চলতি বছরের মে মাসে ইতালিতে এক তরুণীকে ভুল করে ছয় ডোজ ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ৯মে এই ঘটনাটি ঘটেছে। দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ২৩ বছরের ওই নারীকে মধ্য তুসকানির মাসা এলাকায় নিজের বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তবে আলাদাভাবে টিকার ছয়টি ডোজ পুশ করার ঘটনা তার ক্ষেত্রে ঘটেনি। একটি সিরিঞ্জে ভুলবশত ছয় ডোজের সমপরিমাণ ওষুধ নিয়ে পুরোটা একবারে তার দেহে প্রয়োগ করেন দায়িত্বরত নার্স।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে সে সময় জানানো হয়, অমনোযোগী হয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন ওই নার্স। ফাইজার-বায়োএনটেকের গবেষণালব্ধ করোনা প্রতিরোধী কোমির্নাটি টিকা দেয়া হয়েছিল তরুণীকে।
টিকা দেয়ার পরপরই নিজের ভুল বুঝতে পারেন নার্স। বিষয়টি তৎক্ষণাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান তিনি।
এরপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ওই তরুণীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। পর্যবেক্ষণে রাখা হয় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা। সেখানে তাকে স্যালাইনজাতীয় তরল, প্রদাহবিরোধী ও জ্বরের ওষুধ ইত্যাদি দেয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়ায় পরদিন সুস্থ অবস্থাতেই হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন ওই তরুণী।
নোয়া হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক ড. অ্যান্তোনেলা ভিনসেন্তি সে সময় বলেন, ‘অন্তত এখনই তার দেহে কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না বলে আমরা নিশ্চিত। তিনি একটু ভয় পেয়েছিলেন। তবে তার জ্বর আসেনি। সূঁচ প্রয়োগের স্থান ছাড়া আর কোথাও কোনো ব্যথাও নেই।’
ড. ভিনসেন্তি জানন, গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের করোনা প্রতিরোধী টিকার স্বাভাবিক যে ডোজ, কোনো ব্যক্তিকে এর পাঁচগুণ পরিমাণ দেয়া হলেও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না।
ইতালির আগে ইসরায়েল আর জার্মানিতেও করোনার টিকাদান কর্মসূচিতে এমন কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেন ডা. ভিনসেন্তি। তিনি জানান, ওইসব ঘটনায় ভুলবশত স্বাভাবিক ডোজের পাঁচগুণ বেশি পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে এরপরেও টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
ভিনসেন্তির মতে, পরবর্তীতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও তা হয়ত দীর্ঘমেয়াদি কিছু হবে না। উদাহরণ হিসেবে তরুণীর দেহে অ্যান্টিবডি ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকার কার্যক্ষমতা কম-বেশি হওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
ইতালির ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন জানায়, ছয় ডোজ টিকা পাওয়া তরুণীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তার রক্ত পরীক্ষা করা হবে। কয়েক সপ্তাহ পর তাকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার দরকার আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
তাস্ক্যানির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের রোগী-নিরাপত্তাবিষয়ক পরিচালক ডা. তোমাসো বেলান্দি জানান, ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা প্রতিরোধী টিকার একেকটি শিশি বা ভায়ালে ছয় ডোজের সমপরিমাণ ওষুধ থাকে। সেখান থেকে আলাদাভাবে একটি করে ডোজ নিয়ে আলাদা ভায়ালে বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে মেশানোর পর টিকা হিসেবে প্রয়োগ করা হয়।
তবে ওই তরুণীকে একবারে ছয় ডোজ টিকা দেয়া নার্স ভুল করে পানি মেশানো ছাড়াই ভায়ালের সবটুকু ওষুধ সিরিঞ্জে নিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর তিনি তরুণীকে টিকা প্রয়োগ করেন।
ডা. বেলান্দি বলেন, ‘ওই নার্স ভেবেছিলেন, মূল ভায়াল থেকে আগেই প্রতি ডোজ আলাদা করে নেয়া হয়েছে। সবগুলো ভায়াল দেখতে একরকম আর ভেতরের তরলের রং ও ঘনত্ব এক বলে পার্থক্য ধরতে পারেননি তিনি। এ কারণেই এমন ভুল করে বসেন।’
খুব ব্যস্ত একটি দিনে এমন ঘটনা ঘটে গিয়েছিল বলে দায়স্বীকার ও দুঃখ প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তরুণীর পরিবারকে এ বিষয়ে অবহিত করাসহ চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন বলে জানায় প্রশাসন।
এদিকে বাংলাদেশের ওমর ফারুকের দাবি, তাকে পরপর তিনবার করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। তার এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলেও এভাবে ‘ভুল করে’ একসঙ্গে টিকার একাধিক ডোজ পাওয়া ব্যক্তি বিশ্বে তিনিই প্রথম নন। মাত্র দুমাস আগেই ইতালির এক তরুণী একসঙ্গে করোনা টিকার ছয় ডোজ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হন।
একসঙ্গে করোনার তিন ডোজ টিকা পাওয়ার অভিযোগ তোলা ওমর ফারুককে নিয়ে দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। প্রথম দিকে বিষয়টি অস্বীকার করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার জানায়, তাদের কেন্দ্র থেকে টিকা নেয়া ফারুককে হাসপাতালে ভর্তি করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ওমর ফারুক দাবি করেছেন, বিএসএমএমইউর টিকাদান কেন্দ্রে যাওয়ার পর তিনটি বুথ থেকে তাকে পরপর তিনবার টিকা দেয়া হয়েছে। তার এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলেও এভাবে ‘ভুল করে’ একসঙ্গে টিকার একাধিক ডোজ পাওয়া ব্যক্তি বিশ্বে তিনিই প্রথম নন। মাত্র দুমাস আগেই ইতালির এক তরুণী একসঙ্গে করোনা টিকার ছয় ডোজ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন।