Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কমান্ডারের কাছে ভারতীয় বাহিনী একের পর এক মার খাচ্ছে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৫৯ PM
আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২১, ০৬:৫৯ PM

bdmorning Image Preview


ভারতের ছত্তিশগড়ে শনিবার গেরিলা হামলা চালানো হয়। এতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২২ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে মাদভি হিডমা নামে একজন মাওবাদী কমান্ডারকে। এই ব্যক্তি পিপলস লিবারেশেন গেরিলা আর্মির এক নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার মাদভি হিডমা, যিনি 'হিডমালু' নামেও পরিচিত।

তবে আতংকের বিষয় হলো এই ৫০ বছর মাওবাদী আদিবাসী নেতাকে নিয়ে।পুলিশ বলছে, গত দু'দশকে প্রায় ২৭টি বড় বড় হামলায় যুক্ত ছিলেন তিনি।তাকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৪০ লাখ রুপি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দেশটিরনিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে তার সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ছবি নেই। 

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ সুকমা জেলার পুর্ভাতি গ্রামের আদিবাসী ছেলে এই মাদভি হিডমা, আঠারো-উনিশ বছর বয়সেই তিনি মাওবাদীদের সঙ্গে ভিড়েন। 

দু'হাজার চার সালে একটি বড় হামলায় নেতৃত্ব দিয়ে তিনি প্রথম জনসম্মুখে আসেন।

হিডমা সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এতটাই নিষ্ঠুর, যে কোনও অভিযানের পর নিহত পুলিশ বা সেনা সদস্যদের লাশ ও রক্ত নিয়ে হোলি খেলতেও দ্বিধা করেন না।

১৮০ থেকে ২৫০ জন বিশ্বাসী ও অনুগত নকশাল গেরিলার একটি সুরক্ষা বলয় তাকে সব সময় ঘিরে থাকে, যার মধ্যে বহু নারী সদস্যও আছেন।

মাদভিকে ধরতে গত শুক্রবার রাতে ভারতের সিআরপিএফ ও তাদের এলিট কোবরা ফোর্স, ছত্তিশগড় রাজ্য পুলিশ ও ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ডস এবং স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের মোট প্রায় দুই হাজার সদস্য বস্তারের গহীন জঙ্গলে একযোগে অভিযান চালায়। কিন্তু ভুল গোয়েন্দা খবরে শনিবার তার বাহিনীর পাতা 'ইউ' আকৃতির গোপন ফাঁদে ঢুকে প্রাণ হারান অন্তত ২২ জন জওয়ান। পাশাপাশি গুরুতর জখম হন আরও প্রায় ৩০জন।

মাওবাদী আন্দোলনের গবেষক বিদ্যাশঙ্কর তিওয়ারি জানিয়েছেন, ৯০ দশকের গোড়ায় এই মাওবাদী নেতা নকশাল বিদ্রোহে যোগ দেন এবং নিজের ক্ষুরধার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে সংগঠনে এগিয়ে যান।

২০১০ সালে দান্তেওয়াড়ায় যে হামলাতে ৭৬জন সিআরপিএফ সদস্য নিহত হন কিংবা ২০১৩ সালে ঝিরামঘাটিতে যে হামলায় ছত্তিশগড়ের প্রায় পুরো কংগ্রেস নেতৃত্বই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় - তার দুটোতেই হিডমা নিজে সামনে থেকে আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে রাজ্য পুলিশের কয়েকটি সূত্র দাবি করে থাকে।

ভারতের সাবেক সহকারী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল শেখর দত্ত বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, এগুলোর অনেকটাই মিথ হলে তিনি অন্তত অবাক হবেন না।তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না এগুলো কতটা সত্যি। এগুলোর অনেকটাই কিন্তু গুজবও হতে পারে।এই মানুষটির আদৌ অস্তিত্ব আছে কি না সেটা বলাও মুশকিল। ছত্তিশগড়ে পুলিশের যারা সাবেক বড় কর্মকর্তা তারা কিন্তু অনেকেই এই গ্রাউন্ড রিয়েলিটি-টা জানেন। 

ছত্তিশগড়ে বিবিসির সংবাদদাতা আলোক পুতুল বলছেন, হিডমা এখনো প্রবলভাবে সক্রিয়। তবে বিভিন্ন মাওবাদী হামলায় হিডমালুর ভূমিকাকে অনেক ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

আলোক পুতুল বলেন, আমার ধারণা মাদভি হিডমাকে অযথাই বেশি কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে। আজ ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র যেটা, সেই বস্তার-অবুঝমার অঞ্চলে তিনি একজন জোনাল কমান্ডারের বেশি কিছু নন। মাওবাদী দলের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি মিলিয়ে তার চেয়েও প্রভাবশালী ৩০-৪০ জন নেতা আছেন।

শনিবার বিজাপুর ও সুকমা জেলার সীমান্তবর্তী যে জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের বন্দুকযুদ্ধ হয়েছিল সেটা হিডমার নিজের গ্রাম থেকে মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার দূরে। তাই অনেকের ধারণা এ কারণেই এই হামলার সঙ্গে হিডমার নাম জড়িয়ে গেছে। যদিও বহু বছর হলো হিডমালু তার নিজের গ্রামে থাকেনই না।

Bootstrap Image Preview