স্থানীয়রা এই দীঘিকে বলেন ‘লাভার’স প্যারাডাইজ’। ছবির মতো সুন্দর এই দীঘির অবস্থান মুম্বইয়ের থানে এলাকায়। প্রতিদিন এই দীঘির পাড়ে সাইকেল চালাতে কিংবা দৌঁড়াতে আসেন অনেকে। কলেজের শিক্ষার্থীরা গাঁজা খায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ছাতার নিচে বসে প্রেম করা প্রেমিক যুগলদের। ভারতের প্রত্যেক শহরেই এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলোয় এমন যুগলরা খোলা জায়গাতেই প্রেম করার মতো আড়াল খুঁজে পায়। সামাজিকভাবে রক্ষণশীল সংস্কৃতি, ছোট ছোট ফ্ল্যাট, যৌথ পরিবার, দামী হোটেল আর কট্টরমনা হোটেলের মালিকদের কারণে তাদের যাওয়ার আর তেমন কোনো জায়গাও নেই।
তবে বদলের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোয় ‘লাভ হোটেল’ বেশ জনপ্রিয়। এ হোটেলগুলো (খুবই) স্বল্প সময়ের জন্য অবিবাহিত যুগলদের জন্য কক্ষ (রুম) ভাড়া দিয়ে থাকে। কিন্তু, প্রতিক সিং বলেন, ভারতে এ ব্যবসার জনপ্রিয়তা কম। তিনি ব্রেভিস্টে নামের একটি অ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। অ্যাপটি ব্যবহার করে প্রায় ১৫০০ হোটেল থেকে বাছাই করে ঘণ্টা হিসাবে রুম ভাড়া নেওয়া যায়। প্রতিক জানান, হোটেল ব্যবসায়ীদের এ ব্যবসার মডেল বোঝানোটা আসল চ্যালেঞ্জ না। মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তাদের মানসিকতা পাল্টানো। ব্রেভিস্টে’র মতো ১৮০০ হোটেলের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে স্টেআংকেল নামে আরেকটি অ্যাপ। এসব হোটেলের মধ্যে সমকামী বান্ধব হোটেলও রয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা অমিত শর্মা বলেন, যুগলদের প্রয়োজন রুম, নৈতিক বিধিনিষেধ নয়।
কিন্তু ভারতের মতো দেশে, যেখানে নৈতিকতার বালাই অত্যন্ত বেশি, সেখানে অমিতের মতামত সর্বসাধারণের কাছে জনপ্রিয় নয়। বহু বছর ধরে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের কারণে মুম্বইতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে প্রেমিক যুগলদের। কখনো কখনো পুলিশ ধরেও নিয়ে গেছে। গত মার্চে উত্তরখ- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ‘হাঁটু দেখা যাওয়া জিন্স পরিহিত নারী দেখে’ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে হায়হুতাশ করেন। গত মাসে হায়দ্রাবাদে রাষ্ট্র-পরিচালিত এক পার্ক নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে যে, ‘অবিবাহিত যুগলরা পার্কের ভেতর ঢুকতে পারবে না।’ তবে তীব্র সমালোচনার মুখে তা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
কলকাতার এক হোটেলের কর্মচারী অমিত চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এই পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আরো বুঝদার হতে হবে।
স্টেআঙ্কল’র তালিকাভুক্ত দিল্লির একগুচ্ছ হোটেলের মালিক সিকান্দার যাদব। তিনি বলেন, অন্য যেকোনো ব্যবসার মতো, এতেও মুখ্য বিষয় হচ্ছে গ্রাহকের সন্তুষ্টি। প্রতি ১০টি বুকিংয়ের মধ্যে একটিতে অতিরিক্ত সেবা দিয়ে থাকে তার হোটেলগুলো। যেমন, প্রেমিকেরা অনেক সময় চায় তাদের বিছানায় ফুলের পাপড়ি দিয়ে যেন ‘স্যরি’ লেখা থাকে।
তবে অ্যাপগুলোও ব্যবসা জমাতে তৎপর। স্টেআঙ্কল’র একটি চটকদার স্লোগান হচ্ছে, ‘উই আর অল ক্লিন ফর ইউ টু গেট ডার্টি’। অ্যাপটি কিছু হোটেল রুমে বিশেষ সেবা দিয়ে থাকে। যেমন বিনামূল্যে চকলেট, কনডমসহ ‘লাভ কিট’ সরবরাহ করা।
অমিত শর্মা জানান, ‘রুমের ভেতরের অভিজ্ঞতা’ আরো সন্তোষজনক করে তুলতে স্মার্ট স্পিকার ও স্পটিফাই একাউন্ট সরবরাহ করার ইচ্ছা আছে তার। এর চেয়েও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা আছে তার। যেমন, রুমগুলোকে ‘সাউন্ডপ্রুফ’ করে তোলা।