Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফের রোগী-স্বজন ও পুলিশ পেটানোর অভিযোগ, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০২১, ০৯:৫১ AM
আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২১, ০৯:৫১ AM

bdmorning Image Preview


বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফের এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। পরে এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে চিকিৎসকদের মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পুলিশ সদস্যরাও। এ অবস্থায় ঘটনার প্রকৃত তদন্ত এবং বিচারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে হাসপাতালের দোতলায় গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটার পর চিকিৎসকদের ভয়ে ও প্রাণ বাঁচাতে রাতে ওই নারী রোগীকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। 

মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই রাকিবুল হাসান ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তঃসত্ত্বা নারী জয়নবের অবস্থার অবনতি ঘটলে তার স্বামী মাওলানা মুজাহিদী চিকিৎসকদের সহযোগিতা চান। তারা রোগীর কাছে আসতে না চাইলে প্রতিবাদ করায় বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ইন্টার্ন ও চিকিৎসকরা মুজাহিদীকে রুমে আটকে রেখে মারপিট করেন। তার ভাই জাকিরকেও এসময় মারধর করা হয়। এসময় অন্তঃসত্ত্বা জয়নব স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার পেটেও লাথি ও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে আমি, কনস্টেবল শফিউল ও অরূপ বিশ্বাস গাইনি ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসকদের থামানোর চেষ্টা করলে আমাদেরকেও মারধর করেন চিকিৎসকরা। 

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের অবহেলা করা এবং সঠিক চিকিৎসানা দেওযার অভিযোগ অনেক দিনের। গত মার্চে ছুরিকাঘাতে আহত জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা প্রায় চার মাস আগে গাবতলীর রূপম নামে এক চেয়ারম্যানকে চিকিৎসকরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশও লাঞ্ছিত হয়। এর আগেও এ হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের মারপিটের অনেক রেকর্ড আছে। ইন্টার্নদের আন্দোলন ও রোগী দেখা বন্ধ থাকায় একাধিক রোগীর মৃত্যুরও অভিযোগ আছে।

তবে এসব অভিযোগের সঠিক কোনও বিচার না হওয়ায় সমস্যা মিটছে না বলে জানান তিনি। পুলিশ লাঞ্ছিতের ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান এএসআই রাকিবুল।

তবে ঘটনাকে হট্টগোল বলে অবহিত করেছেন শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের কিছুটা হট্টগোল হয়েছিল। পুলিশ এলে তারাও এরসঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তবে মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি; শুধুই ধস্তাধস্তি হয়েছে। এছাড়া নারীর পেটে লাথি দেওয়ার কোনও ঘটনাও ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি। 

ভুক্তভোগী বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের নন্দগ্রামের বাসিন্দা ও ডোমনপুকুর কামিল মাদ্রাসা মসজিদের খতিব মাওলানা আসলাম আলী মুজাহিদী অভিযোগ করেন, আমার দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী কয়েকদিন ধরে বমি করছিলেন। বুধবার তাকে শজিমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। শনিবার দুপুরে তার অবস্থার অবনতি হয়। কর্তব্যরত নারী চিকিৎসকদের অবহিত করলেও তারা রোগী দেখেননি। এর আগে থেকে তার স্যালাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আমি বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য মোবাইলফোন দিয়ে ভিডিও ধারণ শুরু করি এবং অন্য রোগীর স্বজনদের সাক্ষাৎকার নিতে থাকি। তখন চিকিৎসকরা বাধা দিলে ভিডিও বন্ধ করে দেই।

 মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অবস্থার আরও অবনতি হয়। এসময় চিকিৎসকদের বিষয়টি জানিয়ে রোগীকে দেখতে অনুরোধ করি। একপর্যায়ে চিকিৎসক ও ইন্টার্নদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক ও ইন্টার্ন একত্র হয়ে আমাকে মারধর করতে থাকেন। আমার চিৎকারে ছোটভাই জাকির এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করা হয়। এসময় আমার অসুস্থ স্ত্রী আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলে ক্ষিপ্ত এক চিকিৎসক তার পেটে লাথি দেন। লাথি দেওয়ার পর আমার স্ত্রী জয়নবের রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

পরে চিকিৎসকদের ভয়ে ও প্রাণ বাঁচাতে রাতেই অসুস্থ স্ত্রীকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করেছি। ইন্টার্নদের হামলার সময় বাঁচার আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন বলেও জানান আসলাম আলী মুজাহিদী।

Bootstrap Image Preview