Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ মঙ্গলবার, মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্কটল্যান্ডের কাছে নির্ধারিতই ছিলো বাংলাদেশের পরাজয়!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০১:৪৭ AM
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০১:৫০ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


লক্ষ্য ১৪১ রানের। আল আমেরাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আগের ম্যাচটি অর্থাৎ পাপুয়া নিউগিনি ও স্বাগতিক ওমানের মধ্যকার ম্যাচটি যারা দেখেছেন, তারা স্কটল্যান্ডের ইনিংস শেষে সহসাই অনুমান করে নেওয়ার কথা, তুলনামূলক দুর্বল স্কটিশদের বিপক্ষে জয় পেতে বেগ পেতে হবে না বাংলাদেশ দলকে। তবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও সমীকরণ মেলাতে পারল না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৩৪ রানে থামে ইনিংস। এতে বাংলাদেশ ম্যাচ হারল ৬ রানের ব্যবধানে।

মাঝারি লক্ষ্য টপকাতে নেমে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি আবারও ছন্নছাড়া। যে নাঈম শেখকে নিয়ে গর্ব করেন অধিনায়ক ও কোচ, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ব্যাটিংয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশ সেরা ব্যাটসম্যান এই তরুণ, তাকে বাইরে রেখে একাদশ সাজিয়েও লাভ হলো না। স্কটল্যান্ডকে জাবাব দিতে লিটন দাসের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন সৌম্য সরকার। ব্যাট হাতে ৫ রান করেই নিজের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন সৌম্য। লিটনের ব্যাট থেকেও আসে ৫ রান। দুজনই আউট হন উড়িয়ে মারতে গিয়ে।

শুধু ওপেনিংয়েই নয়, ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে রান খরা দীর্ঘদিন ধরে। সেটি প্রকট আকার ধারণ করল সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। অনেকটা টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে বিপদ বাড়াচ্ছিলেন দুজন। ৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের নামের পাশে মোটে ২৮ রান। তখন বৃত্ত ভাঙতে চাইলেন মুশফিক। ইনিংসের নবম ওভারে টানা দুই ছক্কা হাঁকিয়ে সে ওভার থেকে আদায় করেন ১৮ রান।

সাকিব অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। ২৮ বলে খেলেন ২০ রানের ইনিংস। মুশফিক বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে গিয়ে আউট হন ৩৮ রান করে। ৩৬ বলে ইনিংসটি সাজান ১টি চার ও ২টি ছয়ের মারে। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আবার বিপদে টাইগাররা। এবার দলের ত্রাতা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। শেষ ৬ ওভারে জয়ের জন্য তাদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬১।

ওভার প্রতি ১০ রান করে তুলতে গিয়ে গলদঘর্ম অবস্থা। আফিফ আউট হন ১২ বলে ১৮ রান করে। ১৫ বলে জয়ের জন্য বাকি ৩৫ রান। নতুন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান যখন বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, তখন কার্যত শেষ হয়েছে বাংলাদেশ দলের জয়ের স্বপ্ন। মাহমুদউল্লাহ শেষ চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি তাতে। অধিনায়ক ২২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নিলে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ দলের ইনিংস। এতে ৬ রানের হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হলো টাইগারদের।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান স্কটিশ অধিনায়ক কাইল কোয়েটজার। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দুর্দান্ত এক ইয়ার্কারে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে শেখ মেহেদী হাসানকে আক্রমণে নিয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বোলিংয়ে এসে মেহেদীর জোড়া আঘাত। শিকার বানান জর্জ মুন্সি ও ম্যাথিউ ক্রসকে। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ক্রস ১১ ও ২৯ রান করে আউট হন জর্জ।

এরপর দৃশ্যপটে সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ১১তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন তিনিও। আউট করেন রিচি বেরিংটন (২) ও ও মাইকেল লিস্ককে (০)। এই দুই উইকেট তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়েন সাকিব। ১০৮ উইকেট নিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সর্বাধিক উইকেট শিকারি বনে যান টাইগার অলরাউন্ডার। ছাড়িয়ে যান আগের সর্বোচ্চ ১০৭ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করা লাসিথ মালিঙ্গাকে।

এরপর মেহেদীতে কুপোকাত ক্যালাম ম্যাকলয়েড। এই স্কটিশ আউট হন ৫ রান করে। নিজের কোটার ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট পান অফ স্পিনার মেহেদী। এই ফরম্যাটে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। দলীয় ৫৩ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে স্কটল্যান্ড। সপ্তম উইকেটে পার্টনারশিপ জমিয়ে তোলেন মার্ক ওয়াট আর ক্রিস গ্রিভস। তাদের জুটি থেকে আসে ৫১ রান। ২২ রানে থাকা ওয়াটকে ফিরিয়ে এই জোট ভাঙেন তাসকিন। 

শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন গ্রিভস। ইনিংসের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে আউট হওয়ার আগে তার ২৮ বলে খেলা ৪৫ রানের ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ১৪০ রানের পুঁজি পায় স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী ৩, সাকিব ২, মুস্তাফিজ ২, সাইফউদ্দিন ও তাসকিন সমান ১টি করে উইকেট নেন।

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ হেরে যা বললেন মাহমুদউল্লাহ

 

বাংলাদেশকে পাপুয়া নিউগিনি ও ওমানের চেয়ে ওপরে দেখেন না বলে মন্তব্য করেছিলেন স্কটল্যান্ডের কোচ শেন বার্জার।

ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশকে এভাবেই খাটো করে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন শেন বার্জার।

তার সেই হুঙ্কারের মান রাখল শিষ্যরা। বাংলাদেশকে  ৬ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুর করল স্কটল্যান্ড।

স্কটল্যান্ডের ছোড়া ১৪১ রানের তাড়ায় প্রথমে মুশফিক ও শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ-মেহেদির ব্যাটিংয়ে ভর করে ১৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ।

স্কটল্যান্ডের দুই বোলার ব্রাড হোয়েল ও ক্রিস গ্রেভসের তোপে পরাভূত টাইগাররা।

ম্যাচ হারের কারণ জানাতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘ওমানের উইকেট যথেষ্ট ব্যাটিং সহায়ক ছিল। ১৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করা অসম্ভবের কিছু নয় এখানে। কিন্তু আমরা পারিনি। ইনিংসের মাঝখানের ওভারগুলোতে আমরা বেশি রান তুলতে পারিনি। আমাদের বোলাররা তাদের দায়িত্ব দুর্দান্ত পালন করেছে। কিন্তু ব্যাটাররা আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেনি। অবশ্য এ জয়ের জন্য স্কটল্যান্ডের ব্যাটারদের ক্রেডিট দিতেই হবে। ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও তারা ম্যাচে ফিরেছে। তারা দুর্দান্ত ফিনিশিং আনতে পেরেছে। আমাদের এখন এ ম্যাচ থেকে বের করতে হবে কী কী ভুল করেছি এবং পরবর্তী ম্যাচে সেসব ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেই চেষ্টা করতে হবে। ইতিবাচক থাকতে হবে আমাদের।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ে যা বললেন স্কটল্যান্ড অধিনায়ক

 

হুঙ্কার ছেড়ে ঠিকই তা কাজে পরিণত করেছেন স্কটিশরা। ম্যাচের স্কটল্যান্ড দলের কোচ শেন বার্জার বলেছিলেন, ‘নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে আমরা সব দলকেই বিপাকে ফেলতে পারব। সংক্ষিপ্ততম সংস্করণ সব দলকেই কাছাকাছি নিয়ে আসে। আমরা জানি, আমাদের সামর্থ্য আছে। যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, যে কোনো দলকে হারাতে পারি আমরা, তা বাংলাদেশ হোক বা ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি। গ্রুপপর্বে ম্যাচগুলোয় বাংলাদেশকে আমরা পাপুয়া নিউগিনি বা ওমানের চেয়ে ওপরে কোথাও দেখি না।’ 

তার সেই হুঙ্কারের মান রাখল শিষ্যরা। বাংলাদেশকে ৬ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুর করল স্কটল্যান্ড।

স্কটল্যান্ডের ছোড়া ১৪১ রানের তাড়ায় প্রথমে মুশফিক ও শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ-মেহেদির ব্যাটিংয়ে ভর করে ১৩৪ রানে থামে বাংলাদেশ।

জয় দিয়ে ম্যাচ শুরুতে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক কাইল কোয়েটজার।

তবে এমন জয়ের পরও বাংলাদেশের বোলারদের প্রশংসায় ভাসালেন কোয়েটজার।

বললেন, ‘ম্যাচকে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসতে মূলত বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হয়। এটা না বললেই নয় যে, বাংলাদেশি বোলাররা যে বিশ্বমানের সেই প্রতিভা দেখিয়েছে তারা। আমাদেরকে কম রানে বেঁধে ফেলেছে। কিন্তু আমাদের স্কোয়াড নিয়ে আমরা দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমাদের কেউ না কেউ দাঁড়াবে আর বলকে বাউন্ডারির দড়ির বাইরে পাঠাতে সক্ষম হবে। ক্রিস গ্রেভস আর জস দাভেয় যেটা করে দেখিয়েছে। আমাদের এই জয় এটাই বিশ্ববাসীকে বার্তা দিচ্ছে যে, যে কোনো পরিস্থিতি থেকে উতরে গিয়ে ম্যাচ জিততে পারি আমরা। ম্যাচের মাঝ পথে সতীর্থদের এই কথাটাই আমি বলেছিলাম যে, আমরা এমন চাপের মুখেও জিততে পারি। সবাই শুধু তার সেরাটা বিলিয়ে দেবে, যখন তার থেকে যেটা চাওয়া হয়। আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমরা যে কোনো দলকে চাপে রাখতে পারি এবং যে কোনো দলের জন্য হুমকিস্বরূপ আমরা।’

Bootstrap Image Preview