Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

স্কয়ারের মোড়কে চানাচুরে ক্ষতিকর আলফাটক্সিন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০০ AM
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০০ AM

bdmorning Image Preview


বাংলাদেশ থেকে জাপানে রপ্তানি হওয়া চানাচুরের একটি চালানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর মাত্রায় আলফাটক্সিনের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের (এসএফবিএল) ব্র্যান্ডসংবলিত মোড়কে রপ্তানি হয়েছে এই চানাচুর।

জাপানের রাষ্ট্রীয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষায় চানাচুরে আলফাটক্সিনের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাপানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

তবে স্কয়ার কর্তৃপক্ষের দাবি, চানাচুরের যে চালানে আলফাটক্সিনের উপস্থিতি মিলেছে সেই চালানটি স্কয়ারের নয়। অসৎ উদ্দেশ্যে পণ্যের মোড়কে স্কয়ারের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

আলফাটক্সিন হলো নির্দিষ্ট প্রজাতির ছত্রাক থেকে উৎপাদিত এক ধরনের বিষ, যা সাধারণত ভুট্টা, চিনাবাদাম, তুলসী ও কাঠবাদামে পাওয়া যায়। অ্যাসপারগিলাস ফ্লেভাস এবং অ্যাসপারগিলাস প্যারাসিটিকাস ছত্রাক থেকে এ ধরনের বিষ তৈরি হয়ে থাকে। আলফাটক্সিনের কারণে যকৃতের ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

কাবুশিকিগাইশা সিঅ্যান্ডসি করপোরেশন নামের একটি জাপানি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে চানাচুর আমদানি করে। এই চালানের প্রতিটি প্যাকেটের ওজন ২২৫ গ্রাম এবং উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের নাম রয়েছে। তবে চানাচুরে উচ্চমাত্রায় আলফাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়ায় রপ্তানি চালানটি বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে জাপান।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. আরিফুল হক ২৯ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন। ওই চিঠিতে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কাছে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

তবে স্কয়ার কর্তৃপক্ষের দাবি, জাপানে রপ্তানি হওয়া চানাচুরের চালানটি তাদের নয়।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের (এসএফবিএল) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জাপানের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার ল্যাবরেটরিতে চানাচুরের যে চালানে আলফাটক্সিনের উপস্থিতি মিলেছে, ওই চালানটি আমাদের নয়। কেউ অতি মুনাফার লোভে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হিসেবে স্কয়ারের নাম ব্যবহার করে থাকতে পারে।’

বাণিজ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাপানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে বিপন্ন হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ জড়িত থাকুক বা না-ই থাকুক, তারাও (স্কয়ার) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনা ভবিষ্যতে তাদের পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া স্কয়ারের রাঁধুনী মাংসের মসলা ও রাঁধুনী সরিষার তেল মানহীনতার অভিযোগে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তবে সে সময়েও স্কয়ার কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই পণ্য স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়নি। বাংলাদেশ থেকে ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসর নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের অনুমতি ছাড়াই পণ্যগুলো রপ্তানি করে। ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসর পণ্য মোড়কের নীতিমালা অনুসরণ না করার কারণেই তা ফেরত পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।

জাপানে পাঠানো চানাচুরের চালান নিয়ে স্কয়ার গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) পারভেজ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জাপান থেকে যে প্রোডাক্ট ফেরত এসেছে, সেটা আমাদের নয়। জাপানে ধরা পড়েছে ২২৫ গ্রামের প্যাকেট, কিন্তু স্কয়ারের এ ওজনের কোনো প্যাকেটই নাই। আমাদের প্যাকেট আছে ১৫০ গ্রাম, ৩০০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রামের। অর্থাৎ ২২৫ গ্রামের প্যাকেট, দিস ইজ কমপ্লিটলি রং ইনফরমেশন। আমার ধারণা অন্য কেউ পাঠিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রোডাক্টে আলফাটক্সিনের কোনো হাই রেঞ্জ নেই। আমাদের সব পণ্যই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন মেনে রপ্তানি হয়ে থাকে। বিশ্বের ৪২টি দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। আমার ধারণা, স্কয়ারের ব্র্যান্ডভ্যালুর নামটাম ভাঙিয়ে কেউ কোনো কিছু করেছে।

