Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তিস্তার পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত: লালমনিরহাটের সঙ্গে নীলফামারী যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২১, ০১:২৬ PM
আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১, ০১:৩২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


কান্না থামছে না তিস্তা পাড়ের মানুষের। নদীর দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছাড়ছেন আর বুক চাপড়াচ্ছেন সর্বস্ব হারানো অসহায় মানুষগুলো। এবার সর্বগ্রাসী তিস্তার গেট খুলে পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারাজের সড়কের ‌'ফ্লাট বাইপাস' ভেঙে গেছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে ফ্লাট বাইপাস ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সঙ্গে নীলফামারী জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বুধবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) আব্দুল্লাহ আল মামুন।

স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করলে তিস্তা ব্যারাজের কয়েকটি গেট বন্ধ করে দেয়। পরে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস সড়কের ওপর দিয়ে পানি চলাচল করলে সেটি ভেঙে যায়। তিস্তার পানিবৃদ্ধির ফলে হাটখোলা সড়কের পাশে পানি আসা শুরু করেছে। এ ছাড়া হাতীবান্ধা থেকে বড়খাতার বাইপাস সড়কের তালেব মোড় এলাকার সড়কটিতে পানি ছুঁইছুঁই করছে। এ ভাঙনের ফলে এরই মধ্যে ওই এলাকার ২০০টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

বন্যার পানি হাতীবান্ধা শহরসহ লোকালয়ে প্রবেশ করায় জেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিস্তা পাড়ের লোকজন নিজ নিজ অবস্থান থেকে বালুর বস্তা দিয়ে পানি আটকে রাখার চেষ্টা করলেও বস্তার সংকটে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

এদিকে বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টার পর থেকে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারীসহ ১০টি ইউনিয়ন এলাকার ২২টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ। চরাঞ্চলের এসব বাড়িঘরে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি উঠেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৪০০ পরিবারের ঘরবাড়ি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়া হয়ে। পানি বাড়ায় ভারতের তিস্তার দোমহনী পয়েন্টে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।

কালিগঞ্জে গ্রোয়েন বাঁধ ভাঙনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিমলা উপজেলার ১০ নং পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, তিস্তা নদীর উভয় তীরের বাঁধে কোনো সমস্যা হয়নি। গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। প্রায় ৪০০ পরিবারের ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর ইসলাম বলেন, আমরা মাইকিং করে ছাতুনামা, কেল্লাবাড়ী ও ভেন্ডাবাড়ি চরের মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারা পাউবোর নদী শাসন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। তিস্তা বাজার, তেলিরবাজার, দোলাপাড়া, চরখড়িবাড়ি এলাকা তলিয়ে গেছে। চরের ফসলের জমি সব পানির নিচে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষজন গবাদিপশুসহ নিরাপদে সরে গেছে।

খালিশাচাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কার্তিক মাসের এমন হঠাৎ বন্যা এলাকাবাসীকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এলাকার ছোটখাতা, বাইশপুকুর, সুপারীপাড়া গ্রাম এখন নদীতে পরিণত হয়েছে।

তিস্তাপাড়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিস্তা নদীর ভয়ংকর রূপ আর গর্জনে পানিবন্দি লোকজনের চোখে ঘুম নেই। তারা এখন বিশুদ্ধ পানি ও খাবার-সংকটে ভুগছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের তালিকা করে ত্রাণ দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। তবে এবার ত্রাণ দিতে কোনো সমস্যা হবে না।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী (পাউবো) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পানি বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ভারত থেকে পানি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বেড়ে যায়। এদিকে পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ব্যারাজ এলাকা ও ফ্লাট বাইপাসটি ভেঙে গেছে। মাইকিং করে স্থানীয়দের সরে যেতে বলা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview