Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘পূজামণ্ডপে পাওয়া কোরআন শরীফটি বাংলাদেশের নয়’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২১, ১১:১২ AM
আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২১, ১১:১২ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দীঘিরপাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে রাখা কোরআন শরীফটি বাংলাদেশের নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছাপা, কাগজ ও ক্যালিগ্রাফির কাজ থেকে আপাতদৃষ্টিতে এটি সৌদি আরবে ছাপা বলে মনে করছে পুলিশ। কোরআন শরীফটি ঘটনার আগের রাতেই আনা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা।

ঘটনার পর বুধবার দুপুরে কুমিল্লা পুলিশ গাঢ় সবুজ রংয়ের কোরআন শরীফটি নিয়ে যায়। এটি এখন মামলার আলামত হিসেবে কোতোয়ালী থানায় জিম্মায় আছে।

পুলিশ এখন কোরআনটির পাতায় ও ওপরে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে সন্দেহভাজন আসামিদের হাতের ছাপ মিলিয়ে দেখছে।

পুলিশ জানিয়েছে, রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা হয়। সে সময়ই সরিয়ে নেওয়া হয় হনুমানের হাতে থাকা গদা। গদা নিয়ে চলে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ।  

ফুটেজে দেখা গেছে, রাত দুইটা ১০ মিনিটে দারোগাবাড়ির মসজিদ থেকে কিছু একটা হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন এক যুবক। তার গতিবিধি সন্দেহজনক।

এর এক ঘণ্টা ২ মিনিট পর আরেকটা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুমিল্লার নানুয়াদীঘি অস্থায়ী মণ্ডপের উত্তর-পূর্বদিকের রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন ওই ব্যক্তি। তার কাঁধে ছিল হনুমানের হাতে থাকা গদা। পুলিশ, পূজামণ্ডপ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক ঘটনাটি ঘটে।

এদিকে কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনায় আলোচিত ইকবাল হোসেন সন্দেহে কক্সবাজার থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে রাতেই ওই ব্যক্তিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. রফিকুল ইসলাম  জানিয়েছেন।

কুমিল্লার ঘটনায় দুদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে ইকবাল হোসেনের নামটি উচ্চারিত হচ্ছিল। কুমিল্লা শহরের নানুয়ার দীঘিরপাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপ ও শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.) মাজার মসজিদের আশপাশে থাকা বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে শনাক্ত করা হয় বলে দাবি পুলিশের।

গতকাল রাতে কক্সবাজার পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাতে সমুদ্রসৈকত এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরির সময় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাতেই তাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে ধরে নিতে পারেন আমরা সেই ইকবালকেই আটক করতে সক্ষম হয়েছি।’

এদিকে কুমিল্লার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন জায়গায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় করা আটটি মামলায় ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত ইকবাল হোসেন একজন ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীন ও মাদকাসক্ত।

তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, যে ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন, ভবঘুরে ও মাদকাসক্ত তিনি কেন পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে আসবেন। কী তার উদ্দেশ্য?

গতকাল সন্ধ্যার পর কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ টেলিফোনে বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজে থাকা ব্যক্তিই ইকবাল হোসেন। তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ইতিমধ্যে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল কুমিল্লা আওয়ামী লীগ কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ সম্মানের সঙ্গে যুগের পর যুগ বসবাস করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ রক্ত দিয়েছে। পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় অপরাধী যে-ই হোক না কেন, তার বিচার করা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার পেছনে অনেকেই জড়িত। অভিজ্ঞ টিমের সহায়তায়, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে একজনকে ধরা সম্ভব হয়েছে। সে একা এ কাজ করেনি। কার নির্দেশ ও প্ররোচনায় এই কাজ করেছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি (ইকবাল) মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। তাই তাকে ধরতে সময় লাগছে।’

