Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে ২৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে ইউজিসি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:২১ PM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:২১ PM

bdmorning Image Preview


দেশের ২৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসি শুধুমাত্র সরকার এবং ইউজিসির অনুমোদিত ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নেই, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।

এ বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য ইউজিসির ওয়েবসাইট দেখে নিতেও বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইউজিসি এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ইউজিসির ওয়েবসাইটে গণবিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কারও মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। কেউ কেউ আদালতের স্থগিতাদেশে পরিচালিত। কেউ কেউ আবার অনুমোদিত শিক্ষা প্রোগ্রামের বাইরেও কিছু কিছু প্রোগ্রাম চালাচ্ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ক্যাম্পাস অনুমোদন ছাড়াই আছে।

ইউজিসি জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বর্তমানে সারা দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে নয়টিতে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। ৯৯টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে যে সমস্যা: ইবাইস ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ দুই ভাগে বিভক্ত এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা চলছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আচার্য ও রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। ইউজিসি জানিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অবৈধভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি সরকার বন্ধ করেছিল। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ইউজিসি বলেছে, অনুমোদনের সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ঠিকানা ছিল বনানীতে। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর ঠিকানা বারিধারা-নর্দ্দার প্রগতি সরণিতে অনুমোদন দেয়। কিন্তু ইউজিসি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখতে পায়, এ ঠিকানায় আইনানুযায়ী জায়গা (স্পেস), শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মতো কোনোরূপ সুযোগ-সুবিধা নেই। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নেই।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে এক বছরের জন্য সাময়িক শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার চিঠি দেয়। কিন্তু ওই নির্ধারিত সময়ে তারা শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ১৯৯৫ সালে অনুমোদন পেয়েছিল। কিন্তু আইন না মানায় ২০০৬ সালে সরকার এটি বন্ধ ঘোষণা করে। এ নিয়ে আদালতে যায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরে আদালত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দুই ভাগে বিভক্ত এবং একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান অনুমোদিত ঠিকানা রাজধানীর উত্তরায়। ইউজিসি গত বছর সেখানে সরেজমিনে পরিদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব পায়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। ইউজিসি এখনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়নি। এটিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নেই।

এশিয়ান ইউনিভার্সটি বাংলাদেশের বিষয়ে ইউজিসি বলেছে বাংলায় বিএ (অনার্স) সহ কয়েকটি প্রোগ্রাম ২০২১ সালের ‘স্প্রিং সেমিস্টার’ থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ পদে বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।

টাইমস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে ২০১৫ সালে ১০টি প্রোগ্রামের অনুমোদনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ইউজিসির অনুমোদনের আগেই বিবিএসহ কয়েকটি প্রোগ্রামে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। পরে তারা ভূতাপেক্ষ অনুমোদন চায়। কিন্তু ইউজিসি জানায় তার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে তারা আদালতে সরকার ও ইউজিসির বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি চলমান আছে। এ ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ফরিদপুর জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির অনুমোদিত ক্যাম্পাসের ঠিকানা হলো চট্টগ্রামের মেহেদীবাগ এবং শহীদ মির্জা লেনে। আদালতের রায় অনুযায়ী এই দুটি ক্যাম্পাস ছাড়া অন্যান্য সব ক্যাম্পাস অবৈধ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

কয়েকটি শিক্ষা প্রোগ্রামের বিষয়ে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় আছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়। এটিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য ও সহউপাচার্য নেই।

প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যানের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে।

অননুমোদিত কিছু ক্যাম্পাস পরিচালনা করেছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো হলো ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অববাংলাদেশ এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি। কোন কোন ক্যাম্পাসগুলো অননুমোদিত সেটিও বলা আছে গণবিজ্ঞপ্তিতে।

বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইবাইস ছাড়াও আছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ইন ইংলিশ প্রোগ্রাম ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া চালাচ্ছে। পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি এলএলবি (চার বছর মেয়াদি) এলএল এম (এক বছর), এলএল এম (২ বছর মেয়াদি) প্রোগ্রামে ইউজিসির অনুমোদন নেই। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামের অনুমোদন নেই। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) প্রোগ্রাম অনুমোদিত। কিন্তু ইউজিসি বলেছে এই প্রোগ্রামের মধ্যে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিবিএ ইন জেনারেল, বিবিএ ইন ফিন্যান্স, বিবিএ ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, বিবিএ ইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, বিবিএ ইন মার্কেটিং, বিবিএ ইন ম্যানেজমেন্ট, বিবিএ ইন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস, বিবিএ ইন অ্যাকাউন্টিং, বিবিএ ইন ইকোনমিকস, বিবিএ ইন এন্টারপি৶ নিউশিপ এবং বিবিএ সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম চালাচ্ছে।

ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার অনুমোদন দিলেও এখনো শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়নি। এগুলো হলো রূপায়ণ এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয় (নারায়ণগঞ্জ), রাজশাহীর আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার মাইক্রোল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং সদ্য অনুমোদন পাওয়া কিশোরগঞ্জের শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
এ ছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় আগেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

৯ টিতে শীর্ষ তিন পদ পূরণ: শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ৯৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নয়টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্য, সহউপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ সবাই রয়েছেন। অর্থাৎ শীর্ষ তিন পদেই রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা কর্তৃপক্ষ আছে। এ ছাড়া ৬৯ টিতে উপাচার্য, ২২টি সহউপাচার্য এবং ৫৬ টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা কোষাধ্যক্ষ রয়েছে। ১৮ টিতে রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা শীর্ষ তিন পদে কোনো ব্যক্তি নেই।

Bootstrap Image Preview