পিয়াস সরকার।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী অপু। ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখ সারিতে। এক সপ্তাহে আত্মহত্যা করলেন ভিন্ন পাঁচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। যার মাঝে অপু একজন। যাদের চারজনই সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। সবশেষ এই তালিকায় নাম লেখালেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার। পরিবার বলছে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের এই শিক্ষার্থী পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ায় মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্ব স্পষ্ট। আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, করোনাকালে দেশের তরুণদের ৬১ দশমিক ২ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন।
করোনাকালে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। আর করোনাকালে প্রথম ১৫ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ১৫১ শিক্ষার্থী।
দীর্ঘ বন্ধে নাকাল শিক্ষা-ক্যালেন্ডার। যখন খুলতে শুরু করেছে জট, বেজে উঠেছে পরীক্ষা ঘণ্টা তখনই সব ছাপিয়ে সামনে এলো এক শিক্ষিকার কাণ্ড। তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কাটা নিয়ে ব্যস্ত। মুক্ত চর্চার পাড়ায় চুল বড় রাখাটা কি অন্যায়? অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন এক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে অস্বীকার করলেন তা সদর্পে। সত্য চাপা থাকেনি। সিসিটিভি ক্যামেরায় ফুটে উঠেছে সে অন্যায়। হয়েছেন সাময়িক বহিষ্কার। তার নাম ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাকে ফেরাতে মোটাদাগে কাজ করবার কথা শিক্ষকদের। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে আনার কথা তাদের। কিন্তু উল্টা তিনি এতটাই মানসিক অত্যাচার করলেন যে শিক্ষার্থী নিজের জীবনটাই বিলিয়ে দিচ্ছিলেন।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন শিক্ষক নিয়োগ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেছিলেন, এখনতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। হয় ভোটার নিয়োগ। শিক্ষকরা সারা বছর নির্বাচন করেন। যদিও শিক্ষার্থীদের নির্বাচন হয় না। আর শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দেশের অধিকাংশই ঘটনাচক্রে শিক্ষক। শুধু কী তাই- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের নিয়েও কম বিব্রত হয় না শিক্ষা সমাজ।
বলা হয়ে থাকে, স্কুল-কলেজে শিক্ষকরা আদর ও শাসন করে থাকেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হন বন্ধু। এই বন্ধুত্বের নমুনা? যে বন্ধুত্ব শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।
শিক্ষক নিয়োগে পয়সা ঢালা ও রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ নতুন কিছু না। ওদিকে গ্রামাঞ্চলে বাল্য বিয়ে হলো এক ঝাঁক শিক্ষার্থীর। ভাতের হাঁড়ি যাদের চেনা, বই খাতাতো অতীত। এসব নিয়ে ভাববার সময় কই? শিক্ষার্থীর চুল বড় রাখাটা যে বিরাট অন্যায়, চাই কাঁচি।