Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

আকিবের মাথায় বিপদ চিহ্ন: হাড় নেই, চাপ দিবেন না

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০২:৫২ PM
আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১, ০২:৫২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঘটনায় গুরতর আহত দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহাদী জে আকিবকে (২১) লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মাহাদীর কথা শুনে কুমিল্লা থেকে ছুটে এসেছেন তার বাবা কুমিল্লা জেলা স্কুলের শিক্ষক গোলাম ফারুক মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আকিব খুব মেধাবী ছাত্র, আমার স্বপ্ন ছেলেকে ডাক্তার বানাব। কিন্তু ডাক্তার হতে এসে ছেলে এখন আইসিইউতে। মাহাদীর সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

তিনি বলেন, আল্লাহর মেহেরবানি ছাড়া আর কিছু বলার নেই। আমি দেশবাসীর কাছে আকিবের জন্য দোয়া চাই। যেন আমার ছেলে আকিব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে স্বাভাবিকভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। যা ঘটে গেছে, তা তো আর ফিরে আসবে না। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শাস্তি চাই। 

আকিব গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে। আর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। এরপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। 

আকিবের বাবা বলেন, আমি শুধু আকিবের অভিভাবক, আর কিছু না। দোষীদের বিষয়টা কলেজ কর্তৃপক্ষ দেখবে।  কলেজ কর্তৃপক্ষ যেভাবে ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন। এখানে তো আমার বলার ওপর কিছু নির্ভরে করে না।  কলেজ কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেন।

তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ হচ্ছে প্রফেশনাল লেখাপড়ার জায়গা। এখানে ছাত্ররা সবাই আসে পাঁচ বছর লেখাপড়া করে, সবাই পাশ করে ডাক্তার হওয়ার জন্য। পড়ালেখা করে ছেলে-মেয়েরা ডাক্তার হবে, এটাই সব মা-বাবার প্রত্যাশা। ছেলেরা এসে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় নিজেরাই মারামারি করে। রাজনৈতিক দলের দোষ আমি দেখব না। ছাত্ররা নিজেদের স্বার্থটাই বর করে দেখে। গ্রুপিং করে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। আমি সকল ছাত্রদের আহ্বান জানাব, তারা যেন কেউ আর এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে। সব মায়ের কোল থেকে এসে পড়ালেখা করে আবার যেন মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারে।

রোববার দুপুরে আকিবকে আইসিইউতে দেখতে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও চমেক হাসপাতালের পরিচালক। তার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সাত সদস্যের মেডিকোল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবির।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবির বলেন, আকিবের অবস্থা গতকালের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আকিবের চিকিৎসার জন্য সার্জারি, নিউরো সার্জারি, মেডিসিনসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তারাই আকিবের চিকিৎসা দেবেন। 

তিনি বলেন, লাইফ সাপোর্টে রেখেই আকিবকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা উন্নতির দিকে। আরও উন্নতি হলে আজকেই লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. শাহেনা আক্তার বলেন, গতকাল আকিবের মাথায় একটি অপারেশন করা হয়েছে। মাথায় রক্তের চাকা জমে গিয়েছিল। অপারেশন করে তা বের করা হয়েছে। তার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য বর্তমানে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। আরও দুয়েক দিন পরে তার শরীরের অবস্থাটা ভালো করে বুঝা যাবে। তবে ৪৮ ঘণ্টার আগে কোনো কিছু বলা যাবে না।

সংঘর্ষের ঘটনার পর আপনাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী- জানাতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ বলেন, ঘটনাটি কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে হয়েছে। প্রচলিত আইনে মামলা হয়েছে। আইনগতভাবে মামলা চলবে। এছাড়া কলেজ প্রশাসন থেকে আমরা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। তারাও কাজ শুরু করেছেন। তদন্তে যারা অপরাধী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। 

এদিকে, হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আসামি রক্তিম দে ও এনামুল হক সীমান্ত নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই দুইজনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ছাত্রাবাসের ঘটনার প্রেক্ষিতেই শনিবার আকিবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপরই শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলছে। আশা করি অন্য আসামিরাও গ্রেফতার হবে। মূলত আধিপত্য বিস্তার নিয়েই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও বলেন, আজকেও কলেজ ক্যাম্পাসে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহিরাগত কেউ হামলায় জড়িত আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে এটা বলা যাবে।

শুক্রবার রাত ও  শনিবার চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারিতে আহত হয়েছেন মাহফুজুল হক (২৩), নাইমুল ইসলাম (২০) ও মাহাদি জে আকিব (২০)। এর মধ্যে দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আকিবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাঁচলাইশ থানার ডিউটি অফিসার এসআই সোহেল রানা। তিনি বলেন, সংঘর্ষে আকিব নামে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। 

মামলার আসামিরা হলেন- সাদ মোহাম্মদ গালিব (২১), আহসানুল কবির রুমন (২১), জাহিদুল ইসলাম জিসান (২১), মাহাদি বিন হাশিম (২৪), আসিফ বিন তাকি (২৫), ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী (২১), মাহতাব উদ্দিন রাফি (২১), জাহিদুল আলম জিসান (২১), সৌরভ ব্যাপারী (২১), মো. আনিস (২১), রক্তিম দে (২১), এইচ এম আসহাব উদ্দিন (২১), তানভীর ইসলাম (২১), নাজমুস সাদাত আসিফ (২১), এনামুল হাসান সীমান্ত (২১) ও রিজওয়ান আহমেদ (২১)। 

চমেক সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে জড়ানো একটি পক্ষ চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও আরেকটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়। আহত আকিব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয় বলে জানা গেছে। 

Bootstrap Image Preview