Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘নাড়ির টানে’ যাওয়া মানুষগুলো রাজধানীতে ফিরলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা 

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২১, ০৬:০৯ PM
আপডেট: ২২ জুলাই ২০২১, ০৬:০৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ইয়াসমিন আক্তার।। টানা দুই সপ্তাহ কঠোর লকডাউনের পর পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করে সরকার। সারা বছর ইটপাথরের এই রাজধানীতে বসবাস করা শ্রমজীবী মানুষগুলো নাড়ির টানে নিরাপদে গ্রামে যেয়ে পরিবার পরিজনের সঙ্গে মিলিত হতে পারে সেই জন্য বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ফেরিতে, পণ্যবাহী যানবাহনে, যে যেভাবে পেড়েছে বাড়ি গিয়েছেন।

ঘরমুখো মানুষের গাড়ির চাপে মহাসড়কে ছিল তীব্র যানজট। কোথাও মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। স্বাস্থ্য সুরক্ষার সাধারণ অংশ হিসেবে মাস্কও পরেনি অধিকাংশ মানুষ। বিপরীতে ঈদের দিন ও পরের দিন করোনায় ৩৬০ জনের  মৃত্যু দেখেছে সারাদেশ। প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকা। গত কয়েকদিন ধরে মানুষ যেভাবে ঠাসাঠাসি করে বাড়ি ফিরছেন তাতে দেশে করোনার সংক্রমণ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ঈদুল আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশুরহাটও বসেছিলো রাজধানীসহ দেশের সব এলাকায়। খুলে দেওয়া হয় দোকান, শপিংমল, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদে যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে, কোরবানির পশুরহাটে ঘোরাঘুরি করেছে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে যেভাবে মেলামেশা করেছে, শপিং করছে- তাতে করোনা  সংক্রমণের গতিরোধ করা বহুগুণ কঠিন হয়ে পড়বে। রীতিমতো বিনাচিকিৎসায় মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঈদ যাত্রায় যারা বাড়ি গিয়েছেন তাদের নিজেদের সংক্রমিত হওয়ার এবং তাদের শহরে ফিরে আসার মাধ্যমে অন্যদের মাঝেও  সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
গত ২১ জুলাই গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বার্তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। হাসপাতালের শয্যাগুলো রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে সতর্কতার বিকল্প নেই। সেজন্য সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ও মাস্ক পরতে হবে।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার কারণে ঈদের সাত থেকে দশ দিন পর সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘এখনই দৈনিক ১২-১৩ হাজারের মতো রোগী শনাক্ত হচ্ছে, সংক্রমণ হারও ২৯ শতাংশের ওপরে, আমাদের মতো দেশের জন্য এটি খুবই খারাপ অবস্থা। কিন্তু মানুষের বেপরোয়া আচরণের কারণে আমরা সবাই বিপদে পড়তে যাচ্ছি।’

গত ১৫ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ছয় দিনে প্রায় ৮৩ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ২১ তারিখের হিসাব ধরলে প্রায় ১ কোটির উপরে মানুষ রাজধানী ছেড়েছে। যেহেতু ঈদের এক দিন পর পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শাটডাউন শুরু হবে সেহেতু ঈদের পরদিনই রাজধানী ফিরতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ। 

স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গের মতে এখন যারা রাজধানীতে ফিরছেন তাঁদের  অধিকাংশই করোনা বাহক। গ্রামে যাওয়া-আসা ছাড়াও গরুর হাট ও ঈদকেন্দ্রিক সামাজিক যোগাযোগে করোনার সংক্রমণ কোন্ মাত্রায় ছড়িয়েছে— সেটা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত সপ্তাহদুয়েক। সুনির্দিষ্ট করে বললে, আগস্টের মাঝামাঝিতে স্পষ্ট হয়ে যাবে ভেতরে ভেতরে করোনা কতোটা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ বলছেন, করোনার রূপ যাই হোক না কেন চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যেতে পারে হাসপাতালগুলো।

এদিকে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি ৭০ ভাগ রোগী মফস্বলের। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে রোগীরা রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের ৭০৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি ছিল মাত্র ৫৪টি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, বেড, আইসিইউ সব ফিলআপ। প্রচুর রোগী এখন, অধিকাংশ রোগীই বাইরের জেলার। অনেক ক্রিটিক্যাল রোগী আসছে এখন। বিভিন্ন জেলা থেকে যারা আসছে, তারা আরও আগে আসলে ভালো হত। কিন্তু তারা যখন দেখছে, কিছুই করার নেই- তখনই তারা আসছে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক অসীম কুমার নাথ বলেন, আমাদের অর্ধেকের বেশি রোগীই ঢাকার বাইরের। ক্রিটিক্যাল রোগীরাই বেশি আসছে। গত তিন দিন আগে সাতজন মারা গিয়েছিল। প্রতিদিনই গড়ে তিনজন মারা যাচ্ছে। আইসিইউ গত তিন সপ্তাহ থেকে খালি নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন আমাদের এখানে রোগীর সংখ্যাও অনেক বেশি। আর সিরিয়াস রোগীই বেশি। আইসিইউ একটাও খালি নেই। কিছু বেড খালি আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কোভিড-১৯ বিষয়ক ‘জাতীয় কারিগরি কমিটি’র সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। মানুষ যেভাবে গ্রামে গিয়েছে, পশুর হাটে ঘুরছে... কেউই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করেনি। এর ফলে ঈদের কিছুদিন পর সংক্রমণ আরও বাড়বে, মৃত্যুও বাড়বে। সংক্রমণ এখনই ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে, এটি আরও বাড়লে কী যে অবস্থা হয়, বলা মুশকিল।’

এদিকে ঈদের পর রাজধানীতে করোনার সংক্রমণ বহুগুণ বাড়বে বিষয়টি নিয়ে সরকারও চিন্তিত। তার জন্য পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার ২৩ তারিখ ভোর  থেকেই দেশজুড়ে আবার দুই সপ্তাহের শাটডাউন শুরু হচ্ছে। মানুষের অবাধ চলাফেরায় এবারের বিধিনিষেধ ‘সবচেয়ে কঠোর’ হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অফিস-আদালত, গার্মেন্টস-কলকারখানা ও রফতানিমুখী সব কিছুই বন্ধ থাকবে। এটা এ যাবতকালের সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ হতে যাচ্ছে। এ সময়ে মানুষের বাইরে আসার প্রয়োজনই হবে না। কারণ অফিসে যাওয়ার বিষয় নেই। যারা গ্রামে গেছেন, তারা জানেন যে অফিস বন্ধ। তাদের ৫ তারিখের পরে আসতে হবে। সংক্রমণ রোধ করা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। প্রত্যেকেরই নিজের জায়গা থেকে সচেতন থাকতে হবে। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই ১৪ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এটা ১৪ দিন সফলভাবে করতে পারি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারব। না হলে এটা (করোনা সংক্রমণ) বাড়তে থাকবে। হাসপাতালে যে চাপ তা ম্যানেজ করতে অসুবিধা হবে। তাই সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

Bootstrap Image Preview