Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ই-বাইক আনছে ওয়ালটন, প্রতি কিমিতে খরচ হবে ১০ পয়সা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ০৩:৩৭ PM
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১, ০৩:৩৭ PM

bdmorning Image Preview


স্থানীয় গ্রাহকদের জন্য একের পর এক অত্যাধুনিক পণ্য নিয়ে আসছে দেশের শীর্ষ প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ওয়ালটন গ্রুপের এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের আসন্ন নতুন পণ্যের তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছে ইলেকট্রিক বাইক বা স্কুটার। এই বাইক ব্যবহার করে প্রতি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে খরচ হবে মাত্র ১০-১৫ পয়সা। ইতোমধ্যে ওয়ালটনের ই-বাইক নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গিয়েছে। অধীর আগ্রহে তারা বাইকটির বাজারে আসার অপেক্ষা করছেন।

ওয়ালটন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এই ক্যাটাগরির পণ্যের ব্র্যান্ডের নাম তাকিওন (TAKYON), যা ওয়ালটনের লোগো সম্বলিত হলেও তাকিওন নামেই বাজারজাত করা হবে। প্রাথমিকভাবে দুই মডেলের ইলেকট্রিক বাইক বাজারে ছাড়বে ওয়ালটন। এগুলোর নাম তাকিওন ১.০০ এবং তাকিওন ১.২০। এখনো বাইক দুটির দাম নির্ধারণ করেনি ওয়ালটন। তবে দেশীয় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী সাশ্রয়ী মূল্যে ই-বাইক বাজারজাত করা হবে।

তাকিওন ইলেকট্রিক বাইকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার কায়কোবাদ সিদ্দিকীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আকর্ষণীয় ডিজাইনের তাকিওন ১.০০ মডেলের ই-বাইকে রয়েছে শক্তিশালী ১.২ কিলোওয়াট হাব মোটর। এতে ব্যবহৃত হয়েছে নতুন প্রযুক্তির গ্রাফিন লেড এসিড ব্যাটারি। একবার ফুল চার্জে এই বাইকটি ৬০-৭০ কিলোমিটার যেতে পারবে। এর গতিবেগ হবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ কিলোমিটার।

অপরদিকে তাকিওন ১.২০ মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ মোটর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বশ (BOSCH) এর মোটর। এর পোর্টেবল লিথিয়াম ব্যাটারির ওজন মাত্র ৯ কেজি। ফলে এটি খুব সহজেই বহনযোগ্য। বাইকটি এক চার্জে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার।তাকিওন ইলেকট্রিক বাইকে রয়েছে পোর্টেবল চার্জার। গৃহে ব্যবহৃত ২২০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক লাইন থেকেই বাইকে চার্জ দেয়া যাবে। এই বাইকের পারফরমেন্স প্রচলিত ১০০ সিসি বাইকের সমতুল্য। উভয় মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে ডুয়াল হাইড্রোলিক ডিস্ক ব্রেক, টিউবলেস টায়ার, এলসিডি স্পিডোমিটার ও এলইডি লাইটিং ইত্যাদি।

ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের মতে, দেশের জনসাধারণের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে বাইকের বিকল্প নেই। বিশেষত শহরাঞ্চলে অধিক ট্রাফিকের কারণে তরুণ ব্যবহারকারীদের প্রথম পছন্দ দ্বিচক্রযান বা বাইক। তবে অতিরিক্ত খরচের জন্য অনেকেই প্রচলিত পেট্রোলচালিত বাইক কিনতে এবং নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন না। তাই গ্রাহকদের কাছে স্বল্পমূল্যে মোটরযান পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই প্রকল্পের সূচনা। তাকিওন ই-বাইক একবার রিচার্জ করে ৫০-৬০ কিমি. যাতায়াত করা যাবে। বর্তমানে এক লিটার অকটেনের বাজারমূল্য ৮৯ টাকা। যা দিয়ে একটি ১০০ সিসি বাইক সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে। অন্যদিকে তাকিওন ই-বাইকে সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করতে খরচ পড়বে মাত্র ৭-৮ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে মাত্র ১০-১৫ পয়সা। তাছাড়া প্রচলিত পেট্রেলচালিত বাইকের মতো তাকিওন ই-বাইকের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খরচও প্রয়োজন হবে না। একদিকে অত্যন্ত সাশ্রয়ী, অন্যদিকে তেলের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত। ফলে এই মোটরযান অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব।

ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম রেজাউল আলমের বক্তব্যে উঠে আসে এই প্রকল্প নিয়ে দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ইলেকট্রিক যানের জনপ্রিয়তা এখনও তেমন উচ্চ পর্যায়ে না পৌঁছালেও উন্নত দেশগুলোতে টেসলাসহ অন্যান্য ইলেকট্রিক যানবাহনের জনপ্রিয়তা অনেক। আমাদের দেশে অবকাঠামোগত ব্যবস্থাপনা না থাকায়, ইলেকট্রিক যানবাহনে কেউ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করতে পারেন না। তাকিওনের মাধ্যমে আমরা দেশীয় গ্রাহকদের ইলেকট্রিক যানবাহনে অভ্যস্ত করে তোলার উদ্যেগ নিয়েছি। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুততম সময়ে ব্যাটারি চার্জের জন্য ফাস্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে। আশা করি এর ফলে ই-বাইক ব্যবহার করেও গ্রাহকরা দেশের যেকোনো স্থানে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবেন।

ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লিয়াকত আলী বলেন, সবুজ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে আমরা নানান উদ্যেগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা ল্যাপটপ ও ডেস্কটপে এক্সচেঞ্জ অফার দিয়েছি। এর মাধ্যমে ই-বর্জ্যরে ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারে সচেতন সৃষ্টির কার্যক্রম চালিয়ে আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। এখন আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পরিবেশের উপর জ্বালানি তেলের ক্ষতিকর প্রভাবের ব্যাপারেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সবুজ পৃথিবী প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে ওয়ালটন যাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, ইলেকট্রিক যানের নিবন্ধন সংক্রান্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বিগত বছরগুলোতে একাধিক প্রতিষ্ঠান এই শ্রেণীর মোটরযান বাজারজাত করলেও গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তবে ২০২০ সালের এক গেজেটে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ইলেকট্রিক যানবাহন নিবন্ধনের নীতিমালা প্রণয়ন করে। এর ফলে তাকিওন ইলেকট্রিক বাইক নিবন্ধনে কোনো জটিলতা বা সংশয় থাকবে না বলে আত্মবিশ্বাসী ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ। ওয়ালটনের নির্ধারিত সার্ভিস পয়েন্ট থেকে তাকিওন ইলেকট্রিক বাইকের ২ বছর পর্যন্ত বিনামূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়া যাবে।

Bootstrap Image Preview