এ করোনাকালীন সময়ে রাজধানীর উত্তর অংশসহ আশুলিয়া, গাজীপুর, শফিপুর, কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, সাভার ও এর আশেপাশের এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দেয়। কারখানা চালুর মতো গ্যাসের সরবরাহ ছিল না। ফলে বিপাকে পড়েন শিল্পমালিকরা।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সরবরাহ পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়। গ্যাস সংকটের কারণ হলো শেভরনের মালিকানাধীন দুটো গ্যাস ক্ষেত্র থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এর মধ্যে জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন পুরো বন্ধ ছিল। আর বিবিয়ানার উৎপাদন কমিয়ে প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এই দুটি গ্যাসক্ষেত্রই যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরনের মালিকানায় পরিচালিত হয়।
ঢাকা শহরের উত্তরাংশসহ ধনুয়া, জয়দেবপুর, সাভার, আশুলিয়া, কোনাবাড়ি, টাংগাইল, এলেংগা, নরসিংদীতে বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য তীব্র গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কোথাও একেবারে গ্যাস নেই, আবার কোথাও অল্প চাপে গ্যাস পাচ্ছেন গ্রাহকরা। হঠাৎ করেই এই সংকট সৃষ্টি হওয়ায় গ্রাহকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বিকাল নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পুরো পরিস্থিতি কখন ঠিক হবে তা এখনও অনিশ্চিত।
জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ বলেন, আমাদের সাথে আলাপ করেই শেভরন তাদের দুইটি গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও জালালাবাদের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেছে। এখন আমরা বিবিয়ানা থেকে কিছু গ্যাস পাচ্ছি। বিকেলের দিকে আরও কিচ্ছুটা বাড়তে পারে বলে শেভরন আমাদের জানিয়েছে। জালালাবাদ থেকে আপাতত বন্ধ আছে। বিকালে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ যদি শেষ হয় তাহলে গ্যাস পাওয়া যাবে।
তিতাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিতাস অধিভুক্ত ধনুয়া, জয়দেবপুর, সাভার, আশুলিয়া, কোনাবাড়ি, টাংগাইল, এলেংগা, নরসিংদী ও ঢাকা শহরের উত্তরাংশে গ্যাসের তীব্র স্বল্পচাপ বিরাজ করছে। গ্রাহকের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
অন্য একটি সূত্র জানায়, সাধারণত বিবিয়ানা থেকে গড়ে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যায় আর জালালাবাদ থেকে ২০০-২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিবিয়ানা থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১১০০ মিলিয়ন এবং জালালাবাদ থেকে এখন একেবারেই বন্ধ আছে। জালালাবাদ ঈদের সময় থেকেই রক্ষণাবেক্ষণে কাজ চলছে।
এদিকে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) পরিচালক (অপারেশন) তাজুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এখন বিবিয়ানা থেকে ১১০০ মিলিয়নের মতো আসছে। জালালাবাদ বন্ধ থাকলেও বিকাল নাগাদ চালু হওয়ার কথা। সে হিসেবে বিকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
এদিকে তিতাসের মোট গড় চাহিদা ১৭০০ মিলিয়নের মতো। এরমধ্যে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস পাচ্ছে তিতাস। ঘাটতি প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।
গাজীপুরের শফিপুর এলাকার যমুনা স্পিনিং ডিভিশন লিমিটেডের কর্মকর্তা লিয়াকত আলী জানান, কয়েকদিন আগে গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ দিয়েছিল। সেখানে বলা হয়- লাইনে সংস্কার কাজ করার কারণে ২৬ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই এ দুইদিন গ্যাস সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন হতে পারে। কিন্তু গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে গ্যাসের সংকট। ফলে উৎপাদন কাজ ব্যাহত হচ্ছে
তিতাস গ্যাসের গাজীপুর জোনাল বিক্রয় কেন্দ্রের উপ ব্যবস্থাপক মির্জা শাহনেওয়াজ লতিফ সমকালকে বলেন, গ্যাসের স্বাভাবিক গতি সর্বোচ্চ থাকে ১৫০ পিএসআইজি। কোনো কোনো এলাকায় এটা কমে ২-১ এ চলে এসেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জরুরি রপ্তানি কাজের জন্য লকডাউনের মধ্যে ও বিশেষ বিবেচনায় পোশাক কারখানা খোলা হয়েছে। এখন যদি গ্যাসের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে পোশাক রপ্তানিও ব্যাপকভাবে ব্যহত হবে। সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে না পারলে কোটি কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে যাবে। কারখানা মালিকরা দ্রুত গ্যাস সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাস ক্ষেত্র রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিতাস অধিভুক্ত ধনুয়া, জয়দেবপুর, সাভার, আশুলিয়া, কোনাবাড়ি, টাঙ্গাইল, এলেঙ্গা, নরসিংদী ও ঢাকা শহরের উত্তরাংশে গ্যাসের তীব্র স্বল্পচাপ বিরাজ করছে। গ্রাহকের অসুবিধার জন্য তিতাস গ্যাস আন্তরিকভাবে দুঃখিত।