Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কোন সময় জামায়াত ছাড়ার ঘোষণা দিবেন তারেক রহমান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১৭ AM
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১৭ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


২২ বছরের জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপি এক ধাপ আগালে আরেক ধাপ পেছায়। জোট আর রাখা হবে না, এ বিষয়ে জামায়াতকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও আর আগায়নি বিএনপি। তবে এবার বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলের কৌশল নির্ধারণে শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে আবারও কথা হচ্ছে এ বিষয়ে। জোট থেকে স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে বের করে দিতে জোর দাবি তুলেছেন নেতারা।

ওই বৈঠকে উপস্থিত দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, নেতারা দাবি তোলার পরে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেয়া তারেক রহমান কোনো যুক্তি খণ্ডন করেননি। বরং এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, খালেদা জিয়ার কাছ থেকে সংকেত পাওয়া গেলেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন। তিনি এ বিষয়ে প্রস্তুত আছেন।

দলের কোনো পর্যায়েই জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি নেই, তার পরেও কেন জোট- এমন প্রশ্নে দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিউজবাংলাকে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানান, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একক সিদ্ধান্তে আসতে না পারাই এর কারণ।

তিনি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি করি, আমাদের বয়স তো কম হয়নি। অনেক কিছু চাইলেও বলতে পারি না। দলের সেই স্পিরিট এখন নেই। তার একটা মূল কারণ মা-ছেলের দ্বন্দ্ব। জামায়াতকে ছাড়তে না পারার জন্যও এটাই মূল কারণ।‘

তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে প্রস্তুত। তবে বেগম খালেদা জিয়ার থেকেই কোনো সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না।‘

এই নেতার বক্তব্যের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির আরেক নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হাইকমান্ডের সঙ্গে বসছি। বাতাসে খবর উড়ে। উড়ো হোক আর সঠিক হোক, সময়মতো জানবেন।’

বিএনপি নেতারা জানান, দলের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে জামায়াত ত্যাগের পেছনে তিনটি যুক্তি তুলে ধরেছেন নেতারা।

প্রথমত, তারা মনে করছেন, জামায়াতকে ছাড়তে পারলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি প্রধান প্রতিবেশী ভারতকেও আস্থায় নেয়া যাবে।

দ্বিতীয়ত, বিএনপির সঙ্গে জামায়াত না থাকলে উদার ও বামপন্থি দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা যাবে; যাদের নিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি।

তৃতীয়ত, খালেদা-নিজামী বলে আওয়ামী লীগ নেতারা নেতিবাচক প্রচার চালায় তাও দূর করা যাবে।

দলটির নেতাদের মতে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থানের পর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সৃষ্ট নতুন পরিস্থিতি থেকেও বিএনপির ফায়দা নেয়ার সুযোগ আছে।

ওই ঘটনার পরে ইসলামপন্থি শক্তির উত্থানের আশঙ্কায় এ অঞ্চলের দেশগুলো নতুন করে হিসাব-নিকাশ কষছে বলে মনে করছেন তারা।

ফলে ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষার কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে অগ্রসর হতে চাইছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মতে, ভারত ও চীনের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলার কারণেই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই জামায়াতকে এখনই দূরে রেখে বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তারা।

জানতে চাইলে বিএনপির ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি’-এর সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে জোট থাকা না থাকার বিষয়ে দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। এটা নিয়ে নেতারা তাদের পারসেপশন জানিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের নেতাদেরও একটা দাবি বারবার আসছে। তবে সেটার সিদ্ধান্ত এখনও নেয়া হয়নি।’

জামায়াতকে ছাড়লে বিএনপি লাভবান হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাভ-লোকসান ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে বৈশ্বিক রাজনীতির পাশাপাশি তালেবানের উত্থানের পর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন রাজনীতির সঙ্গে অবশ্যই আমাদের সমন্বয় করতে হবে।’

চলতি বছরের শুরুর দিকে বিএনপির বিষয়ে স্থায়ী কমিটির এক সভায় জামায়াত ছাড়ার প্রস্তাব রাখা হয়। সে সভায় ছিলেন তারেক রহমানও।

