Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মানুষ যেভাবে কবর থেকে উঠবে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৪৩ AM
আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:৪৩ AM

bdmorning Image Preview


মহান আল্লাহর হুকুমে হজরত ইসরাফিল (আ)-এর শিঙা ফুঁৎকারের মাধ্যমে কিয়ামত সংঘটিত হবে। ধ্বংস হবে নশ্বর এ পৃথিবী। মৃত্যু হবে পৃথিবীর সবকিছুর। আল্লাহর নির্দেশে তার দ্বিতীয়বার ফুঁৎকার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংঘটিত হবে পুনরুত্থান। শুরু হবে কবর থেকে ওঠার পালা। হজরত ইসরাফিল (আ)-এর দুই ফুঁৎকারের মাঝে সময়ের ব্যবধান কত হবে—এ বিষয়ে রসুল (স) বলেন, ‘দুই ফুঁৎকারের মাঝের সময়ের পরিমাণ হলো চল্লিশ। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আবু হুরাইরা, এটা কি চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। তারা বললেন, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি অস্বীকার করলাম। অতঃপর আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন তখন মানুষ উদ্ভিদের ন্যায় বের হতে থাকবে। মানুষের পশ্চাদাংশের পুচ্ছের একটি হাড় ছাড়া সমস্ত শরীর ক্ষয় হয়ে যাবে। আর তা থেকেই আবার কিয়ামতের দিন মানুষকে সৃষ্টি করা হবে।’ (বুখারি :৪৯৩৫)।

মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের বিশ্বাস রাখা ইমানের অন্যতম মৌলিক বিষয়। মৃত্যু যেমন সত্য। মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ঠিক এমন সত্য। মহান আল্লাহ স্বীয় কুদরত ব্যবহার করে ছিন্নবিচ্ছিন্ন মৃত সব শরীর একত্র করবেন। পৃথিবীতে কাউকে বাঘে খেয়ে ফেললে, পানিতে ডুবে মরলে, আগুনে পুড়ে মরলে বাহ্যত দেখা যায় এর কিছুই থাকে না। কিন্তু এ সবকিছুর পুনরুত্থান ঘটাবেন মহান আল্লাহ। অতঃপর এগুলোতে তিনি রুহ ফিরিয়ে দেবেন। আল্লাহ বলেন, ‘শিঙায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলে মূর্ছিত হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে।’ (সুরা জুমার :৬৮)। ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফেররা ধারণা করে যে, তারা কখনো পুনরুত্থিত হবে না। বলো, নিশ্চয় হবে, আমার প্রতিপালকের শপথ! তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর তোমরা যা করতে তোমাদের সে সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত করা হবে। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা তাগাবুন : ৭)। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তারা বলে, আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণবিচূর্ণ হলেও কি নতুনরূপে উত্থিত হব? বলে দাও, তোমরা হয়ে যাও পাথর বা লোহা অথবা এমন কিছু, যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন, তারা বলবে, কে আমাদের পুনরুত্থিত করবে? বলে দাও, তিনিই, যিনি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তারা তোমার সামনে মাথা নাড়বে এবং বলবে, তা কবে? বলো, সম্ভবত তা শিগিগর হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৪৯-৫১)। পুনরুত্থান পর্বে প্রথম যে কবরটি ফেটে যাবে, সেটি হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মহানবী (স)-এর কবর। হাদিসে এসেছে, ‘কিয়ামত দিবসে মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়বে এবং সর্বাগ্রে আমার (কবরের) জমিন ফেটে যাবে।’ (বুখারি :২৪১২)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘কিয়ামত দিবসে মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়বে এবং আমি সর্বপ্রথম জ্ঞান ফিরে পাব।’ (২৪১২)।

পুনরুত্থান কিয়ামতের কঠিন একটি ধাপ। মানুষ ও জিন জাতির জন্য পুনরুত্থান হবে অনেক ভয় ও উৎকণ্ঠার। নবী-রসুলরাও সেদিন ইয়া নাফসি (আমার কী অবস্থা হবে) ইয়া নাফসি (আমার কী অবস্থা হবে) বলতে থাকবেন। আল্লাহ বলেন, ‘যখন শিঙায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে তখনই তারা কবর হতে ছুটে আসবে তাদের প্রতিপালকের দিকে। তারা বলবে, ‘হায়! দুর্ভোগ আমাদের! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে ওঠাল? দয়াময় আল্লাহ তো এরই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং রসুলরা সত্যই বলেছিলেন। এটা হবে কেবল এক মহানাদ; তখনই তাদের সবাইকে উপস্থিত করা হবে আমার সামনে।’ (সুরা ইয়াসিন : ৫১-৫৩)। অনেক মানুষ সেদিন বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায় উত্থিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অপমানে অবনমিত নেত্রে তারা কবর থেকে বের হবে বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের ন্যায়, তারা আহ্বানকারীর দিকে ছুটে আসবে ভীত-বিহ্বল হয়ে। কাফেররা বলবে, কঠিন এই দিন।’ (সুরা কামার : ৭-৮)। গ্রীষ্মকালে অনেক সময় দেখা যায় মাটি ফুঁড়ে পোকামাকড় বের হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে, পুনরুত্থানের সময় মানুষেরও তেমনি অবস্থা হবে। মাটি ফেঁড়ে তারা বের হতে থাকবে।

নিতান্ত অসহায়-নিঃস্ব হয়ে সেদিন সবাইকে পুনরুত্থিত হবে। রসুল (সা) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমরা নগ্নপদে, বস্ত্রহীন ও খতনাবিহীন অবস্থায় উত্থিত হবে।’ (মুসলিম :২৮৬০)। প্রত্যেকে যে অবস্থায় ইন্তেকাল করবে, সে সে অবস্থায় উঠবে। যে শহিদ হয়ে মরেছে, সে শহিদ হয়ে উঠবে। যে হজব্রত পালন অবস্থায় মারা গেছে, সে হাজি হয়ে উঠবে।

পুনরুত্থান যেদিন শুরু হবে, সেদিন হবে শুক্রবার। হজরত আওস ইবনে আওস সাকাফি (রা) থেকে বর্ণিত, ‘নিশ্চয় তোমাদের শ্রেষ্ঠ দিবস হলো শুক্রবার দিন। এ দিনেই (প্রথম শিঙায় ফুঁৎকারের ফলে) সবকিছু অজ্ঞান হয়ে পড়বে এবং এ দিনেই দ্বিতীয় শিঙায় ফুঁৎকার হবে।’ (নাসায়ি :১৩৭৩)।

নূর মুহাম্মদ রাহমানী।। লেখক: ইসলামি চিন্তাবিদ

Bootstrap Image Preview