Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কুমিল্লার ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধনও ছিল!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০১:১৫ PM
আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০১:১৫ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা হলেও তিনটি জেলায় সংঘটিত ঘটনা সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে বেকায়দায় ফেলেছে। এ অবস্থায় দ্রুত ঘটনার উৎসমূল খোঁজার চেষ্টায় নেমেছে বিভিন্ন সংস্থা। কুমিল্লার ঘটনায় জড়িতদের প্রায় চিহ্নিত করা গেছে বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

কুমিল্লার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনে করছে, যেসব এলাকায় দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল, সেসব এলাকায় এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। 

কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগের খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকের মাধ্যমে। ফলে সব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনা এড়াতে না পারার কারণও বিশ্লেষণ করেছে সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করে অনেক লোক একসঙ্গে আক্রমণ করেছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে ছিলেন ১৫ জন পুলিশ সদস্য। বাতাসের কারণে টিয়ার শেল কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়নি। আত্মরক্ষায় ব্যবহার করা রাবার বুলেটও দ্রুত ফুরিয়ে গেছে। ফলে চেষ্টাও কাজে লাগেনি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে বুলেটই ব্যবহার করতে হয় পুলিশকে।  

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ গতকাল শনিবার বিকেলে টেলিফোনে বলেন, ‘গুলির বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ ছিল না। পূজামণ্ডপটিতে শত শত লোক হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গুলি করা না হলে হামলাকারীদের হাতে হয়তো অনেক লোক নিহত হতো।’ তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির একজন নেতার সঙ্গে ফাঁস হওয়া ফোনালাপকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। ওই আলাপে মণ্ডপে কোরআন রাখার প্রসঙ্গ এসেছে।

তবে আমানউল্লাহ আমান গতকাল  বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানিই না। এটা আপনাদের কাছেই প্রথম শুনলাম। ফোনে কারো সঙ্গে আমার এ ধরনের কোনো কথা হয়নি।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো ও ভলান্টিয়ার রাখার কথা ছিল। কিন্তু কুমিল্লার পূজামণ্ডপটিতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ছিল না, ভলান্টিয়ারও ছিল না। পুলিশ প্যাট্রল ডিউটিতে থাকায় মণ্ডপে তাদের উপস্থিতি ছিল না। এই সুযোগ নিয়ে চক্রান্তকারীরা মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে আসে। গত বুধবার ভোরে সেটি কারো কারো নজরে আসে।

এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর ফেসবুকে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। উত্তেজনা ছড়ানোর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনও ছিল। এ রকম একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। তাদের গাফিলতি আছে বলে মনে হয়নি।

ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত : ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা সাম্প্রদায়িক এই তৎপরতাকে পূর্ব পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেখছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতারা বলছেন, যেসব এলাকায় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল, সেসব এলাকাকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

আবার কোনো কোনো নেতা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকেও দুষছেন। এঁরা বলছেন, কুমিল্লায় হামলার পর আশপাশের জেলাগুলোতে যে কঠোর নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, তাও নিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কয়েকটি জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৩ বছরে এ ধরনের প্রবণতা ছিল না। এ হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। আর যেন কেউ হামলার শিকার না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকার বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কতগুলো প্রশ্ন তো আছেই। হামলা প্রতিরোধে আমাদের নেতাকর্মীরা ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ নিয়ে দলীয় বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে।’

গত তিন দিন কুমিল্লা, নোয়াখালীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, ‘দেশবিরোধী চক্র অন্য কোনো ইস্যুতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পেরে পরিকল্পিতভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। সব কিছুর নাটের গুরু লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিগড়ে যাওয়া পুত্র।’ তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব, গুজবে উত্তেজিত না হয়ে অনুগ্রহপূর্বক ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে সব ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের জন্য সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখুন।’

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল দুপুরে বলেন, ‘আমরা সব বিষয় খতিয়ে দেখছি। আমাদের কাছে সব চেয়ে বড় বিষয়, কারা কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা। এরই মধ্যে গোয়েন্দারা কাজ শুরু করছে। তাদের চিহ্নিত করার বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে।’

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Bootstrap Image Preview