Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পদত্যাগ করতে যাচ্ছে বিএনপির সংসদ সদস্যরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৬:১৬ PM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৬:১৬ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি মানা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির সংসদ সদস্যরা। এ বিষয়ে সংসদকে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ সরকারের নেই।
  
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে দিনের কার্যসূচি শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন।  

সিরাজ বলেন, আমরা ছয়জন (বিএনপি দলীয়) এ সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, ‘এটা এ সংসদের জন্য অলংকার।’ আজকে তাই বলতে চাই, প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যিকার অর্থে অলংকার হয়ে থাকি, তাহলে এ সংসদ অলংকারবিহীন করবেন না। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত এমনও হতে পারে, ম্যাডাম যদি চরম অবস্থায় চলে যায়, তাহলে আমাদের এই সংসদে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না। এ সময় তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই, মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুয়েকদিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো হোক। নচেৎ কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার আওয়ামী লীগকে আজীবন বহন করতে হবে। 

এ সময় সংসদে হইচই করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। বুধবার (১৭ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন তিনি। 

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, জামিনের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ৪০১ ধারার দীর্ঘ বক্তব্য শুনেছি। গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। যা সব দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। 

সিরাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, রাগ বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কিন্তু গতকাল (বুধবার) ওনার বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। এটা কি সঠিক না বেঠিক?

বুধবার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য নির্বাহী ক্ষমতায় যা করার ছিল তা করেছি। বাকিটুকু আইনের ব্যাপার’। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নিজের ওপর হামলা-ষড়যন্ত্রের ঘটনাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এত বড় অমানবিক যে তাকেও আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি’।

এ সময় দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথাও সংসদকে জানান সিরাজ। 

বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, চিকিৎসার জন্য সংসদ নেতা বা আমরাও বিদেশে যাই। সেক্ষেত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না? এটা তার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তাই হবে। তাই করেন। সব ক্ষমতার মালিক তিনি।

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য বগুড়াসহ সারা দেশের মানুষ দোয়া করছেন। পোস্ট কোভিডের পরে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নেত্রীর পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। আমাদের দল থেকে বার বার আবেদন করা হচ্ছে। আমাদের আবেদন, অতি দ্রুত জামিন দিয়ে দুই-একদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসা জন্য ম্যাডামকে পাঠানো হোক।

এর আগে দলটির আরেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কিডনি, লিভার, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবতা দেখিয়েছেন। আরেকটু মানবতা আমরা প্রত্যাশা করি।

পরে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমি এটা নিয়ে পুনরায় কথা বলতে চাই না। আইন যা বলেছে সেই মতে, প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে জামিন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। ওনারা যদি দেখাতে পারেন। তাহলে আমরা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু ওনারা দেখাতে পারবেন না। আর বিবেচনার প্রশ্নও আসে না।

তিনি বলেন, ওনারা বলেছেন, আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মান পাঠিয়েছিলেন। সেটা কোন ধারায় হয়েছে জানি না। তখন সামরিক আইন ছিল। সেই ধারা তো ফৌজদারি কার্যবিধির সঙ্গে চলে না। ওনারা যথেচ্ছা করেছেন। আজ আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমরা যথেচ্ছা করতে পারি না। 

মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সঠিকভাবে করা হচ্ছে। সেই চিকিৎসায় সন্তুষ্ট কি অসন্তুষ্ট সেটা ওনাদের ব্যাপার। কিন্তু ৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়ে আবেদন করার সুযোগ নেই। ওনারা আমাকে যতখুশি গালি দিতে পারেন কিন্তু তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমি আইন মোতাবেক চলব।  

সিসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া: বিএনপি

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলে জানিয়েছে দলটি।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি এমন একটি পর্যায়ে রয়েছেন, যেখানে সুচিকিৎসা না হলে এমন অবস্থায় চলে যাবেন যে আর কোনো চিকিৎসা দিয়েই লাভ হবে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।’

১৩ নভেম্বর বিকেলে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে এভারকেয়ারে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় পরদিন ভোরে তাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার্থে দেশের বাইরে চিকিৎসা করানোর জন্য আবেদন করা হলেও সরকার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না বলে জানালেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন এর আগে কারোনা পরবর্তী জটিলতায় ৫৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পাঁচ বেগ রক্ত নিয়েছিলেন… উনার এই বয়সে এরকম কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই অবস্থা থেকে বের করে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। গত ১২ অক্টোবর নতুন উপসর্গ নিয়ে তিনি আবার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং তার একটি বায়োপসি করা হয়।

‘বাসায় চিকিৎসাকালীন আবার ১৩ নভেম্বর পুনরায় হাসপাতালে নেয়া হয়। দ্রুত ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দানের পাশাপাশি একটি এন্ডোস কপি করা হয়। বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়েও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই দেশে যা যা চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে সবটাই করা হয়েছে এবং হচ্ছে।’

খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিকল্প নেই জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘অতি দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। এটা আমাদের মেডিক্যাল বোর্ডে যারা রয়েছেন তারা বারবার বলে আসছেন এবং স্পষ্ট করে আমাদের বলেছেন ম্যাডাম এই মুহূর্তে এমন একটি অবস্থায় রয়েছেন, যেখানে সময় উপযোগী সুচিকিৎসা না পেলে এমন একটা পরিস্থিতিতে চলে যাবেন, তখন কোনো চিকিৎসা আর কাজে দেবে না।’

খালেদার অবস্থা ভালো নয় বলে বিএনপি থেকে বার বার বলা হচ্ছে। মানবিক স্বার্থে হলেও দলীয় প্রধানকে বিদেশে নিয়ে যেতে সরকারের অনুমতি চেয়ে যাচ্ছে দলটি। বিদেশে পাঠিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জীবন বাঁচাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

তবে এ বিষয়ে সরকার থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না। বরং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কয়েকবারই বলেছেন, খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সুযোগ না দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি না?’

তিনি বলেন, ‘আপনাকে কেউ যদি হত্যার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে?’

নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করিয়ে বাড়ি ফেরার সুযোগ করে দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরেও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার ব্যবস্থাটুকু… এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার হাতে যতটুকু আছে, সেটুকু দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’

এমন পরিস্থিতিতে খালেদাকে বিদেশ নিয়ে যেতে অনশনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে অনশনে বসবেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

Bootstrap Image Preview