Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

হিজড়াদের জন্মগত ত্রুটি সারানো যায়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ মে ২০২১, ১২:০১ PM
আপডেট: ২২ মে ২০২১, ১২:০১ PM

bdmorning Image Preview


সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তন হয়ে ছেলে বা মেয়ে কোনোটি না হয়ে হিজড়ায় পরিণত হয় অনেকে। আবার অনেকের জন্ম হয় ছেলে হিসেবে; কিন্তু কৈশোরে লিঙ্গান্তরিত মেয়েতে রূপান্তরিত হয়। অথবা মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তরিত হয়। এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয়, ০.০১৮-১.৭ ভাগ শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। ট্রান্স জেন্ডার, হার্মাফ্রোডাইট, খোজা, শিখণ্ডী, বৃহন্নলা, উভয় লিঙ্গ ইত্যাদি নামে  ডাকা হয় হিজড়াদের। কিন্তু হিজড়া হওয়ার কারণে তাদের থাকে না কোনো নাগরিক অধিকার। সমাজে তাদের পরিচয় হয় তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে।

এটা জন্মগত ত্রুটি
হিজড়া/লিঙ্গান্তর এক ধরনের ইন্টার সেক্স ডিজঅর্ডার (আইএসডি) বা ডিজঅর্ডারস অব সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট (ডিএসডি) জাতীয় জন্মগত ত্রুটি। কয়েকটি ইন্টার সেক্স ডিজঅর্ডার হলো : কঞ্জেনিটাল এড্রিনাল হাইপার প্লাসিয়া, অভোটেস্টিকুলার ডিজঅর্ডার অব সেক্স ডেভেলপমেন্ট, টেস্টোস্টারন বায়োসিন্থেসিস ডিফেক্ট, এস্ট্রোজেন ইন্সেসিটিভিটি সিনড্রোম, গোনাডাল ডিসজেনেসিস ইত্যাদি।

বোঝার উপায়
কোনো শিশু হিজড়া হয়ে জন্ম নিচ্ছে কি না তা বোঝা সম্ভব। এ জন্য জন্মের পরপরই শিশুদের নাক, কান, চোখ, মুখগহবর, হাত-পা, মলদ্বার, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অনেক শিশুর যৌনাঙ্গ দেখে ছেলে বা মেয়ে বুঝতে অসুবিধা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই পরবর্তীতে হিজড়া হয়। আবার অনেক শিশু ছোট বেলায় নিখুঁত মেয়ে বা ছেলে হিসেবে বড় হয়; কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে লিঙ্গান্তর ঘটে ছেলে ও মেয়ে হয়; আবার মেয়ে ছেলে হয়। এদের অনেকেরই যতই লিঙ্গান্তর হোক না কেন পূর্বের লিঙ্গের কিছু বৈশিষ্ট্য থেকে যায়। ফলে সমাজে তারা হিজড়া হিসেবে পরিগণিত হয়।

কারণ
হিজড়া হওয়ার মতো জন্মগত ত্রুটির সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে এ জন্য কিছু বিষয়কে দায়ী করা হয়, যেমন—

►   গর্ভাবস্থায় ভুল ওষুধ সেবন। বিশেষ করে হরমোনজাতীয় ওষুধ

►   পরিবেশ দূষণ/তেজস্ক্রিয়তা

►   নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে

►   ক্রমোজমের সমস্যা ইত্যাদি।

করণীয়
►   পরিকল্পিত গর্ভধারণ। গর্ভধারণের আগে থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা।

►   নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে পরিহার করা

►   গর্ভধারণের আগে/গর্ভধারণ অবস্থায়  তেজস্ক্রিয়তা থেকে দূরে থাকা।

►   চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করা।

পরীক্ষা
ক্রমোজম অ্যানালিসিস, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, হরমোন পরীক্ষা ইত্যাদি।

সতর্কতা
শিশুর যৌনাঙ্গ নিয়ে কোনো সন্দেহ হলে অথবা শরীরে কোনো প্রকার অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

চিকিৎসা
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে হিজড়ারা ছেলে কিংবা মেয়ে হিসেবেই বেড়ে উঠতে পারবে এমনকি তাদের অনেকে সন্তান জন্মদানও করতে পারবে। তবে চিকিৎসা নির্ভর করছে কোন বয়সে যৌনাঙ্গ বা শরীরে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় তার ওপর। এ জন্য প্রথমেই শিশুর ক্রমোজম অ্যানালিসিস করে জেনো টাইপ ঠিক করে নিতে হবে। অনেক সময় তা সম্ভব না-ও হতে পারে। অস্বাভাবিকতার সঠিক কারণ নির্ধারণ করে মা-বাবার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনে সন্তান সাবালক হলে তার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে ঠিক করতে হবে সে পুরুষ হবে, না নারী হবে। অস্বাভাবিকতার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসাব্যবস্থা, অপারেশন বা ওষুধ। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে তারা পুরুষ কিংবা নারী হিসেবেই বেড়ে উঠবে। অনেকে মা-বাবাও হতে পারবে।

অধ্যাপক ডা. বিজয় কৃষ্ণ দাস, শিশু সার্জারি বিভাগ, কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা

Bootstrap Image Preview