ্গের সাথে করা হতো, তাহলে সমাজ কিন্তু এর বিরুদ্ধে একটা শক্ত অবস্থান নিতো। মেয়েদের পক্ষে আমরা আছি, তাদের পক্ষেও দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু পুরুষের প্রতি দৃষ্টিকোনটা আমরা পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। কারণ পুরুষও একজন মানুষ, তার প্রতিও সহিংসতা হতে পারে, হচ্ছে।

নাদিম বলেন, কত শতাংশ পুরুষ নির্যাতনের স্বীকার হয় সে ডাটা কালেকশনের কোন অরগানাইজেশন বাংলাদেশে নেই। আমরা ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, থানা থেকে ডাটা নিই। আমাদের কাছে প্রপার ডাটা এখনো তৈরি হয়নি। নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় থাকলেও পুরুষদের জন্য কোন মন্ত্রণালয় নেই। যে আইন আছে সেই আইনে ১০০% পুরুষই নির্যাতনের স্বীকার। 

পুরুষ নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে একমত পোষণ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিজা। তিনি বলেন, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকার সময় দেখেছি, অনেক পুরুষ নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। আমার ঘনিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাও এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।’

শিপা মনে করেন, নারীরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আলাদা দিবস পালন করছে, এ কারণে পুরুষদেরও এমন দিবস পালন করতে হবে বিষয়টি এমন হওয়া উচিত নয়। কোনো পুরুষ নির্যাতিত হলে তারও আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার থাকা উচিৎ।

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইউরোলজি বিভাগের অ্যান্ড্রলজি ইউনিট আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শিশুরা এসব শিখে তার বাবা ও পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কাছ থেকে। ছেলেসন্তান তথা পুরুষের পরিপূর্ণ উন্নয়নে যত্নবান হওয়ার জন্য এবং তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য দিবসটি পালন করছে বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউর অ্যান্ড্রলজি ইউনিট।

জানা যায়, পুরুষ দিবস পালনের প্রস্তাব প্রথম করা হয় ১৯৯৪ সালে। তবে দিবসটির ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে পালন করা হতো রেড আর্মি অ্যান্ড নেভি ডে। এই দিনটি পালন করা হতো মূলত পুরুষদের বীরত্ব আর ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে। ২০০২ সালে দিবসটির নামকরণ করা হয় ‘ডিফেন্ডার অফ দ্য ফাদারল্যান্ড ডে’। রাশিয়া, ইউক্রেনসহ তখনকার সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই দিবসটি পালন করা হতো।

কথিত আছে, ১৯২৩ সালে, অগণিত পুরুষ ৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মতো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনের দাবি তুলেছিল। সেই সময় পুরুষেরা ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনের জন্য নির্দিষ্ট করেছিল।  ১৯৬৮-তে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস একটি নিবন্ধে লেখেন, সোভিয়েত-রাশিয়ায় লিঙ্গবৈষম্য মারাত্মক। সেখানে নারী দিবস পালিত হলেও পুরুষ দিবসের কোনও অস্তিত্ব নেই। এরপরেই হ্যারিস পুরুষ দিবস পালনের দাবি জানান।

নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারিতে পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি, অংশগ্রহণও ছিল কম।

১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রথম আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়। ড. জেরোম তিলক সিং পুরুষদের অবদানের স্বীকৃতির দানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরে তা তার বাবার জন্মদিনে প্রথম বিশ্ব পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়। ধীরে ধীরে এভাবেই ১৯ নভেম্বর হয়ে ওঠে পুরুষদের দিবসে। পরে ১৯ নভেম্বর পুরো বিশ্বে পুরুষ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এখন প্রতি বছর বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে পালন করা হয় এ দিবসটি। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, ক্রোয়েশিয়া, জ্যামাইকা, কিউবা, স্কটল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মাল্টা, কানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, ইউক্রেন ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশে দিবসটি সেভাবে পালনের উদ্যোগ দেখা যায় না। 

সূত্র: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ/অধরা ইয়াসমিন

Bootstrap Image Preview