নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজীবসহ ৮ জনের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার (১০ জুলাই) বিকেলে পুলিশ তাদের নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খানমের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালতের বিচারক প্রত্যেকের ৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার আট আসামী হলেন, সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাশেম (৭০), তার ছেলে হাসীব বিন হাশেম (৩৯), তারেক ইব্রাহীম (৩৫), তাওসীব ইব্রাহীম (৩৩) ও তানজিম ইব্রাহীম (২১)। অন্যরা হলেন, সজীব গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ (৪৩), হাশেম ফুডস লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশীদ (৫৪), হাশেম ফুডস লিমিটেডের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কাম অ্যাডমিন মো. সালাউদ্দিন (৩০)।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) জাহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা দায়ের করে মালিক হাসেমসহ মালিকপক্ষের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে অন্যান্য জড়িতদের নাম শনাক্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও তার ছেলে প্রতিষ্ঠানের এমডি সজিব, কারখানার সিইওসহ ৮ জনকে এজাহারে আসামী করে এবং আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে রেখে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন রূপগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক ও ভুলতা পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ নাজিমউদ্দিন মজুমদার।
শনিবার (১০ জুলাই) অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত কারখানা পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সাংবাদিকদের ৮ জন আটকের বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ও মর্মান্তিক। যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত করছি এবং আশা করছি যারা অসুস্থ তারা ফিরে আসবেন। কারখানার আগুনের ঘটনায় মামলা হবে। তদন্ত করে দোষীদের বিচার হবে। গাফিলতি বিন্দুমাত্র থাকলে কারো ছাড় নেই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তের পরই বলা যাবে কার দোষ কতটুকু। কিন্তু তদন্তে কারো নির্মাণ ত্রুটি, শ্রমিক পরিচালনায় ত্রুটি বা কেউ যদি সামান্য ভুলও করে থাকেন তবে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটে। এতে ডেমরা, কাঞ্চনসহ ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। শুক্রবার (৯ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় কারখানাটির আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুস কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। সাততলা ভবনে থাকা কারখানাটির নিচতলার একটি ফ্লোরের কার্টন থেকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কালো ধোয়ায় কারখানাটি অন্ধকার হয়ে যায়। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা ছোটাছুটি করতে শুরু করে। কেউ কেউ ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। আবার কেউ কেউ ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়তে শুরু করেন।