Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চীন-রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে করোনা টিকা উৎপাদন করবে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ০৪:২০ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ০৪:২০ PM

bdmorning Image Preview


ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহ অনিশ্চিত হওয়ায় সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে স্থানীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা উৎপাদনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। মহামারি মোকাবিলায় এ বছরের বাজেটে বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদনে ব্যয় করা হবে। সরকারি এই তহবিল স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনে ডেভেলপারদের সহায়তা দিতে অথবা টিকা উদ্ভাবকদের সঙ্গে যৌথ উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে।

সেরাম উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশ অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

ঢাকায় টিকার চালান কখন আসতে পারে ভারত এখনো তা নিশ্চিত করতে না পারায় প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করা হয়েছে এবং ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়াও অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিগতভাবে রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্ম টিকা দেশে উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গতকাল সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা দুই সপ্তাহের মধ্যে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছি।’

বাংলাদেশে সিনোফার্মের টিকা আমদানি ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখন কোনো আইনগত বাধা নেই।

এর আগে মঙ্গলবার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্যে চীন নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের প্রথম বৈঠকে চীন থেকে জরুরি-ভিত্তিতে টিকা সরবরাহ করার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

একই দিনে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

মহাপরিচালক বলেন, ‘এখনো দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এটি দুই দেশের সরকারের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।’

টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়ার ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২১ অনুসারে, বাংলাদেশ প্রতি ১০০ জনে তিন দশমিক তিন ডোজ টিকা দিয়েছে। আর তালিকায় সবার শীর্ষে থাকা পালাউ দিয়েছে ৭৪ দশমিক তিন ডোজ।

বিশেষজ্ঞরা বারবার টিকার জন্যে একক উৎসের ওপর নির্ভর না করার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন না থাকায় সরকার প্রাথমিকভাবে চীন ও রাশিয়ার উৎপাদিত টিকার খোঁজ তেমনভাবে নেয়নি।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে শুধুমাত্র ডব্লিউএইচও বা তিনটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক স্বীকৃত টিকা কেনার জন্য ঋণ দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ‘কোভিড -১৯ জরুরি প্রতিক্রিয়া ও মহামারি প্রস্তুতি’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশকে টিকা কেনার জন্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার তহবিল দিয়েছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মে’র শেষদিকে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে ৯৪০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিবে।

বুধবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ দেশের অভ্যন্তরে টিকার উৎপাদন সক্ষমতার প্রয়োজনের ওপর জোর দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘টিকাদান এক বছরের জিনিস না।’

টিকা উৎপাদনে সহায়তায় বাংলাদেশে টিকা উৎপাদন করতে পারে এমন ভালো কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যদি তা হয়ে থাকে তবে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধান হবে।’

সরকার যৌথভাবে উৎপাদনে কাজ করছেঃ  মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশে তিনটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। একটি কোম্পানি প্রতিমাসে ৮০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু, প্রটোকল এখনো নির্ধারিত হয়নি।’

ঔষধ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, যৌথ উৎপাদন শুরু হতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে।

নিউইয়র্ক টাইমস কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্র্যাকারের তথ্য অনুসারে, সিনোফার্ম একটি ডাবল ডোজ টিকা, যা তিন সপ্তাহের ব্যবধানে নিতে হয় এবং এর কার্যকারিতা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টের উৎপাদিত এই টিকাটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর জন্যে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা সিনোফার্মকে দেওয়া হয়েছিল।

টিকাটি জরুরি ব্যবহারের জন্যে অনুমোদন দেওয়া হবে কি না, এই বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবে ডব্লিউএইচও।

চীন ইতোমধ্যে টিকাটির ১০ লাখের বেশি ডোজ মজুত করেছে এবং তারা নিজ দেশে এটি ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও ভ্যাকসিনটি এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার অনেক দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview