Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রংপুরে রাতের আঁধারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০ বাড়িতে আগুন; ফেনী ও নোয়াখালীতে নিরাপত্তা জোরদার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০২:৪২ AM
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০২:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের বাটের হাট নামক এলাকায় রোববার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

হামলাকারীরা ১৫ থেকে ২০টি বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ডি) সার্কেল কামরুজ্জামান বলেন, ‘এক হিন্দু যুবক ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট দিয়েছেন- এমন অভিযোগের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ওই যুবকের বাড়িটি প্রটেক্ট করতে পারলেও বেশ কিছু দূরে ১৫-২০টি বাড়িঘরে আগুন দেয় উত্তেজিতরা।’

তিনি রাত পৌনে ১২টার দিকে জানান, এখন পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

স্থানীয় রানা নামে একজন বলেন, ‘পুলিশ অনেক চেষ্টা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এই অগ্নিসংযোগের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

ফেনী ও নোয়াখালীতে নিরাপত্তা জোরদার

মন্দির-দোকানপাটে হামলার ঘটনার পর নোয়াখালী ও ফেনীতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মন্দিরগুলোতে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ।

দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের দোকানে হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের মানববন্ধন চলাকালে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে ফেনীতে সংঘর্ষ হয়। পরে সেখানে একটি মন্দির ও একটি আশ্রমে এবং বেশ কিছু দোকানে হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে গত শুক্রবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে মন্দির ও দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। ওই ঘটনায় মারা গেছেন দুজন।

গতকাল ফেনী শহরের ট্রাংক রোড ও তাকিয়া রোডের মোড়ে শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের সামনে পুলিশের পাহারা দেখা যায়। ফেনীর বড় বাজারের কালীমন্দির, জগন্নাথবাড়ি মন্দির, বাঁশপাড়া মন্দিরসহ শহরের সব মন্দিরের সামনেই পুলিশের পাহারা দেখা গেছে।

গত শনিবার হামলা হয়েছিল শহরতলির কালীপাল গাজীগঞ্জ মহাপ্রভুর আশ্রম ও দুর্গামন্দিরে। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি গাড়ির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। মন্দিরের বাইরের সিসি ক্যামেরাগুলো ভাঙা। সেখানে দুটি জানালা আংশিক ও প্লাস্টিকের কিছু চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

শহরের তাকিয়া রোডে একসঙ্গে ছয়টি দোকানের শাটার ভাঙা দেখা যায়। চন্দন রাইসের মালিক চন্দ্রনাথ সাহা অভিযোগ করেন, তাঁর দোকানের শাটার ভেঙে বেশ কিছু মালামাল বাইরে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তাঁর দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা প্রায় দুই লাখ টাকা লুট করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। একই সড়কে ১০টি শুঁটকির দোকানের শাটারও ভাঙা দেখা গেছে। শহরের গোপালপট্টির সূর্য পালের খাদ্যশস্যের আড়তের মালিক সূর্য পালের ছেলে বিশংকর পাল অভিযোগ করেন, দুর্বৃত্তরা ক্যাশ বাক্স ভেঙে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লুটে নিয়ে গেছে। এ ছাড়া একটি ওজন পরিমাপের যন্ত্র ও একটি বস্তা সেলাইয়ের যন্ত্র লুট হয়েছে।

গতকাল সকালে ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী ফেনীর বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন। র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এস এম ইউছুফও মন্দির পরিদর্শন করেন।

দুটি মন্দির ও বেশ কয়েকটি দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মডেল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ফেনী মডেল থানার দুজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। একটি মামলায় ২০০ থেকে ২৫০ জন এবং অপর একটি মামলায় ১০০ থেকে ১৫০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনির হোসেন বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আসামি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে।

ফেনীতে শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে র‍্যাব। গতকাল সদর থানা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন আহনাফ তৌসিফ মাহবুব লাবিব, আবদুস সালাম জুনায়েদ ও ফয়সাল আহমেদ আল আমিন। র‍্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক ইমরান খান প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক ‘নাশকতা’ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল সকালে চৌমুহনীর ব্যাংক রোডের রাধামাধব জিওর মন্দির ও রামঠাকুরের আশ্রম ঘুরে দেখা যায়, পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা সতর্ক পাহারায় রয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য মন্দিরের সামনে এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন আছে। বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্যরাও টহলে আছেন।

গতকাল দেখা যায়, দুই দিন আগে হামলা-ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো এখনো বন্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাম ঠাকুরের আশ্রম এলাকার একজন ব্যবসায়ী বলেন, অনেকে এখনো আতঙ্কিত, তাই দোকান খুলছেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহার বলেন, চৌমুহনীর সার্বিক পরিস্থিতি এখন শান্ত। মন্দিরের সামনে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে শুক্রবারের হামলার ঘটনায় দুজন ইসকন–ভক্তের মৃত্যুর ঘটনায় গত শনিবার রাত পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।

Bootstrap Image Preview