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়াদিঘির পাড়ের ঘটনার জের ধরে দেশের কয়েকটি জায়গায় হিন্দুদের মন্দির, বাড়িঘর ও পূজামণ্ডপে হামলা হয়। ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, ম-প ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুজন নিহত হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ৭১টি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাড়ে ৪০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে।

এদিকে গতকাল দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি বেলালুর রহমানের নেতৃত্বে কুমিল্লা জেলার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটির বৈঠক হয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে হিন্দুদের নিরাপত্তা দেওয়াসহ হামলায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়া হয়।

গতকাল সন্ধায় তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য ওই এলাকার মসজিদ ও পূজামণ্ডপের আশপাশে থাকা একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরার ১২টি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে মসজিদের বারান্দায় আরও তিনজন ব্যক্তির উপস্থিতি মিলেছে। তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া আরও একাধিক ফুটেজে যে ব্যক্তিকে ইকবাল নামে শনাক্ত করা হয়েছে তাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার দু-তিন দিন আগেই স্থানীয় সংবাদকর্মীদের হাতে সিটিটিভি ফুটেজ চলে আসে। তার পরপরই ইকবালকে নিয়ে কানাঘুষা চলতে থাকে বিভিন্ন মাধ্যমে। স্থানীয় সাংবাদিকরাও তার পরিচয় জানার চেষ্টা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাাহিনীর দ্বারস্থ হন তারা। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিসিটিভি ফুটেজে থাকা ব্যক্তিকে ইকবাল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে তা স্বীকার করেননি। কার আগে কে সংবাদ প্রকাশ করবে, সেই প্রতিযোগিতা থেকে ইকবালের নাম প্রকাশ্যে আসে।

কে এই ইকবাল হোসেন : পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত হওয়ার পরই ইকবাল হোসেনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যানুযায়ী, ইকবালের বাড়ি কুমিল্লা পৌরসভার সুজানগরের দ্বিতীয় মুরাদপুরের বকশীনগর গ্রামে। বাবার নাম নূর আহাম্মদ আলম ও মায়ের নাম আমেনা বিবি। কখনো মসজিদ আবার কখনো মাজারের খাদেম ছিলেন তিনি। রাজমিস্ত্রি, নির্মাণশ্রমিক থেকে শুরু করে বাসের হেলপারের কাজও করেছেন।

কুমিল্লা সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে ইকবাল একজন ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। তার পেছনে নিশ্চিত অনেক ব্যক্তি রয়েছে, যাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাও আছে। মাদকেও আসক্তি আছে। তার বাবা মাছের ব্যবসা করেন। পুলিশের একাধিক সংস্থার তদন্তে ও সিটিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করেই তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।’

ইকবালকে নিয়ে রহস্য : সিসিটিভি ফুটেজে থাকা ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি ইকবালের মা আমেনা বিবি। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার বয়স হয়েছে, ছবি ঝাপসা থাকায় তিনি ছেলেকে চিনতে পারেননি। তবে ইকবালের ছোট ভাই রায়হান পুলিশকে বলেছেন, গেঞ্জিটি তার ভাইয়ের মনে হয়েছে। এরপরই রায়হান ও তার বাবা নূর আহাম্মদ আলমকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। তাদের মাধ্যমেই ইকবালকে ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান নামেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রকাশিত ফুটেজে ক্যামেরাটি যেখানে মুভ করছিল সেটি শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী (রহ.)-এর মাজারসংলগ্ন একটি বাড়ির। একজন মাছচাষি তার পুকুরের নিরাপত্তার জন্য ওই মুভিং ক্যামেরাটি লাগিয়েছিলেন। ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরাটি ঘুরতে পারে। তবে ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের ফুটেজ প্রকাশ হয়েছে। বাকি ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের ফুটেজ পুলিশের কাছে রয়েছে, যেটি প্রকাশ হয়নি। সেই ফুটেজে একজন ব্যক্তিকে রাস্তার উত্তরপাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে, যাকে ইকবাল হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

