Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তবলিগ জামাতের দু'পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পেছনে হেফাজতের হাত

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মে ২০২১, ০৪:১৯ PM
আপডেট: ০৪ মে ২০২১, ০৪:১৯ PM

bdmorning Image Preview


হেফাজতে ইসলাম ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। শাপলা চত্বর ঘিরে তাদের কর্মসূচিতে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে জড়ো করানো হয়। একই স্টাইলে চলতি রমজানে দ্বিতীয় ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছিল হেফাজত। এ ছাড়া তবলিগ জামাত ভাঙার পেছনেও হেফাজতের ইন্ধনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। হেফাজতের সদ্য সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ একাধিক নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম সমকালকে বলেন, তবলিগ জামাত ভাঙার ব্যাপারে নতুন তথ্য পেয়েছি। তবলিগ জামাত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে। এতে ইজতেমার জৌলুস আগের চেয়ে কমে গেছে। তবলিগ জামাতকে পরিকল্পিতভাবে ভাঙতে হেফাজতের কোনো কোনো নেতা দীর্ঘদিন কাজ করেছে, যাতে অরাজনৈতিক এই সংগঠন তাদের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়। এটা ছিল তবলিগ জামাত ভাঙার অন্যতম উদ্দেশ্য। হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তবলিগ জামাত ভাঙার ব্যাপারে এমন বক্তব্য তারা দিয়েছেন।

দিল্লি ও লাহোরের নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৮ সালে বিভক্ত হয়ে পড়ে তবলিগ জামাত। এ দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসার আলেমদের একটি অংশ যুক্ত হয়ে পড়ে। তারা একটি পক্ষকে সমর্থন দেওয়ায় এ বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে মনে করছেন তবলিগ জামাত-সংশ্নিষ্টরা। বাংলাদেশে তবলিগ জামাতের দু'পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে।

ডিবি কর্মকর্তা মাহবুব আলম আরও বলেন, সাত বছর আগে শাপলা চত্বরে যেভাবে জড়ো হয়ে হেফাজত তাণ্ডব চালায়, একই কায়দায় এই রমজানে তারা কর্মসূচি করার ব্যাপারে সব প্রক্রিয়া শেষ করে। রমজানে বদরের যুদ্ধ হয়েছিল। তাদের ভাষায়, এ কারণেই তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচির ছক কষে। আরেকটি শাপলা চত্বরের দিকে ধাবিত হয়ে তারা সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দেওয়ার চক্রান্ত করে।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৬ মার্চ ও তার পর যে  ধরনের নাশকতা হয়েছিল, সেখানকার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে হেফাজতের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার অনেক যোগাযোগ হয়েছিল। মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও মোবাইলে এত বেশি যোগাযোগ হয়েছে যে যেটা অস্বাভাবিক। হেফাজত নেতা মামুনুল, হারুন ইজহার, হাবীবুল্লাহ মাহমুদ কাশেমী ছাড়াও কয়েকজন নেতা চলতি মাসে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরির পরিকল্পনা করেন।

জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত আরেকজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রাবেয়াতুল ওয়াজিন নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে কারা দেশের কোন জায়গায় ওয়াজ করবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করা হতো। হেফাজতের বেশ কয়েকজন নেতা প্রতি সপ্তাহে এই সংগঠনের ব্যানারে প্রশিক্ষণ দিতেন। কীভাবে উস্কানিমূলক ও 'বিপ্লবী' বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে বিদ্বেষের বিষ ছড়ানো যায়- এসব শিক্ষা সেখানে দেওয়া হত।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে হেফাজত নেতাদের কললিস্ট ও কথোপকথন যাচাই করে দেখা হচ্ছে। যেসব জায়গায় নাশকতা হয়েছিল, সেখানে কেন্দ্র করে নির্দেশনা গেছে। তাদের নির্দেশনা ছিল যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে তারা নাশকতার সূচনা করবে, যার সূত্র ধরে আরেক শাপলা চত্বরের ডাক তারা দেবে। যুব মজলিসসহ আরও কিছু সংগঠন হেফাজতকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। মাদ্রাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে হেফাজত নেতারা দেশ-বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেন। শুধু মামুনুল একাই গত এক বছরে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার তহবিল আনেন। এই অর্থ কীভাবে কোথায় খরচ করেছেন, তার সঠিক জবাব দিতে পারেননি তিনি।

এদিকে, গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে বেলাল হোসেন নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি জেলার কওমি ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাবেক সেক্রেটারি। সম্প্রতি সেখানকার নাশকতায় তার বড় ধরনের ভূমিকা ছিল বলে জানায় পুলিশ।

 

Bootstrap Image Preview