Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেম চলছে বিকল্প পন্থায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬ AM
আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৪৬ AM

bdmorning Image Preview


হাইকোর্টের নির্দেশনায় পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো ক্ষতিকারক গেম দুটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এরপরও বিকল্প উপায়ে চলছে পাবজি-ফ্রি ফায়ার গেম।

করোনার কারণে স্কুল এখনও বন্ধ। অধিকাংশ সময় ফ্রি থাকা অনেক শিক্ষার্থীও সহপাঠীদের পাল্লায় শিখেছেন পাবজি গেম খেলা।

শিশুদের মনোবিকাশে বাধা ও উগ্র মানসিকতা তৈরি করে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম। সেজন্যই বন্ধ করাটা জরুরি ও সময়সাপেক্ষ ছিল। কিন্তু গেম দুটি পুরোপুরি বন্ধের সক্ষমতা বিটিআরসির নেই। যে কারণে বন্ধের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে।

পাবজি গেমে আসক্ত তাসনিম নামে এক শিক্ষার্থী জানান, ভিপিএন ছাড়াও পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সার্ভার। যেটি ব্যবহারে যেকোনো দেশ থেকে খেলা যাচ্ছে গেম দুটি।

বন্ধের নির্দেশনা আসবে— এমন খবরেই আগে থেকে ভিপিএন ব্যবহারে গেমটি খেলছি। এটি একা নয়, দল বেঁধে খেলতে হয়। ভিপিএন ব্যবহারে প্রথম প্রথম সমস্যা হচ্ছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। আগের মতোই খেলা যাচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যেনবম শ্রেণির ছাত্র মিসবাহ (ছদ্মনাম)

পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া কিংবা বিকল্প নেটওয়ার্কে (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন) অনলাইন গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের ব্যবহার চলায় ‘প্রাযুক্তিক ব্যর্থতা’ বলছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শিশুদের মনোবিকাশে বাধা ও উগ্র মানসিকতা তৈরি করে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম। সেজন্যই বন্ধ করাটা জরুরি ও সময়সাপেক্ষ ছিল। কিন্তু গেম দুটি পুরোপুরি বন্ধের সক্ষমতা বিটিআরসির নেই। যে কারণে বন্ধের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
 
খোঁজ নিয়ে ও প্রাযুক্তিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে জানা গেছে, প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে বাংলাদেশে এখনও বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোন থেকে গেম দুটি খেলা যাচ্ছে। আবার ভিপিএন ব্যবহারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবহারকারীরাও গেম দুটি খেলতে পারছেন। তবে, বিটিআরসির কর্মকর্তারা বলছেন, গেম দুটির লোকাল সার্ভার থাকতে পারে। যার মাধ্যমে এখনও বাংলাদেশে গেম দুটি চলছে। ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব না। তবে গতি কমিয়ে দিয়ে গেম খেলা বিঘ্নিত করা যায় কিনা, সে চেষ্টা চলছে।
 
গেল সপ্তাহে গেম দুটি বন্ধের খবর পাওয়ার পর কিছু সময় মোবাইলসহ সব ভার্সনে গেমের অ্যাপ দুটিতে ঢোকা যাচ্ছিল না। কিন্তু দিন পার না হতেই বিকল্প পন্থা হাজির।

অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিংস্র করে তুলতে পারে এ গেম। খুন করে হলেও নিজেকে টিকিয়ে রাখার মানসিকতা তাদের মধ্যে তৈরি হতে পারেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম

মোবাইল অপারেটর কোম্পানির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, গেম দুটির মোবাইল ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম বেশ শক্তিশালী। বাংলাদেশে একটা ভার্সন বন্ধ করা গেলেও গ্লোবাল ভার্সনে গেম দুটি খেলা যাচ্ছে বাংলাদেশে বসেই। এরকম আরও ছয়টি ভার্সন আছে, যেগুলোও বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

দেশে ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি ভিপিএনের গতি কমিয়ে দিতে। যাতে গেম দুটির ব্যবহার বিঘ্নিত হয়বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র।
 
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, বিটিআরসির নির্দেশনা পাওয়ার পরই বাংলাদেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ করেছেন। আমরা আমাদের সিস্টেম থেকে গেম দুটির অ্যাকসেস বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু গেম দুটির ব্যবহার বিকল্প পন্থায় চলছে বলে জেনেছি। লোকাল সার্ভার বন্ধ থাকলেও ভিপিএন ব্যবহারে চলছে। দেশে ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি ভিপিএনের গতি কমিয়ে দিতে। যাতে গেম দুটির ব্যবহার বিঘ্নিত হয়।
 
তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক তানভীর হোসেন জোহা বলেন, পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বুদ্ধিভিত্তিক গেম। এটা খেলতে হিউম্যান নেটওয়ার্ক গড়তে হয়। বাচ্চা-কিশোররা লোকাল নেটওয়ার্ক গড়ে পাবজি গেম খেলছে। এতে করে শিশু-কিশোরদের দ্বারা অনেক রকমের অপরাধ সংঘটিত বা অপরাধপ্রবণতা তৈরি হতে পারে।

ভিপিএনের গতি কমানো কোনো সমাধান নয়। কারণ, ভিপিএন ব্যবহারে অনেক প্রযুক্তি চলে দেশে। এতে অনেক রকমের সার্ভিস বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত হবে। বরং চাইলে ভিপিএনভিত্তিক প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করতে পারে মন্ত্রণালয়। তখন দেশে ভিপিএনের অপব্যবহার চাইলেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভবতথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষক তানভীর হোসেন জোহা

বিটিআরসির ব্লক করা বা ট্রাফিক ব্লক করার সিস্টেমটি ওয়েববেইজড। যেকোনো ওয়েবপেইজ তারা বন্ধ করতে পারেন। কিন্তু ভিপিএন তারা বন্ধ করতে পারেন না বা সে সক্ষমতা তাদের এখনও হয়নি। এক্ষেত্রে পাবজি বা ফ্রি ফায়ার গেম ডাউনলোড করে লোকাল হোস্টেজে দেখতে হবে যে কোন কোন আইপি সক্রিয় বা কাজ করছে। সেগুলো ধরে ধরে বন্ধ করে দিতে হবে। তবেই এ দুটি গেম বন্ধ করা সম্ভব— মত দেন তিনি।
 
তবে, ভিপিএনের গতি কমানোর সঙ্গে একমত নন এ প্রযুক্তিবিদ। তিনি বলেন, এটা কোনো সমাধান নয়। কারণ, ভিপিএন ব্যবহারে অনেক প্রযুক্তি চলে দেশে। এতে অনেক রকমের সার্ভিস বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত হবে। বরং চাইলে ভিপিএনভিত্তিক প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করতে পারে মন্ত্রণালয়। তখন দেশে ভিপিএনের অপব্যবহার চাইলেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
 
উল্লেখ্য, সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অবিলম্বে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধে গত ১৯ আগস্ট লিখিত আদেশ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। আদেশে তিন মাসের জন্য এসব গেম অনলাইনে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।
 
এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্মে টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভসহ ক্ষতিকর অ্যাপ এবং পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না— তা জানতে রুল জারি করেন আদালত।

Bootstrap Image Preview