স্থানীয়রা আরও বলছেন, ইকবালের বাবা নূর আলম একজন ভাসমান মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী। যে মৌসুমে যে ধরনের ফল পাওয়া যায়, তাই তিনি ভ্যানে করে বিক্রি করে থাকেন। তবে সম্প্রতি ইকবালকে তারা এলাকায় দেখেননি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইকবাল বড়। তার ছোট ভাই রায়হান রংমিস্ত্রির কাজ করেন। বর্তমানে নূর আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা নগরের সুজানগরের রবীন্দ্র চন্দ্র সূত্রধরের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। যদিও গত দুই মাসের ভাড়া বাকি রয়েছে বলে বাড়ির মালিক জানিয়েছেন। রবীন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর জানান, তিনি ইকবালকে চেনেন না। তবে ইকবালের পরিবারের লোকজনকে খারাপ মনে হয়নি তার কাছে।

ইকবালের বোন ফারজানা। তিনি একসময় কসমেটিকস কারবারি ছিলেন। ইকবালকে মানসিক ভারসাম্যহীন উল্লেখ করে ফারজানা বলেন, সে ছোটবেলা থেকেই উচ্ছৃঙ্খল ছিল। খেলতে গিয়েও মারামারি করত। চুরির অপবাদে গণপিটুনির শিকারও হয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী চলে যাওয়ায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছে। কখনো মাজারে সময় কাটিয়েছে, কখনো মসজিদে থেকেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মসজিদের কমিটির একজন জানান, পূজামণ্ডপ থেকে যে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি ছিল নতুন। এ ধরনের নতুন কোরআন তাদের মসজিদে নেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ইকবালকে কয়েক দফায় মসজিদে ঢুকতে ও বের হতে দেখা গেছে। রাত ২টা ১৫ মিনিটে সর্বশেষ তাকে ওই মসজিদ থেকেই বের হতে দেখা গেছে।

মাজারগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে : গতকাল রাতে আটকের আগে বিকেলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, ইকবালকে গ্রেপ্তার করার জন্য কুমিল্লা, সিলেট, আখাউড়া ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাজারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তার কাছে কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস কিংবা মোবাইল ফোন না থাকায় ম্যানুয়ালি সোর্স লাগানো হয়েছে। ইকবালের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

চাঁদপুরে ১০ মামলায় আসামি ৪ হাজার, ২৯ জন কারাগারে : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ২৯ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ ইব্রাহীম খলিল জানান, মন্দিরে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০০ থেকে ২২০০ জনকে আসামি করে দুটি করে মামলা হয়। গত কয়েক দিনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা আরও আটটি মামলা করেন। প্রতিটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় গ্রেপ্তার ২৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পীরগঞ্জে এক কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা, হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে : ফেইসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের দুই সহযোগী আল আমিন ও উজ্জ্বল গত বুধবার রাতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফজলে এলাহী খানের আদালতে জবানবন্দি দেয় তারা।

এর আগে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওই কিশোরকে আসামি করে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়। এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এছাড়া হিন্দুপাড়ায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার ৪৩ জনের মধ্যে ৩৭ জনকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২-এর বিচারক ফজলে এলাহী খান তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, দুটি মামলার মধ্যে একটি মামলা হয়েছে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনায়। এই মামলায় ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাদ্দাম হোসেন জানান, সোমবার রাতে ওই কিশোরকে জয়পুরহাট থেকে আটক করা হয়। ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে মাঝিপাড়ার বিভিন্ন ঘরবাড়িতে আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা। হামলাকারীরা ১৮টি ঘর ও ২টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে। বাকি ৪৮টি বাড়িতে ভাঙচুরসহ ৬৬টি পরিবারের গবাদিপশু, স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজ, অটোভ্যান, রেডিওসহ ঘরের ব্যবহৃত ও দামি জিনিসপত্র লুট করে।

এদিকে গত বুধবার পীরগঞ্জের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ছানোয়ার হোসেন তালুকদার। তারা হামলা ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

Bootstrap Image Preview