Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ঈদে বাড়ি যেতে হেলিকপ্টার ভাড়া করবেন যেভাবে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২১, ০২:৫৫ AM
আপডেট: ০৮ মে ২০২১, ০২:৫৫ AM

bdmorning Image Preview


যদি আপনার হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকে তাহলে ঈদের বিরক্তিকর যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়ার একটা ব্যবস্থা হতে পারে – তা হলো হেলিকপ্টারে ঈদযাত্রা।

ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যান প্রিয়জনদের সঙ্গে ছুটি কাটাতে। কিন্তু, তীব্র যানজট, অতিরিক্ত যাত্রী বহন অথবা শিডিউল বিপর্যয়ের ফলে বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে বাড়ি যেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় তাঁদের। এরপর, বোঝার ওপর শাকের আঁটি হিসেবে যোগ হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।

হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, এমন পরিস্থিতিতে অনেক সচ্ছল ব্যক্তি হেলিকপ্টারে বাড়ি যাওয়াটাকে পছন্দ করতে পারেন। দেশে ১০টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৫টি হেলিকপ্টার নিয়ে এই সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এর ভাড়াটা নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। যেমন, ছয় আসনের একটি হেলিকপ্টারে ঘণ্টায় খরচ পড়বে এক লাখ টাকার মতো।

দেশের সবচেয়ে বড় হেলিকপ্টার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আর অ্যান্ড আর এভিয়েশনের চিফ অব প্রটোকল ফরহাদ আলম জানান, ঈদ উপলক্ষে তারা ‘ভালো সাড়া’ পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা অনেকগুলো বুকিং পেয়েছি এবং আরও বুকিং পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

হেলিকপ্টার সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে। এদের তিন, চার, ছয় এবং সাত সিটের মোট ছয়টি হেলিকপ্টার রয়েছে। যাত্রীরা প্রতি ঘণ্টায় ৭১,৩০০ টাকা থেকে ১৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে এই সেবা নিতে পারেন। তাঁর মতে, বিদেশি ক্রেতা, ব্যবসায়ী এবং ভিআইপিরা এই সেবা গ্রহণ করেন।

তবে, খারাপ আবহাওয়ার কারণে হেলিকপ্টার সেবা বিঘ্নিত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিআরবি এয়ার লিমিটেডের ফ্লাইট অপারেশনস ম্যানেজার তানজীব মজুমদার বলেন, ২২ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত তাদের সব ফ্লাইটের বুকিং এক সপ্তাহ আগেই হয়ে গেছে।

তাদের হেলিকপ্টার চড়তে প্রতি ঘণ্টায় একজন যাত্রীকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়। এ বাদেও বিআরবি’র হেলিকপ্টারে কোথাও গেলে রিটার্ন টিকেটের ভাড়াও দিতে হয়।

তিনি আরও জানান, দিন দিন তাদের হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা বাড়ছে।

স্কয়ার এয়ার লিমিটেড এর ফ্লাইট অপারেশনস ম্যানেজার শেখ আসাদ বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা বেড়ে যায়। আগের বছরের তুলনায় এ বছরেও চাহিদা বেড়েছে।

তিনি জানান যে বিদেশি নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এই সেবার প্রধান গ্রাহক। স্কয়ারের একটি ছয় আসনের এবং একটি চার আসনের হেলিকপ্টার রয়েছে। ছয় আসনের হেলিকপ্টারের জন্যে তারা ঘণ্টা প্রতি এক লাখ টাকা নেন এবং রোগীদের জন্যে তা কমিয়ে ৯০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। চার আসনের হেলিকপ্টারে নেওয়া হয় ৬৫ হাজার টাকা।

মেঘনা এভিয়েশন লিমিটেডের একাউন্টস অ্যান্ড কাস্টমার কেয়ার অফিসার মঞ্জুর আলম বলেন, ঈদের আগে তাদের আরও কয়েকটি ফ্লাইট রয়েছে।

তবে কুলিয়ারচর এভিয়েশন লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন এন্ড ফিন্যান্স) আহসানুল কবির জানান, ‘খারাপ আবহাওয়ার কারণে’ এবার তারা ভালো সাড়া পাননি।

ঈদের সময় সড়কপথে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে তাদের হেলিকপ্টারের চাহিদা বাড়তে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

হেলিকপ্টারের কোন নির্দিষ্ট রুট নেই উল্লেখ করে আহসানুল আরও জানান, একটি ফ্লাইট চালানোর তিন দিন আগে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। তবে, জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতে, বিশেষ করে চিকিৎসার জন্যে, এক-দুই ঘণ্টা আগে অনুমতি নেওয়া যায়।

সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স লিমিটেড (এসএএএল) বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার চালানো শুরু করেছিলো প্রায় দেড় দশক আগে। তবে, ২০১০ সালের পর থেকে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এই ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা ও সম্ভাবনা খুঁজে নিচ্ছে।

ফ্লাইট অপারেটরদের মতে, সড়কপথে যানজট এড়ানো ও স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্যে ব্যবসায়ী, কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ, বিদেশি ক্রেতা এবং দাতাগোষ্ঠীদের বিশিষ্টজনেরা ঢাকার বাইরে কোন পরিদর্শনে যাওয়ার সময় হেলিকপ্টারকে সহজ মাধ্যম হিসেবে ভাড়া নেন।

বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেড, ইমপ্রেস এভিয়েশন লিমিটেড, পারটেক্স এভিয়েশন লিমিটেড এবং বসুন্ধরা এয়ারওয়েজেরও হেলিকপ্টার সেবা রয়েছে বলে তাঁরা জানান।

বাংলাদেশে বেশ কিছু বেসরকারি কোম্পানি হেলিকপ্টার সেবা ভাড়া দিয়ে থাকে। আসুন, এক নজরে তাদের কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

স্কয়ার এয়ার লিমিটেড: এই কোম্পানিটির ছয়জন যাত্রী বহনের ক্ষমতা সম্পন্ন বেল-৪০৭ হেলিকপ্টারের ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। আর চারজন যাত্রী বহনে সক্ষম রবিনসন আর-৬৬-র ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়াও হেলিকপ্টারের প্রতি ঘণ্টায় ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ ছয় হাজার টাকা। সেই সঙ্গে প্রতি ফ্লাইটে ইনস্যুরেন্স খরচ হিসেবে গুনতে হবে দুই হাজার টাকা।

যোগাযোগের ঠিকানা: স্কয়ার এয়ার লিমিটেড স্কয়ার সেন্টার, ৪৮ মহাখালী বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা।

সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স: এই এয়ারলাইন্সটি সাধারণ কাজের জন্য ঘন্টায় ৫৫ হাজার টাকায় হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকে। কিন্তু সিনেমার শুটিং, লিফলেট বিতরণসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজের জন্য ভাড়া ৩০ শতাংশ হারে বেশি। ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ প্রতি ঘণ্টার জন্য পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া পুরো খরচের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করতে হয়। এই কোম্পানি থেকে চাইলে নূন্যতম ৩০ মিনিটের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া যায়। জ্বালানি খরচ, ইনস্যুরেন্সসহ বাকি সব কিছু কোম্পানিই বহন করে থাকে।

যোগাযোগের ঠিকানা: সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স লিমিটেড, টাওয়ার হেমলেট, ১৬ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বনানী, ঢাকা।

সিকদার গ্রুপ: সিকদার গ্রুপের তিনটি হেলিকপ্টার রয়েছে। এগুলো হল বেল-৪০৪, আর-৬৬ ও আর-৪৪। সাত সিটের প্রতিটি হেলিকপ্টারের ক্ষেত্রে ভাড়া ঘণ্টায় এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। তিন সিটের ক্ষেত্রে ভাড়া ঘণ্টায় ৭২ হাজার টাকা। সঙ্গে ভ্যাট ১৫ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। এই কোম্পানির হেলিকপ্টার গুলোতেও প্রতি ঘণ্টায় ভূমিতে অপেক্ষমাণ চার্জ হিসেবে দিতে হবে সাত হাজার টাকা।

যোগাযোগের ঠিকানা: সিকদার গ্রুপ রাজ ভবন, দ্বিতীয় তলা, ২৯ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা। ফোন নম্বর ৯৫৫০২৭১।

ইমপ্রেস অ্যাভিয়েশন লিমিটেড: ইমপ্রেস অ্যাভিয়েশন লিমিটেড ৬ আসন বিশিষ্ট ইসি ১৩০বি-৪ হেলিকপ্টার সর্বনিম্ন ১ ঘণ্টার জন্য ভাড়া নেওয়া যাবে। প্রতি ঘণ্টায় ভাড়া গুনতে হবে এক লাখ টাকা। সেই সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ভূমিতে প্রতি ঘণ্টার জন্য এরা চার্জ করে থাকে ৫ হাজার টাকা।

যোগাযোগের ঠিকানা: ইমপ্রেস অ্যাভিয়েশন লিমিটেড, ৪০ শহীদ তাজউদ্দীন সরণি, তেজগাঁও, ঢাকা।

বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেড: বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ছয় থেকে সাতজন যাত্রী বহনের ক্ষমতা সম্পন্ন বেল-৪০৭ হেলিকপ্টারের জন্য ভাড়া গুনতে হবে প্রতি ঘণ্টায় এক লাখ টাকা। আর তিনজন যাত্রী বহনে ক্ষমতা সম্পন্ন রবিনসন আর-৪৪-এর ভাড়া প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার টাকা। এই সব ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট সংযুক্ত করতে হবে।

যোগাযোগের ঠিকানা: বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স লিমিটেড, ৬৮/১ গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১ ঢাকা।

এসবের বাইরেও আরও কিছু কোম্পানি হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকে, তবে এই কোম্পানিগুলোই বর্তমানে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে ভালো সেবা দিয়ে থাকে।

হেলিকপ্টারের বুকিং দেবার সময় আপনাকে কোম্পানিকে জানাতে হবে, আপনি কোথা থেকে কোথায় যেতে চান, কোন রুট বা আকাশপথ আপনি ব্যবহার করবেন। যেহেতু আকাশে উঠলে সবদিকেই যাওয়া সম্ভব, তাই আকাশে ওড়ার সময় অন্য কোন আকাশযানের সমস্যা তৈরি না হয়, তাই অবশ্যই আপনার পথ পরিকল্পনা ও সময়সূচী সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। আপনি কোম্পানিকে জানিয়ে দিলে তারাই সেটা করবে।

এছাড়াও বুকিং দেবার সময় হেলিকপ্টার ফ্লাইট প্লান অনুসারে মোট ভাড়ার ৫০ শতাংশ আগেই পরিশোধ করতে হবে। বাকি টাকা দিতে হবে হেলিকপ্টার আকাশে উড়বার আগে।

Bootstrap Image Preview