Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কৌশলে রাজধানি থেকে ছাড়ছে দূরপাল্লার বাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ মে ২০২১, ০৪:০০ AM
আপডেট: ১০ মে ২০২১, ০৪:০০ AM

bdmorning Image Preview


শনিবার, দুপুর ২টা। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল বেশ নীরব। সড়কে পুলিশের শক্ত অবস্থান। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস চালকরা যাত্রী ডাকলেই তাড়িয়ে দিচ্ছেন তাদের। কাউন্টার অধিকাংশই বন্ধ। তবে যাত্রীদের উপস্থিতি সরব। কাউন্টারের কাছে দাঁড়াতেই এক ব্যক্তি বললেন, কই যাবেন?

নাম তার সবুজ। রংপুর যাবার ইচ্ছা পোষণ করতেই মোবাইল নম্বর লেখা কাগজ দিয়েই সটকে গেলেন।আর বললেন, ভাই ফোন দেন। কিছুটা দূরে কালো কাপড়ঘেরা চায়ের দোকানে ঢুকলেন। সাধারণ সময়ে ঢাকা-রংপুর নন-এসি বাস ভাড়া ৫০০ টাকা। ফোন দিতেই বললেন, কয়জন যাবেন? দুইজন উত্তর দেয়ার পর বললেন, ভাই বাস ছাড়বে রাত একটায়। বাইপাইল থেকে। ভাড়া ১৩০০ টাকা করে ২৬০০ টাকা। অগ্রিম এক হাজার টাকা দেয়া লাগবে। প্রতি সিটে লোক যাবে। যাইতে চাইলে টাকা পাঠান। সিট দেবেন দুই নম্বর সারিতে বলে জানান তিনি। কোন্‌ বাস যাবে? এর জবাবে সবুজ বলেন, বাস এখনো ঠিক হয় নাই। বড়, ভালো বাসই দেবো।

প্রতিটি কাউন্টারের পাশেই সবুজের মতো লোকদের দেখা মেলে। কাউন্টারের পাশে দাঁড়াতেই ধীরে সুস্থে বলে উঠেন কই যাবেন? সবুজের কাছে বিকাশে টাকা পাঠিয়ে টিকিট নেন শাওন আহমেদ সাজু। তার গন্তব্য দিনাজপুর। সাজু পরিবারের চার জনের জন্য দুই হাজার টাকা দিয়ে চারটি টিকিট নেন। তবে হাতে কোনো টিকিট মেলেনি। সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ওপর টাকা দিয়েছেন।

শনিবার দুপুরে দেখা যায়, তীব্র রোদে যাত্রীরা সব আমিনবাজার ব্রিজের দিকে যাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে সঙ্গী হয়ে গাবতলী পার হয়ে ব্রিজের দিকে যেতেই পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়ে। ব্রিজ পার হতেই ভিন্ন চিত্র। প্রাইভেটকার, মাইক্রো, মোটরসাইকেল চালকরা ডাকছেন। তারা দূরপাল্লার যাত্রী খুঁজছেন।

ব্রিজের গোড়াতেই দাঁড়ানো ছিল রাজধানীতে অভ্যন্তরীণ একটি বাস। তারা পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিচ্ছেন। সাধারণ সময়ে ভাড়া ১২০ টাকা হলেও তারা চাইলেন ২৫০ টাকা করে। সেই বাসে করেই যাত্রা। বাসটি সাভার থেকে মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে সিংগাইর দিয়ে যায়। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই চলে যায় পাটুরিয়া ঘাট। ছোট সড়কে বাস ঢোকায় বারবার বিঘ্ন ঘটছিলো চলাচলে। তবে পুলিশের কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি বাসটিকে। সেখানে যাত্রীরা ফেরিতে করে পাড়ি দেন গন্তব্যে। ঘাটে যাত্রীদের চাপ ছিল খুবই কম।

রাত ১১টা। নবীনগর এলাকায় দেখা মেলে সারি করে দাঁড়ানো আটটি দূরপাল্লার বাস। রংপুর যাবার ইচ্ছা পোষণ করতেই দেখিয়ে দিলেন রাকিব পরিবহন। একেকটি বাস একেক গন্তব্যের। বাসগুলো হলো- রাকিব পরিবহন (রংপুর), যুঁথি পরিবহন (দিনাজপুর), যাত্রা পরিবহন (নীলফামরী), লালন পরিবহন (কুষ্টিয়া), পার্থ পরিবহন (কুড়িগ্রাম)সহ গাইবান্ধা, বগুড়া ও নওগাঁ যাবার বাস।

রাকিব পরিবহনের কাছে যেতেই জানালেন রংপুরের ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা। বাস ছাড়বে ১২টার পর। বাসে কোনো সমস্যা হবে কিনা? উত্তরে বাসের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আরে ভাই আপনি বাসে বসবেন বাকি দায়িত্ব আমাদের। রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সেখানে যাত্রীদের ডাকতে দেখা যায়। যাত্রী পূরণও হয়ে যায়। পরে যাত্রী আসলে সিট নেই বলে জানিয়ে দিচ্ছিলেন তারা।

রাজধানীর আমিনবাজার এলাকা। রাত তখন ১টা। আমিনবাজারে তখনো কার, মাইক্রোবাসচালকরা যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করছেন। এ ছাড়াও ট্রাক, পিকআপ ভ্যানেও যাত্রীদের হাঁকডাক চলছে। কার, মাইক্রো, হাইচ গাড়িতে দূরত্বভেদে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকা। আর ট্রাকে ভাড়া পাঁচশ’ থেকে আটশ’ টাকা। রাত দেড়টার দিকে গাবতলীতে যাত্রীদের হাঁকডাক চলছে। যাত্রী ঠিক হলে পিকআপ, সিএনজি’তে করে বাইপাইলে নিয়ে যাচ্ছেন। দিনাজপুরের যাত্রী নিয়ে তখন রওনা হলো একটি পিকআপ। যাত্রী ছিল বাচ্চাসহ নয়জন। তাদের পিকআপে করে বাসে উঠিয়ে দেয়া হবে। ভাড়া রাখা হয়েছে ১৩০০ টাকা করে।

দুপুরে শাওন আহমেদ সাজু চারজনের টিকিট ক্রয় করেছিলেন। দুই হাজার টাকা দিয়েছিলেন বিশ্বাসের ওপর। রোববার দুপুরে তাকে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, গাড়ি ১টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ২টার দিকে। সিট দিয়েছেন কথামতো দ্বিতীয় সারিতেই। তিনি বলেন, দিনাজপুরে পৌঁছাইছি বেলা ১২টায়। গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ভোর পাঁচটার দিকে। আবার সজাগ ছিলাম ১০টা থেকে। এরমধ্যে তিনবার বাস আটকিয়ে ছিল পুলিশ। টাঙ্গাইলে এক হাজার ও সিরাজগঞ্জে ১২০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছে শুনেছি। আর দিনাজপুর আসার আগে একবার আটকিয়ে ছিল- তবে টাকা দিতে হয়েছে কিনা জানি না। তিনি আরো বলেন, রাস্তায় অনেক বাস ছিল। যানজটে পড়তে হয়েছে অনেকবার। ছোট একটা হোটেলে যাত্রা বিরতি দিয়েছিলো। সেখানেও ৮/১০টি বাস দাঁড়িয়ে ছিল।

সূত্রঃ মানবজমিন/ পিয়াস সরকার

Bootstrap Image Preview