Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

জ্বলে উঠা বাংলাদেশ প্রমাণ করল ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২১, ১২:০৯ AM
আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১, ১২:১০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, অপ্রত্যাশিত ফল লাভের খেলা- এটি আমরা প্রায় ভুলেই থাকি। হঠাৎ কোন ক্রিকেটযুদ্ধ দেখে আমাদের এই আপ্তবাক্যটি মনে পড়ে যায়। সাধারণত হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দর্শকরা টান টান উত্তেজনায় থাকেন, কে জেতে কে হারে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। পেন্ডুলামের মতো দুই দলের দিকেই ক্ষণে ক্ষণে ঝুঁকতে থাকে ম্যাচের ভাগ্য। কিন্তু হারতে হারতে কোন দল যদি জিতে যায়, কিংবা জেতা ম্যাচটাই কোন দল যদি অভাবিতভাবে হেরে যায়, তখন আমরা নড়েচড়ে বসি এবং ক্রিকেটের সৌন্দর্য ও শক্তির কথা উচ্চারণ করি। এখানেই ক্রিকেটের ম্যাজিক। কেউ জ্বলে উঠতে পারেন অপ্রত্যাশিতভাবে। আর তারই কল্যাণে ম্যাচের ভাগ্যও পুরো ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যায়। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলটিকে মনে হচ্ছিল কেমন যেন খুব অচেনা। তবে সেই অচেনা ভাব কাটিয়ে উঠতে খুব বেশি সময় নেয়নি টাইগাররা। সাইফউদ্দিন, সাকিব আল হাসান এবং শেখ মেহেদী হাসান ওমানের বিরুদ্ধে বোলিংয়ে আসতেই দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে যায়। ওমানের হাত থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিমিষেই নিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন বোলাররা এবং সব ভয় আর আতঙ্ককে পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে এনে দিলেন ২৬ রানের অসাধারণ এক জয়। এই জয়ে বিশ্বকাপে টিকে থাকলো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৪ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত শুরু করে ওমান। নিজেদের ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মুস্তাফিজের করা প্রথম বলটি উড়িয়ে বাউন্ডারির বাইরে মারতে চেয়েছিলেন ওমানের ওপেনার যতিন্দর সিং, তবে ব্যাটে-বলে ভালো সংযোগ হয়নি। উড়তে থাকা বলটি দৌড়ে এসে তালুবন্দি করার চেষ্টা করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু বলটি ফসকে হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায়। মাথা নিচু করে লুটিয়ে পড়েন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এটিই হতে পারতো বাংলাদেশ দলের প্রতীকী ছবি। তবে এ যাত্রায় কোনরকম প্রাণের সঞ্চার বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে আগেই একটি পা দিয়ে রেখেছে স্কটল্যান্ড। প্রথম পর্বের ‘বি’ গ্রুপ থেকে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত তাদের। আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশকে হারাতে পারলে স্কটল্যান্ডকে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের টিকিট কাটবে ওমান। বাংলাদেশের মিশন টুর্নামেন্টে টিকে থাকার। সেজন্য আজ ওমানকে যেকোনো মূল্যে হারাতে হবে।

দিনের শুরুতে জটিল সমীকরণ মেলাতে একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিলো টাইগাররা। তবে ঘোর অমানিশা হয়ে নেমে আসা ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে কিছুতেই বের হতে পারছে না টাইগাররা। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নুরুল হাসান সোহানরা যেন ব্যাটিং করতেই ভুলে গেছেন! ওমানের বোলারদের বিপক্ষে প্রাণপণ লড়ে নাঈম শেখের ৬৪ রানের ইনিংসের কল্যাণে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সংগ্রহ ১৫৩ রান। বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে এই রানের মধ্যে আটকাতে হবে স্বাগতিক ওমানকে।