‘এক্স ওয়াই জেড হয়তো এক্সপোর্ট করছে। আমরা চাই যারা স্কয়ারের নাম ভাঙিয়ে এই হীন কাজটি করেছে তাদের চিহ্নিত করা হোক। আমাদের জানতে হবে তারা কে। তবে যারাই করেছে তারা যে শর্টটাইম ব্যবসায় অধিক লাভ এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য করেছে- এটা পরিষ্কার। এতে শুধু স্কয়ারেরই ক্ষতি করেনি, ক্ষতি করেছে দেশেরও।’

ইতিমধ্যে জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে চাওয়া ব্যাখ্যার জবাব দিয়েছে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর ড. আরিফুল হকের কাছে এ জবাব পাঠানো হয়।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান মোহাম্মদ শাহ আলম মোহাম্মেদের সই করা ওই চিঠির একটি অনুলিপি হাতে এসেছে। এতে বলা হয়, কাবুশিকিগাইশা সিঅ্যান্ডসি করপোরেশন স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কোনো পণ্য আমদানি ও বিতরণের জন্য অনুমোদিত নয়। স্কয়ার কখনোই কাবুশিগিগাইশা সিঅ্যান্ডসি করপোরেশনের মাধ্যমে জাপানে কোনো পণ্য রপ্তানি করেনি। এ ছাড়া, স্কয়ার ২২৫ গ্রাম ওজনের চানাচুর স্থানীয় বাজার এবং রপ্তানির জন্য উৎপাদন করে না।

চিঠিতে বলা হয়, ‘আলফাটক্সিনযুক্ত চানাচুর স্কয়ার গ্রুপ রপ্তানি করেনি এবং ধরা পড়া চালানের নমুনাও স্কয়ারের প্রকৃত পণ্য নয়। কাবুশিকিগাইশা সিঅ্যান্ডসি করপোরেশন বাংলাদেশের অননুমোদিত কোনো উৎস থেকে নকল পণ্য আমদানি করেছে।’

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড গত আট বছর ধরে জাপানে পদ্মা কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করছে বলেও জানানো হয় চিঠিতে।

জাপানে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো চিঠির সঙ্গে আলাদা একটি চিঠিও সংযুক্তি হিসেবে জুড়ে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিদেশি অনুমোদিত পরিবেশক থেকে পাওয়া তথ্য ও বাংলাদেশে অনুসন্ধানে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড নিশ্চিত হয়েছে যে, ঢাকার বিজয়নগরের মেসার্স ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসর উৎপাদনকারীর তথ্য গোপন করে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে আমাদের উৎপাদিত পণ্য রাঁধুনী মাংসের মসলা ও রাঁধুনী সরিষার তেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে।

‘মেসার্স ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসরের এমন অবৈধ কাজের কারণে স্কয়ার আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। পাশাপাশি সরকার বৈদেশিক মুদ্রা ও রপ্তানি শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পণ্যসামগ্রীর মোড়কজাতকরণ নীতিমালা অনুসরণ না করায় মেসার্স ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসরের রপ্তানি করা পণ্যসামগ্রী যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ ফেরত পাঠিয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসরের ডিজিএম মো. রাজিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের চালান ফেরত এসেছে আরও পাঁচ বছর আগে। এ ঘটনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠিও ইস্যু হয়। আমরা স্কয়ার কোম্পানি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরকে যথাযথ উত্তরও দিয়েছি। আমরা স্কয়ারকে লিখিত জানিয়েছি, এর পর থেকে স্কয়ারের কোনো পণ্য রপ্তানি করব না। ওই জবাবের পর আজ পর্যন্ত আমরা স্কয়ারের কোনো পণ্য রপ্তানি করিনি।’

জাপানে রপ্তানি করা চানাচুরের সঙ্গে ফারহান অ্যাগ্রো প্রসেসরের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন মো. রাজিব।

জাপানে রপ্তানি করা চানাচুরে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার তথ্য স্বীকার করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি অনুবিভাগ) মো. হাফিজুর রহমান।

এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ ও ব্যাখ্যা তলবসংক্রান্ত একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছে মন্ত্রণালয়।’

সূত্রঃ নিউজবাংলা

Bootstrap Image Preview