সেখানে জামায়াতকে জোটে রাখা নিয়ে বিএনপির লাভ-লোকসান নিয়ে রীতিমতো তর্ক-বিতর্কও হয়।

বৈঠকে তিন নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জামায়াতকে বের করে দেয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে তারেক রহমানের সমর্থন ছিল।

পরে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা সে সময় নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে জানান, তারা জামায়াতকে ত্যাগ করবেন। আর এই সিদ্ধান্ত কেন, তার কারণ উল্লেখ করে চিঠিও প্রস্তুত হচ্ছে।

তিনি তখন বলেন, ‘বারবার স্থায়ী কমিটি থেকে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের প্রস্তাব করা হচ্ছিল। সেটা নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছিল।… জামায়াতকে নিয়ে আমরা আর এগোচ্ছি না। তারা তো শুধু ব্যবসা বোঝে, মুনাফা খোঁজে।’

তবে পরে সেই সিদ্ধান্ত আগের মতোই ঝুলিয়ে রাখে বিএনপি।

এরপর গত ৪ সেপ্টেম্বর শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াতকে দূরে রাখার কৌশল নিয়ে নতুন করে আলোচনা ওঠে।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি জোটের আলোচনা হয়েছিল ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেই। জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ে উল্লেখ আছে, তারা সে সময় ১০০টি আসন চেয়েছিলেন বিএনপির কাছে, কিন্তু খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় জোট আর হয়নি। পরে অঘোষিতভাবে ৩৫টি আসনে জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বিনিময়ে তারাও দেশের বাকি আসনগুলোতে বিএনপির হয়ে কাজ করেছে।

১৯৯৬ সালে বিএনপি ও জামায়াত পুরোপুরি আলাদা নির্বাচন করে। তখন ভরাডুবি হয় জামায়াতের। তারা জেতে মাত্র তিনটি আসনে। এরপর বিএনপি ও জামায়াত একে অপরের গুরুত্ব বুঝতে পারে।

তবে ২০০১ সালে এই জোট কার্যকর প্রমাণ হলেও পরে তা বিএনপির জন্য বোঝা হিসেবেই দেখা হয় নানা কারণে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় খুনি বাহিনী আলবদলের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাজিহকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে সমালোচিত হয় বিএনপি।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি দেশে জোরালো হয়ে ওঠে আর স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি ভোটের ময়দানে নেমে প্রশ্নের মুখে পড়ে।

ভোট শেষে ভরাডুবির পর কারণ অনুসন্ধানে বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়ে ১০টি কমিটি গঠন করে। তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এর মধ্যে ৯টি কমিটি জামায়াত ত্যাগের সুপারিশ করে, কিন্তু ১২ বছরেও সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি বিএনপি।

২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ও সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে যে নজিরবিহীন সহিংসতা হয়, তার পেছনেও জামায়াতকে দায়ী করা হয়। সে সময় জামায়াতের সহিংস হয়ে ওঠার পেছনে আরও একটি কারণ ছিল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার বিচার ঠেকাতেও মরিয়া ছিল দলটি। সেটি বিএনপির দাবি না থাকলেও সে সময় দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজামী, মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তিও চান।

তবে সে সময় তো বটেই, এখনও নানা ঘরোয়া আলোচনায় সুযোগ পেলেই বিএনপির প্রায় সব পর্যায়ের নেতারাই জামায়াতকে পরিত্যাগের দাবি তোলেন।

দশম সংসদ নির্বাচনের পর একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট কৌশলগত। সময় এলেই তিনি জামায়াতকে ত্যাগ করবেন।

এসব ঘটনায় আবার জামায়াত মনঃক্ষুণ্ন হয় বিএনপির প্রতি। যদিও তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য আসেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন জোট গড়ে তোলার পরও জামায়াতের সঙ্গে জোট আর থাকবে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা হয়ে ওঠা ড. কামাল হোসেন প্রকাশ্যেই বলেন, জামায়াত আছে জানলে তারা জোটেই যেতেন না।

সূত্রঃ নিউজবাংলা 

Bootstrap Image Preview