বাংলাদেশের ১৫৩ রানের পুঁজির জন্য নাঈম শেখদের উচিৎ ওমানের ফিল্ডারদের ‘ধন্যবাদ' দেওয়া। একাধিক ক্যাচ ফেলে প্রতিপক্ষকে এই সংগ্রহ পাইয়ে দিতে সাহায্য করেন কাশাপ প্রজাপতি, যতিন্দর সিংরা। ক্যাচের সঙ্গে গ্রাউন্ডস ফিল্ডিংও ছিল ছন্নছাড়া। তবে দাপট দেখিয়েছেন বোলাররা। কলিমুল্লাহ, বিলাল খানরা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে হয়ে ওঠেন ‘অপ্রতিরোধ্য’। নিখুঁত লাইন-লেংথ আর সুইংয়ে কখনো যেন লাসিথ মালিঙ্গা আর কখনো মিচেল স্টার্কের রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তারা।

টস জিতে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটিতে বোধহয় খুশি হতে পারেননি দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাঈম শেখ। তাদের ব্যাটিংয়ের কৌশল দেখে অন্তত সেটিই ধারণা করা গেল। বাঁচা-মরার ম্যাচে প্রথম ২ ওভারে ৮টি বলই ডট। দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে তুলতে পারলেন ৬ রান। তৃতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ৪ রানে জীবন পেলেন লিটন, তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন কাশাপ। কিন্তু সাজঘরে ফেরার বোধহয় তাড়া ছিল লিটনের। পরেই বলেই আউট হলেন ৪ রান করে।

নাঈমকে নিয়েও আলোচনা দীর্ঘদিনের। পায়ের নিচের মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পাননি নাঈম, আজ ফিরেছেন সৌম্য সরকারের পরিবর্তে। সুযোগ পেয়ে শুরুতে ভালোকিছু দেখাতে পারেননি। নড়বড়ে ব্যাটিং করে গেছেন মন্থর স্ট্রাইক রেটে। ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৭ ও ২৬ রানে। তখনও রানের চেয়ে বল বেশি খেলে ফেলেছিলেন তিনি। তবে ওমানের ফিল্ডাররা সহজ দুটি ক্যাচ নিতে পারেননি।

ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করে শেখ মেহেদীকে ৩ নম্বরে নিয়ে আসে ম্যানেজমেন্ট। আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি মেহেদী। ফায়াজ বাটকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে দেরেন শূন্য হাতে। সাকিব আল হাসান ৪ নম্বরে নেমে অস্বস্তিতে ভুগেছেন অনেকক্ষণ। তবে সময়ের সঙ্গে খোলস ছেড়ে বের হন সাকিব। ততক্ষণে নাঈমের ব্যাটেও ফেরে স্বস্তি। দলীয় ২১ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারে তুলতে পারে ২৯ রান। 

এরপর সুযোগ পেয়ে বড় জুটি গড়েন সাকিব আর নাঈম। দুজনেই ছুটছিলেন অর্ধশতকের দিকে। কিন্তু ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে সাকিব রান আউটের শিকার হন। ফেরেন ৪২ রানের ইনিংস খেলে। ২৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। সাকিব না পারলেও ধীরগতির ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক তুলে নেন নাঈম। তার ফিফটি আসে ৪৩ বলে। যা একেবারেই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়। 

সাকিবের বিদায়ের পর নুরুল হাসান সোহান নেমেছিলেন ব্যাটিংয়ে। সুবিধা করতে পারেননি একেবারেই। জেসান মাকসুদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন ৩ রান করে। তবুও ব্যাট হাতে দেখা যায়নি মুশফিকুর রহিমকে। আফিফ হোসেনের উপর আস্থা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। হতাশ করেন তিনিও। ৫ বল খেলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নে আফিফ।

তৃতীয়বার যখন ক্যাচ তুললেন নাঈম, সেবার আর সুযোগ মেলেনি। থেমে যায় তার ৬৪ রানের ইনিংস। ৫০ বলে খেলে ৩টি চার ও ৪টি ছয় মারেন এই বাঁহাতি তরুণ। ১৯ বলের ব্যবধানে দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে রান তোলার গতিতে ভাটা পড়ে বাংলাদেশের। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নামা মুশফিকুর রহিম এ ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি। খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৬ রান করে। পরের বলেই বিদায় নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।

শেষদিকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১০ বলে ১৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে লড়াই করার মতো পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে টাইগারদের ইনিংস থামে ১৫৩ রানে। জয়ের জন্য ওমানের প্রয়োজন ১৫৪ রান। ওমানের হয়ে ফায়াজ বাট সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন।

Bootstrap Image Preview